সৈয়দপুর আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ উপজেলায় পাসে ৩য় ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে ৭ম, নারী বিদ্যাপীঠে পাসের হারে শ্রেষ্ঠ


মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুরঃ

করোনা মহামারির মধ্যেও শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোযোগী করায় সৈয়দপুরে বনেদী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাচ্ছে আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ঘোষিত এইচ এস সি পরীক্ষার ফলাফলে শতভাগ পাসের কৃতিত্ব অর্জন করতে না পারলেও পাসের হারে উপজেলায় ৩য় ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক থেকে ৭ম স্থানে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সেই সাথে এবারও সৈয়দপুরে মহিলা কলেজগুলোর মধ্যে পাশের হারে শীর্ষস্থানও ধরে রেখেছে কলেজটি। একইসাথে জিপিএ -৫ পািপ্ততে ২য় স্থানে রয়েছে ওই প্রতিষ্ঠানটি। এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষনে এমন চিত্র বেরিয়ে এসেছে।

ফল বিশ্লেষনে দেখা গেছে এবারে সৈয়দপুরের ১৪টি কলেজের মধ্যে ডিগ্রী পর্যায়ে ৩ টি ও এইচএসসি পর্যায়ে ৩টি মহিলা কলেজ রয়েছে। ১৪টির মধ্যে শহরে ৯টি ও বিভিন্ন ইউনিয়নে রয়েছে ৫টি কলেজ। বনেদী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে সৈয়দপুর শহরে। এসব বনেদী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে শিক্ষার প্রতিযোগিতায় বরাবরের মতো এবারও  সাফল্য ধরে রেখেছে সৈয়দপুর আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ। 

সৈয়দপুরের শিক্ষাবীদ ও সচেতন মহলের মতে জিপিএর দিক থেকে কম পয়েন্ট পাওয়া ছাত্রীদের নিয়ে পড়াশোনায় ব্যাপক তদারকির মাধ্যমে পাঠদান করিয়ে  ভালো কলেজগুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের সফলতা সত্যিই প্রশংসনীয়। তবে পড়াশোনার মানোন্নয়নে প্রতিষ্ঠানটি যদি আরও কঠোর নজরদারী করে, তাহলে অদুর ভবিষ্যতে শতভাগের স্থান করে নেয়াসহ প্রতিষ্ঠানটি সৈয়দপুরে সেরার তালিকায় আসতে পারে।

পরীক্ষার ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, সৈয়দপুরে মহিলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পাসের দিক থেকে প্রথম ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির ফলাফলো ২য় সেরার সারিতে রয়েছে আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ। ফলাফলে দেখা যায়. চলতি বছর ওই প্রতিষ্ঠান থেকে ১৫৩ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে পাস করে ১৫২ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৬ জন। পাশের হার ৯৯.৩৫% ভাগ। সৈয়দপুর মহিলা ডিগ্রী কলেজের এবার পাসের হার ৯২.৭২% ভাগ। ওই প্রতিষ্ঠান থেকে ২৬১ জনের মধ্যে পাস করেছে ২৪২ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২১ জন।  তবে পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের পাশের হার মহিলা কলেজের থেকে কিছুটা বেশী। তাদের পাশের হার ৯৭.০৪% ভাগ।

এ প্রতিষ্ঠান থেকে ১৩৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করে ১৩১ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছে মাত্র ৩ জন।  সবমিলিয়ে বরাবরের মতো এবারও মহিলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ  পাশের দিক থেকে শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে। এ প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা জানান এবারও ভালো ফলাফল অর্জনে কৃতিত্বের দাবিদার অধ্যক্ষসহ কলেজের শিক্ষক শিক্ষিকারা। ওই প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষায় পাস হওয়া জিপিএ-৫ প্রাপ্ত আরজুমান আরা ইতি, কাশফিয়া আফরিন, শাহানা খানম লাভলী, শামীম আরা সোনাম, ইসরাত আরেফিন, ইসমোতারা বলেন গত এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ না পেয়ে এই কলেজে ভর্তি হই। 

তারপর আমরা যাতে এইচএসসি পরীক্ষায় ভাল ফলাফল অর্জন করতে পারি সেজন্য প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমানসহ সকল স্যার করোনা মহামারির মধ্যেও আমাদের বাড়ি পর্যন্ত গিয়ে পড়াশোনার ব্যাপারে সার্বক্ষণিক তদারকি করতেন। নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন আমদের অভিভাবকদের সাথে। স্যারদের কঠোর নজরদারির কারণে আমাদের বাবা মা পড়াশোনার বিষয়ে কোন ছাড় না দিয়ে সার্বিক সহযোগিতা করতেন।  ফলে আমরা ভালো ফলাফল অর্জন করতে পেরেছি জানিয়ে ওইসব মেধাবীরা জানান, আমাদের প্রতিষ্ঠানটি পড়াশোনার দিক থেকে সত্যিই আদর্শ বিদ্যালয়। কলেজের ইংরেজি বিষয়ের সুলতানা নাসরিন ও বাংলা বিষয়ের শিক্ষক মাহমুদুল্লাহ বলেন, অধ্যক্ষ স্যারের নির্দেশে শিক্ষা বছরের শুরু থেকেই আমরা শিক্ষার্থীদের নজরদারীতে রাখি। করোনা মহামারিতেও  আমাদের নিয়মিত তদারকি আর অভিভাবকদের সহযোগিতার কারনেই প্রতিষ্ঠানের ভালো ফলাফল অর্জন হয়েছে। 

এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান বলেন, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান গুলোতে মেধাবী ছাত্রীরা আগেই ভর্তি হয়। আর আমাদের এখানে আসে দূর্বল ও নিম্নবিত্ত শ্রেণীর শিক্ষার্থী। ফলে তাদেরকে নিয়েই আমরা গ্রহন করি নানা পরিকল্পনা। করোনার কারণে প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও  পরীক্ষায় যাতে তারা ভালো করতে পারে সে জন্য পড়াশোনায় মনোযোগী করতে নিয়মিত তদারকিসহ সেপ্টেম্বরে কলেজ চালু হলে  শিক্ষার্থীদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করা, ক্লাস টেষ্ট, মাসিক পরীক্ষা নেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া অভিভাবকদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ অব্যাহত রেখে তাদের সচেতন করেছি বলেই চলতি বছর ভালো ফলাফল অর্জন হয়েছে। পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির সদস্যদেরও সার্বিক সহযোগিতা পেয়েছি বলে আমরা এবার ভালো করেছি। ১জন পরীক্ষাথর্ী পরীক্ষায় অনুপস্থিত থেকে অকৃতকার্য হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি শতভাগের তালিকায় না আসায় আমাদের খুবই খারাপ লাগছে। তবে আগামিতে যাতে শতভাগ ফলাফল করা যায়, সে জন্য এখন থেকেই কাজ শুরু করেছি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ