ধরাছোঁয়ার বাইরে শাহপরীর দ্বীপের ইয়াবা ডন নুরুল আলম

নিজস্ব প্রতিবেদক গোয়েন্দা সংস্থার তালিকার বাইরেও রয়ে গেছে বহু মাদক কারবারি। মাদকের বিরুদ্ধে ঘোষিত আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর অভিযানে তৎকালীন কথিত বন্দুকযুদ্ধে অনেক ইয়াবা ব্যবসায়ী নিহত হলেও আইনের আওতায় আসেনি অনেক ইয়াবা কারবারি। ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে আধিপত্য বিস্তার করে চলেছেন অনেক ইয়াবা ব্যবসায়ী। তার মধ্যে একজন কক্সবাজারের টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মাঝের পাড়ার বাসিন্দা আমির হামজা প্রকাশ ফসকা লালুর ছেলে নুরুল আলম। সে অর্ধডজন মাদক মামলার বোঝা মাথায় নিয়ে নিজ এলাকা ছেড়ে চট্টগ্রাম শহরে এখন অবৈধ টাকায় নব্য কোটিপতি। একজন ইয়াবা ডন হিসেবে পরিচিতি পেলেও তিনি বরাবরই অধরা রয়ে গেছেন। যার ফলে দিন দিন আরো বেপরোয়া হয়ে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে প্রকাশ্যে পাচার করছে কাড়িকাড়ি ইয়াবা। ধ্বংস হচ্ছে দেশ তথা দেশের যুব ও ছাত্রসমাজ। শাহপরীর দ্বীপের নুরুল আলম ইয়াবা ব্যবসা করে গত কয়েক বছরে শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। নামে বেনামে চট্টগ্রাম শহরের খুলশীসহ বিভিন্ন এলাকায়, বেশ কয়েটি ফ্ল্যাট, প্লটসহ, হুন্ডাই, এলিয়ন, প্রিমিও, বার্জাজ কোম্পানিরমতো অর্ধডজন দামি ব্র্যান্ডের গাড়ি ও জায়গা জমি কিনে সম্পত্তির মালিক হয়ে গেছেন। তবে সুচতুর নুরুল আলম বেশিরভাগ সম্পত্তি তার চট্টগ্রামের স্ত্রী রাজিয়া বেগম, প্রকাশ সুলতানার আত্মীয়-স্বজনের নামে ক্রয় করেছেন বলে জানা গেছে। অথচ কয়েক বছর আগেও তিনি শাহপরীর দ্বীপ বাজারে তার বাবার দোকানের একজন কর্মচারি ছিলেন। কিন্তু মরণনেশা ইয়াবা ব্যবসার বদৌলতে আজ কোটিপতির খাতায় নাম লিখিয়েছেন নুরুল আলম। বিভিন্ন মামলা সূত্রে জানা যায়, বিগত ২০সালে কক্সবাজারের মহেশখালী থানার যার মামলা নং ২/৭৬ তার বিরুদ্ধে দেড় লাখ পিস ইয়াবা মামলার পলাতক আসামীসহ অর্ধডজন মামলা রয়েছে। এর আগে বিগত ২০১১ সালে টেকনাফ থানার বিপুল পরিমাণ ইয়াবা জব্দ মামলায়ও সে আসামি যার মামলা নং ৩২। সূত্রে আরো জানা যায়, বাংলাদেশের টপ লেভেল এর ইয়াবা ব্যবসায়ী জুবায়েরের ভাগিনা এই নূরুল আলম। তার মামার সাথে ইয়াবা ব্যবসাযর কৌশল আয়ত্ব করে সেও একজন অঘোষিত ইয়াবা ডন। ন্যাশনাল এনআইডি কার্ডে তার নাম নুরুল আলম হলেও চট্টগ্রাম শহরে, সে জাকির,জামাল সহ বিভিন্ন ছদ্মনাম ব্যবহার করে কৌশলে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে আসছে। এছাড়া প্রথমে নুরুল আলম টেকনাফ সাবরাং এলাকার (ছন্দ নাম সেলিনা) নামে একজনকে বিয়ে করে, সেই ঘরে ফুটফুটে দুইটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। বিগত পাঁচ বছর থেকে, প্রথম স্ত্রীর সাথে নিয়মিত কোন যোগাযোগ রাখছে না বলে দাবি তাদের। ইয়াবা ব্যবসার সুবিধার্থে, সে ঘটে বসায় আরেক অঘটন মামার শালিকে দুইটি সন্তানসহ আরেকজনের স্ত্রীকে ভাগিয়ে এনে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। স্ত্রীর নাম, রাজিয়া বেগম হলেও সেও মাঝেমাঝে হয়ে যায় সুলতানা। এ বিষয়ে, নুরুল আলম এর আপন ভাই মোহাম্মদ আলমের সাথে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ, এই পর্যন্ত একশতবারেরও বেশি সময়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আমার বাবার সাথে যোগাযোগ করেছেন, এমনকি বাড়িতেও তদন্তের জন্য এসেছেন, আমার বাবা একজন সৎ ভালো মানুষ, তার কারণে বাবা স্ট্রোক কারার মতো অবস্থা, আমাদের সাথে তার কোনো যোগাযোগ নেই, সে বেশ কয়েকবছর থেকে দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে চট্টগ্রাম শহরে বসবাস করে আসছে সে। সাম্প্রতিক সময়ে গোটা দেশে ইয়াবার থাবা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। প্রশাসন, সীমান্তপ্রহরী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান সত্ত্বেও ইয়াবার বিস্তার রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। ছাত্রছাত্রী, তরুণ-তরুণী ও উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা ইয়াবার আগ্রাসনের শিকার। রাত জেগে অভিসার, সাময়িক যৌনফুর্তি ও আনন্দের রঙিন স্বপ্নের মোহ তাদের হাতছানি দেয়। অনেক তরুণী স্লিম হওয়ার আগ্রহে ইয়াবা সেবন করে। কারণ, ইয়াবা ক্ষুধা কমিয়ে দেয়। অনেকেই জানে না এর প্রতিক্রিয়া কত মারাত্মক ও ভয়াবহ। বাংলাদেশে ইয়াবাসেবীদের সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ। মাদকসেবীদের ৮০ শতাংশই ইয়াবা আসক্ত। আর এদের মধ্যে ৩০ শতাংশই তরুণী ও যুবতী। নাফ নদীর ওই পাড়ে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ৩৭টি ইয়াবা তৈরির কারখানা রয়েছে। মংডু ও সিতওয়ে (আকিয়াব) থেকে সমুদ্রপথে ইয়াবার চালান নাফ নদী অতিক্রম করে বাংলাদেশে ঢোকে। কক্সবাজারের টেকনাফ হচ্ছে ইয়াবার প্রবেশদ্বার। ওখান থেকে চট্টগ্রাম হয়ে এই পাগলা ওষুধ সারা দেশের জেলা-উপজেলা ও শহর-গ্রামপর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ছে। বর্তমানে গড়ে উঠেছে বছরে ৪০ কোটি টাকার মাদকের বিশাল মার্কেট। এর পেছনে আছে শক্তিশালী রাজনৈতিক সিন্ডিকেট। চাহিদার সাথে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় ইয়াবার বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে ক্রমেই।।।।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ