আনসার ভিডিপি চট্টগ্রাম রেঞ্জ ও জেলার অধীনে দুর্নীতির মহোৎসব ও ঘুষ বাণিজ্যের সিন্ডিকেট, পর্ব- ১

থানা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা নিরঞ্জন, মেজবা ও মোবারকের নেতৃত্বে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা

মোঃ মনছুর আলম (এম আলম): আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তায় আইন শৃংখলা বাহিনীর পাশাপাশী সাধারণ আনসার ভিডিপি থেকে প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে ১২ জন করে পিসি এপিসি ২জন সহ আনসার সদস্যদের টিম রেডি করা হয়। চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় সর্বমোট ভোট কেন্দ্র ২০২৩টি, প্রতি কেন্দ্রের জন্য ১২ জন করে হলে ২৪২৭৬ জন আনসার সদস্য নির্বাচনী নিরাপত্তায় নিয়োগ দেওয়ার জন্য যাচাই বাচাই তালিকা প্রস্তুত। উক্ত নিয়োগে দুর্নীতির মহোৎসব চলছে মর্মে একাদিক সূত্র জানিয়েছে, নিয়োগের জন্য যাচাই বাচাই করা সদস্যদের থেকে থানা অফিসারের মাধ্যমে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা উৎকোচ গ্রহণ করা হয়। এসব টাকা পিসি এপিসি হয়ে পাহারতলী থানা প্রশিক্ষক কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন ও পাঁচলাইশ থানা প্রশিক্ষক কর্মকর্তা মোবারক হোসেন হয়ে বন্দর থানা অফিসার নিরঞ্জন রাজবংশি ও পতেঙ্গা থানা অফিসার আমিনুল ইসলামের কাছে জমা হয়। তাদের থেকে জেলা কমান্ড্যান্ট সাইফুল্লাহ হাবিব ও রেঞ্জ কমান্ডার সাইফুল্লাহ রাসেল দ্বয়ের কাছে পৌছে যায়। এসব নিয়োগের আগেই যাচাই বাচাই করে তালিকা তৈরী করা হয়। যারা উৎকোচের টাকা দিয়েছে তাদের নামই মাত্র তালিকায় এসেছে। তথ্য মতে নিয়োগের আগেই উৎকোচ হিসেবে প্রায় পৌনে ৫ কোটি টাকারমত ঘুষ বাণিজ্য হয়েছে। এসব ঘুষ বাণিজ্য'র মূল দায়িত্বে বন্দর থানা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা নিরঞ্জন রাজবংশি সিন্ডিকেট।

এছাড়াও ইউনিয়ন ভিত্তিক ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে যাদের নামের তালিকা করেছে সেখানে বেশির ভাগ জামাত-বিএনপির লোকজন রয়েছে বলে সরেজমিনে তদন্ত করে জানা যায়। চট্টগ্রাম রেঞ্জ আনসার ভিডিপি জেলা কমান্ড্যান্ট কার্যালয় সহ আনসার ভিডিপি চট্টগ্রামে ব্যাপক দূর্নীতি ঘুষ বাণিজ্য'র ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রতি বছর পূজার নিরাপত্তায় এক বিশাল উৎকোচ ও ভূয়া বিলে কোটি কোটি রাষ্ট্রীয় টাকা আত্বসাতের মহোৎসব হয়ে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও প্রায় ২৫ হাজার আনসার সদস্য নিয়োগের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। সেই সব সদস্যদের থেকে নিয়োগ পাওয়ার জন্য জনপ্রতি দেড় থেকে দুই হাজার টাকা সিনিয়ার কর্মকর্তাদের সম্মানী বলে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকার মত। নির্বাচনের পরে আরো ভূয়া বিলের বিপরিতেও কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই ধরণের দূর্নীতির এক হিসাব নিকাশ তুলে ধরা হচ্ছে যাহা ২০২৩ সালের ব্যক্তিগত ও ঘটপুজা সহ শারদীয় দূর্গা পূজা উৎসবে নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত আনসার সদস্যদের বেতন ভাতা থেকে কিভাবে কোন কৌশলে দূর্নীতি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছে প্রমাণ সহঃ-

ক্রঃ নং - পদবি - আইডি নং - নাম - লেনদেনের একাউন্ট নম্বর - মন্তব্য

০১ আনসার ৯৪৩০১ মোঃ পলাশ ০১৯৫১-১২৪৩২৩ বিকাশ 

০২ আনসার ৯৫১৯০ মোঃ নুর নবী ০১৮৯৬-১২৬৮৯৩ বিকাশ 

০৩ আনসার ৯৫৮০২ মোঃ আলী আহমদ ০১৭৭১-১৩৮০৯৮ বিকাশ 

০৪ আনসার ৮৩৮৪৯ এলেম ০১৬৮১-৭৫১১৫৯ বিকাশ 

০৫ আনসার ৯৪০৩৪ মোঃ মনারুল ইসলাম ০১৭৭০-৮৯১২০৬ বিকাশ 

০৬ আনসার ৮৩৬২৩ মোঃ আওলাদ ০১৩০৬-৬৬৩৩৯০ বিকাশ 

০৭ আনসার ৮৮৫৭৮ মোঃ মোজাহিদুল ইসলাম ০১৩০৯-৫৫০৫৬৪ বিকাশ 

০৮ আনসার ১০৫৮৪ মোঃ ছানাউল্লাহ ০১৮৩০-১৬৪৫৪৬ বিকাশ 

০৯ আনসার ৩২৪২০ মোঃ আজিজ ০১৭২৪-৯৬৮২২৫ বিকাশ 

১০ আনসার ৮৮৫৬২ মোঃ সাব্বির ০১৭৪৮-২১৫৪৬৩ বিকাশ 

২০২৩ সালের দূর্নীতির একটি নমুনা প্রকাশ করা হল। চট্টগ্রাম জেলায় ব্যক্তিগত ও ঘটপূজা সহ মোট ২৪৮৩টি পূজা মন্ডপে শারদীয় দূর্গাপূজা হয়েছে চট্টগ্রাম নগরীতে ২৯৩টি পূজা মন্ডপে এবং জেলার ২১৯০টি পূজামন্ডপের মধ্যে ঘট পূজা ১৬৬৪টি। ৬ দিনের জন্য এসব পূজা মন্ডপে নিরাপত্তার জন্য আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সর্বমোট ১৯৮৬৪ জন। সেই সময় ও নিয়োগের পূর্বে জন প্রতি এক হাজার টাকা করে নিরঞ্জন রাজবংশি বন্দর থানা কর্মকর্তা সিনিয়র কর্মকর্তাদের সম্মানী বলে ১৯৮৬৪x১০০০= ১৯৮৬৪০০০ প্রায় দুই কোটি টাকার মত নিয়োগের আগেই হাতিয়ে নেয়। এভাবে শারদীয় দূর্গা উৎসব ২০২৩, ২৪৮৩টি পূজা মন্ডপের জন্য প্রতি মন্ডপে ৬ থেকে ১০ জন করে নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্য নিয়োগ দেওয়া প্রতিটি মন্ডপে ২ জন করে সদস্য ঘাটতি রেখে কাগজে কলমে ভূয়া নাম ও মোবাইল নাম্বার দিয়ে বিল উত্তোলন করে ২৪৮৩x২= ৪৯৬৬ চার হাজার নয়শত ছয়ষট্টি জনের বেতন ভাতা উত্তোলন করে প্রায় দুই কোটি টাকার মত আত্বসাৎ করা হয়। এসব টাকা উত্তোলনে বন্দর থানা অফিসার নিরঞ্জন রাজবংশির নেতৃত্বে পতেঙ্গা থানা আনসার কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম সহ পিসি এপিসি এবং পাহাড়তলী ও পাঁচলাইশ থানা আনসার ভিডিপি প্রশিক্ষক কর্মকর্তা দূর্নীতিবাজ মেজবাহ উদ্দীন ও মোবারক হোসেন এদিকে বন্দর থানা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা নিরঞ্জন রাজবংশি রেঞ্জ অফিস ও জেলা কার্যালয়ে রাম রাজত্বে রাজা হিসেবে দাপডে দাপিয়ে বেডায়। বিভিন্ন বদলী ও ভাল অবস্থানে বদলী নিতে ও দীর্ঘ মেয়াদী থাকতে সাধারণ আনসার সদস্যদের মাসোহারা ক্যাম্প প্রতি এমাউন্ট দিতে হয়। যাহা পিসি এপিসি বিশেষ করে পিসি জিয়া আইডি নং- ৩৩৮৪৪, তার মাধ্যমে উৎকোচ/ঘুষ সহ প্রায় দূর্নীতি কার্যকলাপ আদান প্রদান ঘুষের লেনদেন রাজবংশির নির্দেশে পিসি জিয়াই করে থাকে। সাবেক বন্দর নিরাপত্তা শাখা রায়টার নুরুন্নবী মারফৎ মাসোহারার টাকা উত্তোলন করে বন্দরের সকল ক্যাম্প থেকে বন্দরে মাসোহারার টাকা নমুনা হিসাবঃ-

ক) বন্দর নিরাপত্তা শাখা-০১, বন্দর প্রতিমাসে ১৫,০০০/- টাকা। খ) বন্দর নিরাপত্তা শাখা-০২ ও ০৩, বন্দর প্রতিমাসে ১২,০০০/- টাকা। গ) বন্দর নিরাপত্তা শাখা-০৪, বন্দর প্রতিমাসে ১০,০০০/- টাকা। ঘ) বন্দর নিরাপত্তা শাখা-০৬, বন্দর প্রতিমাসে ১০,০০০/- টাকা। ঙ) বন্দর নিরাপত্তা শাখা-০৮, বন্দর প্রতিমাসে ৩,০০০/- টাকা। চ) বন্দর নিরাপত্তা শাখা-০৯/ক ও ১০/ক, বন্দর প্রতিমাসে ১৫,০০০/- টাকা। ছ) বন্দর নিরাপত্তা শাখা-১০/খ ও ১২, বন্দর প্রতিমাসে ১০,০০০/- টাকা। জ) বন্দর নিরাপত্তা শাখা-০৭, বন্দর প্রতিমাসে ২,৫০০/- টাকা। ঝ) বন্দর নিরাপত্তা শাখা-৯/খ ও ১৩, বন্দর প্রতিমাসে ৫,০০০/- টাকা। ঞ) সিইপিজেড, বন্দর প্রতিমাসে ২০,০০০/- টাকা। ট) শাহ্ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, পতেঙ্গা প্রতিমাসে ২০,০০০/- টাকা। ঠ) ইষ্টার্ণ রিজাইনারী ফিল্ড, পতেঙ্গা প্রতিমাসে ৮,০০০/- টাকা। ড) সিজিপি রেলওয়ে হালিশহর, বন্দর প্রতিমাসে ৩,০০০/- টাকা। ঢ) রুবি সিমেন্ট, পতেঙ্গা প্রতিমাসে ৩,০০০/- টাকা। ণ) কাস্টম নিলাম শাখা, বন্দর প্রতিমাসে ২০,০০০/- টাকা। ত) লালদিয়ার চর (অস্থায়ী) ক্যাম্প, বন্দর প্রতিমাসে ৬,০০০/- টাকা। থ) টিএসপি মহাপ্রকল্প, পতেঙ্গা প্রতিমাসে ১০,০০০/- টাকা। দ) ডলপিন জেটি, পতেঙ্গা প্রতিমাসে ১০,০০০/- টাকা। ধ) যমুনা অয়েল কোঃ, পতেঙ্গা প্রতিমাসে ৪,০০০/- টাকা। ন) পদ্মা অয়েল কোঃ, পতেঙ্গা প্রতিমাসে ৬,০০০/- টাকা। প) মেঘনা অয়েল কোঃ, পতেঙ্গা প্রতিমাসে ১,৫০০/- টাকা। ফ) বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্স, পতেঙ্গা প্রতিমাসে ১,৫০০/- টাকা সহ চট্টগ্রাম জেলায় সরকারী/বেসরকারী সকল আনসার গার্ডের পিসিদের কাছ থেকে থানা কর্মকর্তাগণের মাধ্যমে মাসোহারা উৎকোচ গ্রহণ করে থাকেন রেঞ্জ কমান্ডার ও জেলা কমান্ড্যান্ট। রায়টার নুরুন্নবী পিসি জিয়ার মাধ্যমে থানা কর্মকর্তাকে লক্ষ লক্ষ টাকা বুঝিয়ে দেয় এবং দিন বিশেষে নিয়োগের উৎকোচ ও ভূয়া বিলে আত্বসাতের টাকা সহ সকল লেনদেন থানা অফিসার হয়ে জেলা কমান্ড্যান্ট এবং রেঞ্জ কমান্ডারের কাছে পৌছে যায়। এসব লেনদেনের শক্তিশালী আনসার ভিডিপি থানা কর্মকর্তা পিসি এপিসিদের সমš^য়ে ৬/৭ জনের গ্রুপের শীর্ষ লিডার বন্দর থানা কর্মকর্তা দূর্নীতিবাজ নিরঞ্জন রাজবংশি বলে গ্রহণযোগ্য সূত্রে নিশ্চিত করেছেন। আনসার ভিডিপি চট্টগ্রাম রেঞ্জ জেলা কার্যালয় উত্তর জোন, দক্ষিণ জোনের কমান্ড্যান্ট ও থানা কর্মকর্তাগণ সহ দূর্নীতি/ঘুষ লেনদেন উৎকোচ গ্রহণ মাসোহারা উত্তোলন সহ বিভিন্ন অনিয়মের সরেজমিন তদন্ত মতামত ও প্রমাণিত বিষয়াদির উপর ধারাবাহিক প্রতিবেদন চলবে। পর্ব-১

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ