অবরোধ কান্নায় পর্যটন ব্যবসায়ীরা

 


তারেকুল ইসলামঃ

‘শহরের কলাতলীর হোটেল ডি ওশানিয়ায় ৩১ অক্টোবর ও ১ নভেম্বরের জন্য আলাদা আলাদা ১০ টি রুম অগ্রিম বুকিং করে অতিথিরা । কিন্তু  অবরোধের কারনে সব বুকিং বাতিল করেছেন সেবাগ্রহীতারা। এছাড়া হোটেলটিতে গেল শনিবার ৩২ জনের একটি টিম আতিথেয়তা গ্রহন করে। কথা ছিল তাঁরা ৫ দিন থাকনেব। কিন্তু  টানা ৩ দিনের অবরোধের কারণে সোমবার রাতেই তাঁরা কক্সবাজার ত্যাগ করেছেন। ’

বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দলগুলো টানা ৩ দিনের অবরোধের কারনে পর্যটন শিল্পের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে দাবী করে এসব কথা বলেছেন ডি ওশানিয়া হোটেলের ম্যানেজার আজিজুল হক মুন্না।

শুধু মুন্না এক নন, অবরোধের কারণে বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হবে পর্যটন খাত এমনটাই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ঠরা। ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকা ছাড়া কিছুই করার নাই বলে মন্তব্যও করছেন পর্যটন শিল্পের সংশ্লিষ্ঠরা।

হোটেল, রেস্তোরা, দূরপাল্লার বাস সহ পর্যটন ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্ঠ একাধিক সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, নভেম্বর থেকে শুরু হয় পর্যটন মৌসুম। আর এই মৌসুমের জন্যই সারাবছর প্রহর গুনে পর্যটন সেবীরা। কিন্তু এবার মৌসুমের শুরুতেই হানা দিয়েছে হরতাল, অবরোধ ও রাজনৈতিক অস্থিরতা। এই কারণে পর্যটন সেবীদের ব্যবসায়ও দেখা দিয়েছে মন্দা। 

 গতকাল সোমবার সন্ধ্যার পরে সরেজমিনে কলাতলী গিয়ে দেখা যায়,কলাতলী-বাসটার্মিনাল সড়কের দুই ধারে সারিবদ্ধভাবে দাড়ানো দূরপাল্লার বাস। কাউন্টারগুলোতে যাত্রীদের হুড়াহুড়ি। ফিরে যাওয়ার তাড়ায় যে যার বাসের আসন গ্রহন করছেন। 

এসময় কথা হয় ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা সাইফুল ইসলামের বলেন, আগে থেকেই সোমবার হোটেল বুকিং করা ছিল। তাই হরতাল শেষ হলে বাসে করে রওয়ানা দেয়। পথেই জানতে পারি তিনদিনের অবরোধ। তাই কি আর করা একদিন ঘুরেই ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছি। 

একই সময়ে  লন্ডন এক্সপ্রেস এর ম্যানেজার মোঃ আয়ুব বলেন, এমনিতে তেমন পর্যটক নেই। এরপরেও যারা ছিলেন চলে যাচ্ছে। ঢাকা থেকে কক্সবাজার আসার সোমবার রাতে সব বুকিংই বাতিল করেছে যাত্রীরা।

এ বিষয়ে রেস্তোরা মালিক সমিতির সদস্য আরিফুল ইসলাম বলেন, হরতালের আগ পর্যন্ত মনে হচ্ছিল পর্যটন মৌসুম আসছে। আমরা ধীরে ধীরে সারাবছরের লোকসান কমাচ্ছিলাম। কিন্তু হরতালের দিন থেকে ফের শুরু লোকসান গোনা। বিকিকিনি হীন অলস সময় পার করছি। আবার আজ থেকে অবরোধের কারনে আমাদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে। মাস শেষে বেতন দিতে পারবো কিনা সন্দেহ। 

কক্সবাজার হোটেল অফিসার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক করিম উল্লাহ বলেন,পর্যটন দিবসের পর থেকে দ‚র্গাপ‚জা পর্যন্ত ব্যবসার যে ধারাবাহিকতা ছিলো অবরোধের পর সেটি বিনষ্ট হবার সম্ভবনা বেশি। পর্যটনের যে সুষ্ঠু পরিবেশ নিরাপত্তা সেটির ব্যত্যয় ঘটলে এই মৌসুমে কোনভাবেই ক্ষতি পুষিয়ে তোলা সম্ভব হবে না।

এবিষয়ে দূরপাল্লার বাস সোহাগ পরিবহনের কক্সবাজার ম্যানেজার লুৎফুর কবির বলেন, ঢাকা- কক্সবাজার রুটে আমাদের নিয়মিত ৭ টি বাস চলাচল করে। কিন্তু অবরোধের কারণে বুকিং বাতিল হওয়ায় রবিবার রাতে ঢাকা থেকে দুটি বাসে করে ৩৫ জন অতিথি কক্সবাজার আসছেন।

আরেক দূরপাল্লার বাস গ্রীন লাইনের কক্সবাজার ম্যানেজার সুলতান আহমদ বলেন, ঢাকা-কক্সবাজার রুটে আমাদের অর্ধশতাধিক বাস চলাচল করে। তবে অবরোধের কারণে ঢাকা থেকে সোমবার রাতে শ’ খানেক যাত্রী নিয়ে মাত্র ৫ টি বাস ছেড়েছে। 

তিনি আরো বলেন, আমরা দূরপাল্লার বাসের কক্সবাজার ম্যানেজাররা অবরোধের কারণে সোমবার একটি সভা করেছি। সভাতে দিনের বেলা আমাদের বাস চলাচল বন্ধ থাকার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে পুলিশ পাহারায় রাত ৯ টার দিকে ডলফিন মোড়ে থাকা সকল কোম্পানির বাস একই সাথে ছাড়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছি। এমন শর্তেই আমরা টিকিট বিকিকিনি করছি। 

এবিষয়ে কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক মুকিম খান বলেন, অবরোধের কারনে আমাদের পর্যটন খাতে বিশাল লোকসান গুনতে হচ্ছে। ভ্যাট ট্যাক্স আর কর্মচারীদের বেতন দিতে হিমশিমে খেতে হবে।  পর্যটনের ভরা মৌসুমে এমন ক্ষতি মানা যায় না বলে দাবী করে তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা মুক্ত রাখা হোক পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারকে। পর্যটন বিকাশে কক্সবাজারে চলাচল রত  গণপরিবন ও অন্যান্য সেক্টরগুলো  অবরোধের আওতামুক্ত রাখবে রাজনৈতিক দলগুলো কাছে এমনটাই প্রত্যাশা। 

কক্সবাজার পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম বলেন পর্যটক সহ জেলাবাসীর নিরাপত্তার জন্যে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যেই পর্যটকদের আসা যাওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ