ক্ষমতার অপব্যবহারে কোটিপতি সিভিল সার্জন দপ্তরের রফিকুল

এন আলম আজাদ, কক্সবাজার: আলাদিনের চেরাগের সন্ধান না পেলেও ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বেচ্ছাচার ও দাপ্তরিক কান্ডে দূর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদ গড়েছেন জেলা সিভিল সার্জন অফিসের প্রধান সহকারী রফিকুল ইসলাম।সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে ফাঁকি দিয়ে  দীর্ঘ ১৪ বছর এ অফিসে চাকুরী কালে তার গড়া নানা অর্থ সম্পদ এখন  দৃশ্যমান।স্হানীয় দাপটে তিনি অধীনস্থ কর্মচারীদের কাছে এক মহা আতংকও। একদিকে দাপুটে অন্যদিকে অনিয়ম দূর্নীতির কুশীলব হিসাবে রফিক এখন বির্তকের শীর্ষে।

সুত্রের অভিযোগ চাকুরীর শুরুতে তার তেমন সম্পদ না থাকলেও  এখন টাকার কুমির হিসাবে এলাকাবাসীর কাছে পৃথক পরিচিতি পাচ্ছে। শহরের বাদশা ঘোনায় ১০ শতক জমি,কলাতলীতে কউকের নির্মিতব্য বহুতল ভবনে ১ টি ফ্লাট ও  আবদু রহমান বিল্ডিং এ তার বসবাসরত ফ্লাটটিরও ক্রয় সূত্রে মালিক তিনি।

পর্যটন জোনভূক্ত চন্দ্রিমা আবাসনে প্রায় ১০ শতক জমি রয়েছে তার। এছাড়া কলাতলী এসোসিয়েশনের সদস্য হওয়ায়  সমিতির নির্মাণাধীণ ভবনেও ১ টি ফ্লাট বরাদ্দ পেয়েছেন এবং আরও ২ টি ফ্লাট ক্রয়ের বুকিং দিয়েছেন।দূর্নীতির অর্জিত টাকায় তিনি ২টি  নোহা গাড়িও পরিবারের অন্যদের নামে ক্রয় করেছেন।যা একটির নং-চট্র মেট্রো চ-১১৭৭৪০।অপরটি কালো ব্রান্ডের যার নং চট্ট মেট্রো চ-১১৯২৬৯।তিনি এ ২ টি গাড়ি,, স্বাস্হ্য মন্ত্রানালয় সহ অার্ন্তজাতিক সংস্থার বরাদ্দকৃত অর্থায়ণ নামে মাত্র প্রশিক্ষণ সেমিনার দেখিয়ে বিপুল অর্থও হাতাচ্ছেন। 

দূর্নীতিতে সিদ্ধহস্ত রফিকুল অবৈধ কর্মকাণ্ড নির্বিঘ্ন রাখার কৌশলে সিন্ডিকেটেরও উত্থান ঘটিয়েছেন। এ সিন্ডিকেট লাইসেন্স বানিজ্য ও স্বাস্থ্যগত সনদ থেকে মোটা অংক পকেটস্থ করেন।

সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা না করে কোন প্রকার বিঙ্গপ্তি বিহীন ২ টি পরিত্যক্ত জিগ গাড়ী ও ১৫ টি মোটর সাইকেল বিক্রি নথি ভুক্ত করলেও কোষাগারে বিক্রিত মূল্যের সেই টাকা জমা না করে নিজেই আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ।

স্বেচ্ছাচারী রফিকুল অফিসের ৩য় তলায় ২ টি কক্ষ এনজিও ইউনিসেফকে ভাড়া দিলেও সেই টাকা নথিভুক্ত না করে সমুদয় টাকা বেমালুম হজমে জড়িত।

যদিও কক্ষ ২টির বিদ্যুৎ বিল সিভিল সার্জন দপ্তরের হিসাব থেকে পরিশোধ করা হয়।এছাড়া তিনি স্বাস্হ্যগত সনদ দিতে গিয়ে  সরকারী চাকুরীতে যোগদানকারী প্রতিজনকে  নির্ধারিত ফিঃ ১৫০ টাকার স্হলে ৫শ টাকা দিতে বাধ্য করেন।জাতিসংঘের অর্থায়নে পুষ্টি কর্মসূচির বরাদ্দকৃত অর্থও তার পকেটে যাচ্ছে বছরের পর বছর। 

তিনি জগাখিচুড়ী মার্কা সেমিনার ও প্রশিক্ষণের আয়োজন করে দায় শেষ করে সিংহভাগ টাকা লোপাট করেন।

তার এসব অনিয়মের প্রতিবাদ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধাচারী হলে সেই কর্মচারীকে শোকজ সহ  বদলীর হুমকি দেন।

গত কয়েকবছরে তার চক্ষুশুল এমন কর্মচারীদের প্রায় ৫ জনকে বদলী হতে হয়েছে।একই অফিসের সহায়ক মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নেজাম উদ্দিন,আবুল কালাম আজাদ, নাজির হোসাইন,ইসহাক নোমান ও সামশুল আলম এ বদলীর শিকার।

তার দূর্নীতির আরেক সহযোগী কাজী করিম উল্লাহ।তিনি রফিকুলের নির্দেশে অনিয়ম দূর্নীতির বড় অংশটি সামলান।স্বাস্থ্য সনদ,বেসরকারি প্যাথলজী ও হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়নে ঘুষ বানিজ্যের দিকটি তিনি দেখভাল করেন। 

সদ্য নিয়োগকৃত প্রাইমারী শিক্ষকদের কাছথেকে স্বাস্থ্য সনদ প্রদানে প্রতিজন থেকে অবৈধ টাকা হাতিয়ে তিনি এখন  বেশ আলোচিত। প্রায় ৪৮০ জন শিক্ষকের কাছথেকে নেয়া এ টাকা তিনি ও তার সিন্ডিকেট ভাগবাটোয়ারা করেছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে অফিস পাড়ায়।

দূর্নীতির মহাকারিগর রফিকুল ক্ষমতার অপব্যবহার করেই  স্বাস্থ্য পরিদর্শিকা স্ত্রী হোসনে আরাকে সরকারি চাকরী বিধিমালা লঙ্ঘন করে পঃপঃ দপ্তর কক্সবাজার থেকে ডেপুটেশনে সদর হাসপাতালের দায়িত্বে পাঠানোর দুঃসাহসও দেখিয়েছেন।শুধু তাই নয়, তার নিকট আত্মীয়স্বজনদের সরকারি চাকরী পাইয়ে দিতে রীতিমত রেকর্ডও গড়েছেন এই প্রধান সহকারী।তার তদবিরেই শালা, ভাইপো-ভাগিনা সহ ২০ জন আত্মীয়স্বজন এখন স্বাস্থ্য দপ্তরের বিভিন্ন উপজেলায় রয়েছেন।

মন্ত্রনালয় ও বিদেশি এনজিওর টাকায় পরিচালিত মা ও শিশু পুষ্টির কর্মসূচির জনবল নিয়োগেও  আত্নীয়স্বজন ও পছন্দের লোকদের  অগ্রাধিকার দিয়ে তাদের বেতন -ভাতায় নির্দিষ্ট  কমিশনে ভাগ বসান।

বিভাগীয় বিধিমালা জলাঞ্জলি দিয়ে পত্রিকায় বিঙ্গপ্তি বিহীন ৬০-৭০ জনকে চাকরি দেয়ার দুষ্কর্ম্মটিও দেখিয়েছেন। পান থেকে চুন খসলেই নিন্ম পদের কর্মচারীদের হেনস্তা, তিরস্কার ও বদলীর হুমকি দেন। সিভিল সার্জন অফিসে বসেই পুরো ৮ উপজেলায় এ কৌশলেই ছড়ি ঘোরান তিনি। 

তার অবৈধ টাকা অর্জনের ফাঁদে না পড়লে ও পছন্দের কারো উপর অন্যরা বিরাগভাজন  এবং উর্ধতন কর্তৃপক্ষে অভিযোগ করলেই বদলী করিয়ে দেন তিনি।

তদন্ত কমিটির সদস্য হওয়ার সুবাদে সুচতুর রফিক টেকনাফ অফিসের এক গাড়ি চালককের অভিযোগের কোন সুরাহা না করেই উল্টো একই অফিসের হিসাব রক্ষক অভিযুক্ত মোঃ আলীকে মোটা অংকে কুতুবদিয়া বদলী করিয়ে আপদ বিদায় করেন।একইভাবে উখিয়ার নুরুল আলমের নামে অভিযোগ উঠায় তাকে জেলা অফিসে স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক(ভারপ্রাপ্ত) পদে বদলী করান।

এদিকে শহরের বিজিবি ক্যাম্প এলাকার এক বাসিন্দা অনুপ চন্দ্র শাহা রফিকুলের অনিয়ম দূর্নীতি তদন্ত চেয়ে মহাপরিচালকের কাছে করা অভিযোগের কপিও সংরক্ষিত রয়েছে এ প্রতিবেদকের কাছে।তার দুর্দণ্ড প্রতাপের কাছে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা অতিতুচ্ছ।

এসবের  আড়ালে কোন রাঘববোয়াল জড়িত আছে কীনা সেই প্রশ্নটিও ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে। একই সাথে ঘুষ দূর্নীতির কান্ডারি রফিকুলের অর্জিত অর্থ সম্পদ দৃশ্যমান হলেও আইনি সংস্থার কার্যকর কোন ভূমিকা না থাকাটি রহস্যের ঠেকছে সচেতন মহলে।

তার এসব সম্পদের হিসাব চাকুরির হলফনামায় লিপিবদ্ধ রয়েছে কিনা তাও সন্দেহ। অবিলম্বে তার আয় বহিভূর্ত  সম্পদ ও সরকারি বেসরকারি নানা ব্যাংকে তার ও স্ত্রীর হিসাব তদন্তে নামলে সরকারি স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে কী পরিমাণ অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন তিনি সেই রহস্যের জট খুলবে বলে সচেতন মহলের প্রত্যাশা।

প্রধান সহকারী রফিকুলের হয়রানির শিকার যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার পুত্র কালামারছড়া স্বাস্থ্য অফিসের পরিদর্শক নেজাম উদ্দিন জড়িত কন্ঠে বলেন,আমার দু'সন্তান থ্যালেসমিয়া রোগে আক্রান্ত।তাদের চিকিৎসা চলছে কয়েক বছর ধরে।রফিকুল মিথ্যা অজুহাত দাঁড় করিয়ে আমাকে সন্তানের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করেছেন।ডাক্তারের পরামর্শে তাদের প্রতিমাসে রক্ত দেয়ার প্রয়োজন হলেও ছুটি কিংবা অন্য যে কোন উপায়ে জেলা সদরেে গিয়ে রক্ত দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।তিনি আরও জানান, রফিকুল নিঃসন্তান হওয়ায় সন্তানের মর্যাদা বুঝেন না।প্রধান সহকারী রফিকুল মনেপ্রাণে স্বাধীনতা বিরুধী। মুক্তিযোদ্ধের স্বপক্ষের কর্মচারীরা প্রতিদিনই হেনস্তা ও অবিচারের শিকার হচ্ছে তার।

দাপ্তরিক অনিয়ম দূর্নীতি,নানা বৈষম্য ও অর্জিত অবৈধ সম্পদ সম্পর্কে জানতে চাইলে রফিকুল ইসলাম বলেন, তার কাছে সুবিধা বঞ্চিত কর্মচারীরাই তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে নেমেছে। তারাই মিথ্যা গালগল্পে সাংবাদিকদের বিভ্রান্ত করছে।উল্লেখিত সম্পদের মধ্যে বাদশা ঘোনার ১০ শতক জমি,আবদু রহমান বিল্ডিং, কউক এবং কলাতলী এসোসিয়েশনের  নির্মানাধীন প্লাটের কথা স্বীকার করলেও বাকী সম্পদের কথা অস্বীকার করেন তিনি।আরও বলেন,সিভিল সার্জন দপ্তরের কারোর সাথে তার কোন বিরোধ মনোমালিন্য নেই।সবার সাথে তার ভালো সম্পর্ক বলে জানান প্রধান সহকারী রফিকুল। 


প্রধান সহকারীর বিরুদ্ধে উত্তাপিত নানা অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে সদ্য বিদায়ী জেলা সিভিল সার্জন মাহবুবুর রহমান জানান, তার কাছে এ রকম কোন অভিযোগ নেই। কেউ অভিযোগ করলে তদন্তের মাধ্যমে বিহিত ব্যবস্হা নেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ