কবি শেখ ফজলল করিম'রপাঠাগার পরিদর্শনে ইউএনও,"উপহার দিলেন বই

হাসানুজ্জামান হাসানঃ  
‘কোথায় স্বর্গ/কোথায় নরক কে বলে তা বহুদূর/মানুষের মাঝে স্বর্গ-নরক /মানুষেতে সুরাসুর’। কবি শেখ ফজলুল করিমের এ মর্মস্পৃশী কবিতাটি ছোট বেলায় পড়েননি, এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।  

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনায় কবি শেখ ফজলল করিমের স্মৃতিজড়িত গ্রামের বাড়িটি বর্তমানে অতীত ঐতিহ্য প্রশাসনের অবহেলায় আজ হারাতে বসেছিল।  সরেজমিনে দেখা গেছে, ২০০৫ সালে কবি শেখ ফজলল করিমের স্মৃতি রক্ষার্থে কাকিনা বাজারে একটি দুই তলা ভবনে নির্মিত পাঠাগারটি এখন পরিত্যাক্ত, আবর্জনায় ভরপুর। 

সেখানে নেই কোন কেয়ারটেকার, নেই পাঠক, রয়েছে বইয়ের সংকট। ঠিক সেই সময় বই নিয়ে হাজির হলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার রবিউল হাসান।   অবহেলায়-অযত্নে কবি শেখ ফজলুল করিমের ভিটাবাড়ি এবং 

কবি শেখ ফললল করিমের মৃত্যু বার্ষিকিতে নেই কোন আয়োজন সংবাদ প্রকাশের পর দীর্ঘ দিন পর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের পরিত্যক্ত থাকা কবি শেখ ফজলল করিমের পাঠাগার পরিদর্শন করলেন ও বই দিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রবিউল হাসান।    


উপজেলার কাকিনায় কবি শেখ ফজলল করিমের স্মৃতিবিজড়িত গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, অতীত ঐতিহ্য হারাতে বসেছে বাড়িটি। তার নামে জেলার তেমন কোনো স্থাপনাও তৈরি করা হয়নি। ফলে এ প্রজন্মের অনেকেই জানে না 

কবি শেখ ফজলল করিম সম্পর্কে।  তবে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের পাশে কাকিনায় কবির স্মৃতির উদ্দেশ্যে ছোট্ট একটি স্মৃতিফলক রয়েছে। যা কবি বাড়ির দিক নির্দেশনা হিসেবে কাজ করে।   

এদিকে, ২০০৫ সালে গ্রামের বাজারে কবির নামে প্রতিষ্ঠিত হয় ফজলল করিম স্মৃতি পাঠাগার। কিন্তু এখন এর কার্যক্রম নেই বললেই চলে। সম্প্রতি পাঠাগারের প্রবেশ পথের সামনে ময়লা-আবর্জনার স্তুপ জমে উঠেছে।   


এছাড়া একটি প্রভাবশালী চক্র ইতোমধ্যে পাঠাগারের প্রবেশপথের কিছু অংশ দখলে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু সেটিকে পাল্টিয়ে দিয়েছে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রবিউল হাসান। তিনি একাধিকবার পরিদর্শন করে কমিটির সদস্যদের সাথে সভা করেন। সবার মতামত নিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহন করেছেন তিনি।  

বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রবিউল হাসান পরিদর্শন করেন ও কাকিনা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, পাঠাগারের সভাপতি শহিদুল হক শহিদের হাতে 

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনীসহ বিভিন্ন ধরণের ১শত বই তুলে দেন এবং বিভাগীয় কমিশনার কে এম তারিকুল ইসলাম রংপুর ১লক্ষ টাকা দেন। কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ থেকে ৪৫-হাজার টাকা দেয়া হয় পাঠাগার ভবন সংস্কার করার জন্য। 

এর পর পাঠাগারের ভিতরে গাছ রোপন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার রবিউল হাসান  এ সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার রবিউল হাসান, কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফেরদৌস আলম , কাকিনা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শহিদুল হক শহিদ উপস্থিত ছিলেন।   

২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭,সালে বিভিন্ন পত্রিকায় অবহেলায়-অযত্নে কবি শেখ ফজলুল করিমের ভিটাবাড়ি’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।   শহিদুল হক শহিদ বলেন,কিছুদিন আগে কয়েকটি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পরে আমাকে বিভিন্ন ব্যক্তি ফোন দিয়েছেন। 

অনেকের কাছে পাঠাগারের জন্য সহযোগিতা চেয়েছিলাম তাই বিভাগীয় কমিশনার রংপুর ও উপজেলা পরিষদ থেকে সহযোগীতা করেছেন সেটা দিয়েই পাঠাগার ভাল করা হচ্ছে। আমি কবির পরিবারকে ধন্যবাদ জানাই।  

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রবিউল হাসান বলেন, কবি শেখ ফজলল করিম একজন জ্ঞানের ফেরিওয়ালা। এ ধরণের ব্যক্তি সমাজে বর্তমানে বেশী একটা খুঁজে পাওয়া যায় না। কবির পাঠাগারে কিছু বই দিতে পেরে নিজেকে খুব ভাল লাগছে।পাঠাগারটিকে আকর্ষণীয় করা এবং মানুষকে বই পড়তে আগ্রহী করে তুলতে ভূমিকা রাখবে। 

আগামী তে সহযোগীতা অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।  তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে তৃষ্ণা (১৯০০), পরিত্রাণ কাব্য (১৯০৪), ভগ্নবীণা বা ইসলাম চিত্র (১৯০৪), ভুক্তি পুষ্পাঞ্জলি (১৯১১), উপন্যাস লাইলী-মজনু, শিশুতোষ সাহিত্য হারুন-আর-রশিদের গল্প, নীতিকথা চিন্তার চাষ, ধর্মবিষয়ক পথ ও পাথেয় প্রভৃতি অন্যতম।  


১৯৩৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কবি। এরপর থেকেই অরক্ষিত হয়ে পড়ে কবি শেখ ফজলল করিমের স্মৃতিচিহ্ন।  কবি শেখ ফজলল করিম স্মৃতি পাঠাগার সম্পর্কে কাকিনা ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল হক শহিদ বলেন, 

দেখভালের জন্য কাউকে স্থায়ী নিয়োগ না দেয়ায় পাঠাগারটি অযত্নে রয়েছি।এখন এটি দেখভাল করার জন্য লোক রাখা হয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ