প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে বৃদ্ধ পিতার চিকিৎসায় কালক্ষেপণ, অবহেলায় মৃত্যু! রাতে গরু চুরি!

নিজ পক্ষের ইটপাটকেলে আঘাত পায় বৃদ্ধ! 'হত্যার বদলে হত্যা'র হুমকি দাবী প্রতিপক্ষের

মো: মনছুর আলম (এম আলম): প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজের বৃদ্ধ পিতার চিকিৎসায় কালক্ষেপণ করতেও দ্বিধাবোধ করেনি সন্তানরা। এমনকি নিজ পক্ষের লোকজনের ইটপাটকেলের আঘাতেই বৃদ্ধ জখমীর মৃত্যু হয় বলে দাবী করেন প্রতিপক্ষ। হামলায় কিরিচের কোপ ও হত্যা মামলা পরবর্তী রাতের আধাঁরে গরু চুরি সহ হত্যার বদলে হত্যার হুমকির অভিযোগও উঠে নিহতের পক্ষের লোকজনের উপর।

জানা যায়, কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার সাহারবিল ইউনিয়নের রামপুর গুরুন্নাকাটা এলাকার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য দুদু মিয়া ওরফে ইদু মিয়া গং ও স্থানীয় মৃত আব্দুল করিম গংদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমিসংক্রান্ত বিষয়ে বিরোধ চলছিল। বেশ কয়েকবার স্থানীয় সালিশি বৈঠকের মাধ্যমে দুদু মিয়া গং রায় পেলেও মৃত আব্দুল করিম গং গায়ের জোরে জবরদখলের পায়তারা করে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায়, গত ২৮ এপ্রিল রোববার বিকাল ৩ টার দিকে আব্দুল করিম গং দুদু মিয়াগংদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে দুদু মিয়ার স্ত্রী, ভাইয়ের স্ত্রী ও সন্তান সহ বেশ কয়েকজন আহত হয়। ২য় দফায় সন্ধ্যা ৫টার দিকে দুদু মিয়ার বাড়িঘরে মৃত আব্দুল করিম গং পুনরায় ভাংচুর সহ ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। নিজেদেরই ইটপাটকেলের আঘাতে জখম হয় মৃত আব্দুল করিম এবং তাদের কিরিচের কোপে জখম হয় দুদু মিয়ার ভাই রশিদ আহমেদের ছেলে নজরুল। দুজনকেই চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার করেন। বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে, রাত সোয়া ১২টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার পথে আব্দুল করিম মারা যায় বলে জানা যায়।

এই ঘটনায়, দুদু মিয়ার ভাই শফির ছেলে নেজাম উদ্দিন বলেন, বাথরুমের পাইপ পরিষ্কারকে কেন্দ্র করে বিকাল ৩ টার দিকে মৃত আব্দুল করিম গং তাদের উপর হামলা চালায়। এসময় তার মাতা রাজিয়া বেগম, ভাই মিজান ও সোহাইদ, দুদু মিয়ার স্ত্রী হাফেজা বেগম এবং রশিদের ছেলে শহিদুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম ও সাজ্জাদ সহ বেশকয়েক জনকে আহত করে। আহতদেরকে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরলে বিকাল ৫টায় পুনরায় হামলা চালায়। এ হামলায় দুদু মিয়া গংদের বাড়ির দরজা জানালা ভাংচুর সহ এলোপাতাড়ি ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং রশিদের ছেলে নজরুলকে কিরিচের কোপ মারে। নিজের পক্ষেরই লোকজনের ছুড়া ইটপাটকেলের আঘাতে আব্দুল করিম আহত হলে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেলে রেফার করা হলেও হত্যা মামলা করে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে কালক্ষেপণ করে মেডিকেলে না নিয়ে আব্দুল করিমকে মেরে ফেলা হয়।  অন্যতায় সাড়ে ৬টায় রেফার করা রোগীকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিয়ে গেলেও রাত সোয়া ১২টায় পথে মৃত্যু হওয়ার কথা না। মাঝখানে প্রায় ৬ ঘন্টার ব্যবধানে মৃত্যুর সময় চট্টগ্রাম মেডিকেলে চিকিৎসাধীন থাকার কথা।

এবিষয়ে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: নুরুল আজম বলেন, গত ২৮ তারিখ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সাহারবিল এলাকার আব্দুল করিমকে হাসপাতালে আনা হলে সাথে সাথে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার করেন।

এ বিষয়ে মৃত আব্দুল করিমের ছেলে মোহাম্মদ আলীর মুঠোফোনে একাধিক ফোন করেও রিসিভ না করায় আরেক ছেলে সাদেককে ফোন করা হয়। তিনি অসুস্থ তাই কথা বলতে পারবেন বলে লাইন কেটে দেওয়ায় কোন বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলীর মুঠোফোনে একাধিক ফোন করা হলেও রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে তিনি বলেন, ‘জমির সীমানা নির্ধারণ নিয়ে অনেক দিনের বিরোধের জেরে সংঘর্ষে আহত বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

এদিকে আব্দুল করিমের মৃত্যুর পরবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় ও ময়নাতদন্তের সময় নিশ্চিত হওয়ার জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আরএমও ডা: আশিকুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মোবাইল ফোনে তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মং টিংঞো এর মোবাইল ফোনে একাধিক বার ফোন করা হলেও রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

দুদুমিয়ার ভাই রশিদ আহমের ছেলে আহত নজরুল বলেন, ঘটনার সময় মৃত আব্দুল করিমের ছেলে রিদোয়ান তাকে কিরিচের কোপ মেরে গুরুতর জখম করেন। মৃত আব্দুল করিমের ছেলে মোহাম্মদ আলী, রিদোয়ান, আব্দুল মালেক ও সাদেকগণ আরো লোকজন নিয়ে তাদের বাড়িঘরে হামলা চালায় বলে জানান। তাদের এ হামলায় আব্দুল করিম জখম হলে, তাকে চিকিৎসা না করিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়ে মিথ্যা হত্যা মামলা দায়ের করেন বলে দাবী করেন তিনি। এছাড়াও মৃত আব্দুল করিম গং হত্যার বদলে দুদু মিয়ার লোকজনকেও হত্যা করবে বলে হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে বলে জানান নজরুল।

দুদু মিয়ার স্ত্রী হাফেজা খাতুন বলেন, মিথ্যা মামলাটি হওয়ার পর থেকে ভয়ে আমার বাড়িঘর পুরুষ শুন্য এবং রশিদের ছেলে নজরুল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এই সুযোগে গত ৩০ এপ্রিল মধ্যরাত ৩ টার দিকে পুলিশ আসামী ধরার জন্য আমাদের বাড়িতে অভিযান চালায়। এসময় পুলিশের সাথে বাদীপক্ষের মোহাম্মদ আলী, রিদোয়ান, আব্দুল মালেক ও সাদেকগণ এসে গোয়ালঘর থেকে ২টা গরু চুরি করে নিয়ে যায়। বিষয়টি চকরিয়া সার্কেল এর হোয়াটসঅ্যাপে লিখিতভাবে পাঠিয়ে ও ফোন করে জানান হাফেজা খাতুন। এছাড়াও মামলার বাদী পক্ষের লোকজনেরা তাদেরকে বিভিন্ন ভয়ভীতির মধ্যে রেখেছেন বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে চকরিয়া সার্কেল সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রকীব উর রাজা'র মুঠোফোনে বলেন, পুলিশ অভিযান চালানোর সুযোগে বাদীপক্ষ গরুচুরি করে থাকলে তা লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ