কক্সবাজারের ইউনিয়ন হাসপাতালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী : নানান অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

 


ডেস্ক রিপোর্ট: 


সরেজমিন পরিদর্শন করে চিকিৎসাসেবার নানা অনিয়ম ধরা পড়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর চোখে। শুক্রবার বিকালে কক্সবাজার শহরে ইউনিয়ন হাসপাতালে। ছবি : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সৌজন্যে

সরেজমিন পরিদর্শন করে চিকিৎসাসেবার নানা অনিয়ম ধরা পড়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর চোখে। শুক্রবার বিকালে কক্সবাজার শহরে ইউনিয়ন হাসপাতালে। ছবি : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সৌজন্যে



তিন দিনের সফরে কক্সবাজার গিয়েছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। নির্ধারিত কর্মসূচির বাইরে জেলা শহরের একটি সরকারি ও একটি বেসরকারি হাসপাতাল পরিদর্শন করেন তিনি। বেসরকারি হাসপাতালটিতে গিয়ে মন্ত্রী যা দেখলেন, তাতে শুধু মন্ত্রী নন যে কারও হতবাক হওয়ার মতো ঘটনা। সেসময় ইউনিয়ন হাসপাতাল নামে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার (ব্যবস্থাপক) নিজ আসনে বসে ধূমপান করছিলেন। হাসপাতালের আরও কয়েকটি বিভাগ ঘুরে অনিয়ম দেখতে পান সামন্ত লাল। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন তিনি।


Google News গুগল নিউজে প্রতিদিনের বাংলাদেশ”র খবর পড়তে ফলো করুন


মন্ত্রীর পরিদর্শন সংক্রান্ত বিষয়ে শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তর নিজেদের ফেসবুক পেইজে ছবি-ভিডিওসহ একটি বিবৃতি দিয়েছে। এতে বলা হয়, শুক্রবার বিকালে কক্সবাজার শহরের জেলা সদর হাসপাতাল সংলগ্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন হাসপাতাল পরিদর্শন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এ সময় হাসপাতালটির ম্যানেজারকে ধূমপানরত অবস্থায় দেখতে পান তিনি। পরে মন্ত্রী হাসপাতালটির নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) গিয়ে দেখেন সেখানে নেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। সাধারণ চিকিৎসক দিয়ে চলছে কার্যক্রম। পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে নার্সের বদলে মিডওয়াইফের উপস্থিতি দেখতে পান মন্ত্রী। হাসপাতালটিতে সিটিস্ক্যানের অনুমোদন না থাকার পরও কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ার বিষয়টিও ধরা পড়ে। এ সময় মন্ত্রী হাসপাতালটির আইসিইউ থেকে একজন সংকটাপন্ন রোগীকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।


প্রশাসনের অভিযান


ডা. সামন্ত লাল সেন বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারিতে দেশের পরিচিত মুখ। তিনি বাংলাদেশে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটগুলোর সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন। বর্তমান সরকারের টেকনোক্র্যাট (সংসদ সদস্য নন) কোটায় প্রথমবার মন্ত্রিত্বের ভার কাঁদে নিয়েছেন সামন্ত লাল। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তিনি সারা দেশে অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিক বন্ধের ওপর জোর দিয়ে যাচ্ছেন। কক্সাবাজারের ইউনিয়ন হাসপাতালে সরেজমিন পরিদর্শন করে অনিয়ম পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তার নির্দেশের পরদিন শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ইউনিয়ন হাসপাতাল ও জেলা শহরে অবস্থিত জেনারেল হাসপাতাল নামের দুটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চলে। অভিযানে নেতৃত্ব দেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাজমিন আলম তুলি ও সদর উপজেলা পরিবার-পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. টিটু চন্দ্র শীল।


অভিযানের পর ডা. টিটু চন্দ্র শীল জানান, ইউনিয়ন হাসপাতালের আইসিইউ, সিটিস্ক্যান, পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড ও অপারেশন থিয়েটার সিলাগালা করে বন্ধ করা হয়েছে। আইসিইউ ও পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগীদের জেলা সদর হাসপাতালে হস্তান্তর করা হয়েছে। হাসপাতালটির অন্যান্য অসঙ্গতির ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। এখানে অভিযান শেষে জেনারেল হাসপাতালের ইসিজি বিভাগ সিলগালা করা হয়েছে। এক্স-রে বিভাগ বন্ধ রেখে এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যা সমাধান করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


অভিযান ও হাসপালাতাল মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন


ইউনিয়ন হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে যেকটি বিভাগ সিলগালা করা হয়েছে, সেগুলোর অবস্থা মন্ত্রী নিজে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর বাইরে কোনো বিভাগ সিলগালা করা হয়নি। যদিও সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, ইউনিয়ন হাসপাতালের একটি বিভাগেরও নিবন্ধন নবায়ন নেই।


হাসপাতালটির নথিপত্র ও সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, ইউনিয়ন হাসপাতালে ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ রয়েছে ডা. টিটু চন্দ্র শীলের। এ কারণে হাসপাতালটির সব বিভাগের নিবন্ধন তদারকি না করে মন্ত্রী যে চারটি বিভাগের কথা বলেছেন তা বন্ধ করে দায়সারা অভিযান চালানো হয়েছে।


এ ব্যাপারে ডা. টিটু চন্দ্র শীল প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, সারা দেশে চলমান অভিযানের অংশ হিসেবে কক্সবাজারে অভিযান শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব হাসপাতালে অভিযান চালানো হবে।


এতদিন অভিযান না করে মন্ত্রীর পরিদর্শনের পর কেন অভিযান– জানতে চাইলে নানাভাবে প্রশ্ন এড়িয়ে যান তিনি। হাসপাতালে বিনিয়োগ থাকার বিষয়টিও তিনি অস্বীকার করেছেন।


কক্সবাজারে হাসপাতালগুলোর যে হাল


সিভিল সার্জন কার্যালয়ের নথিপত্র বলছে, জেলায় মোট ৩৪টি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের অনুমোদন ছিল। এর মধ্যে কক্সবাজার সদরে রয়েছে ১২টি। সবগুলোর মধ্যে বর্তমানে পাঁচটি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের নিবন্ধন নবায়ন করা আছে। সাতটি নবায়নের আবেদন জমা দিয়ে স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বাকিগুলোর নিবন্ধন নবায়ন নেই। 


এর বাইরে কোনো প্রকার অনুমোদন না নিয়েই চলছে শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত সিটি হাসপাতাল নামের একটি প্রতিষ্ঠান। আর শহরের হাসপাতালে গেইটে অবস্থিত ডিজিটাল হাসপাতালের কোনো বিভাগের নিবন্ধন নবায়ন হয়নি গত ২ বছরে। 


সূত্র: প্রতিদিনের বাংলাদেশ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ