তিস্তায় হঠাৎ ভয়াবহ বন্যা, রেড এ্যালার্ট জারি


এন.এম হামিদী, বিশেষ প্রতিনিধিঃ

তিস্তায় হঠাৎ ভয়াবহ বন্যায় রেড এলার্ট জারি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ভারতে ভয়াবহ বন্যার কারণে বাংলাদেশের তিস্তা নদীতে পানি বেড়েছে বলে জানা যায়। পানি বাঁড়ার সাথে সাথে নীলফামারী ও লালমনিরহাট ও রংপুর জেলার তিস্তা নদী বেষ্টিত এলাকা তলিয়ে যেতে শুরু করেছে।  

বুধবার (২০ অক্টোবর) সকাল ৬টা থেকে নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে  প্রবাহিত হয়। সকাল ৯টায় আরও ১০ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৬০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে তিস্তার পানি। পানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হলেও তিস্তার পানি সামাল দিতে পারছে না সংশ্লিষ্টরা। এতে করে তিস্তা ব্যারাজ রক্ষায় উত্তর পার্শ্বে অবস্থিত ফ্লাড ফিউজ হুমকীর মুখে পড়েছে। তা যে কোন সময় তা বিধ্বস্থ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ। এটি ভেঙ্গে গেলে তিস্তা ব্যারাজের সাথে লালমনিরহাট জেলার বুড়িমারী, পাটগ্রাম, হাতিবান্ধার সাথে নীলফামারী জেলার সড়ক পথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে বলে জানা যায়।

এদিকে তিস্তা অববাহিকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড রেড এ্যার্লাট(লাল সংকেত) জারী করে মানুষজনকে নিরাপদে সরে যাওয়ার ঘোষনা দিয়েছে। তিস্তার ভয়াবহ বন্যায় এলাকার হাজার হাজার পরিবার ঘরবাড়ি ছেরে উঁচুস্থানে আশ্রয় নিয়েছে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সর্তকীকরণ কেন্দ্রের পানি পরিমাপক নুরুল ইসলাম জানান, গতকাল মঙ্গলবার(১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তিস্তার পানি বিপদসীমার অনেক নিচে ৫১.৪০ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সেই পানি ১২ ঘন্টায় ১০৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে সকাল ৬টায় বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। যা সকাল ৯টায় আরও ১০ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পায়।

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান  দৈনিক জনতার প্রতিনিধি কে  জানান, এলাকার জিরো পয়েন্টে তিস্তার ডান তীর ও গ্রোয়েন বাঁধ হুমকীর মুখে পড়েছে। বিশেষ করে গ্রোয়েন বাঁধটির উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ওই গ্রোয়েনটি বিধ্বস্থ হলে ডানতীর বাঁধ সহ এলাকার শতশতবাড়ি তিস্তা নদীতে ভেসে যাবে।

ঝুনাগাছ চাপানী ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বলেন, ভেন্ডাবাড়ি ছাতুনামা ফরেষ্টের চর এলাকার এখন তিস্তা নদীর পানি বয়ে যাচ্ছে। ঘরবাড়িতে গলা সমান পানি। টেপাখড়িবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ময়নুল হক বলেন পরিস্থিতি খুব খারাপ। তিস্তা বাজার, তেলিরবাজার, দোলাপাড়া, চরখড়িবাড়ি এলাকা তলিয়ে গেছে। চরের ফসলের জমি সব পানির নিচে। ঘরবাড়ি ছেড়েছে মানুষজন ।

এ ছাড়া নীলফামারীর ডিমলাও জলঢাকা উপজেলার ২২টি চরের ৫০ হাজার পরিবার বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। হঠাৎ তিস্তায় পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় চরাঞ্চলের সবজিসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। ফসল ইতোমধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দী পরিবারগুলো শিশু, বৃদ্ধ ও গবাদি পশু নিয়ে পড়েছেন  বিপাকে।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশফাউদ্দৌলা প্রিন্স বলেন, উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পরিস্থিতি ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রেখেও পানি সামাল দেয়া যাচ্ছেনা। আমরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজখবর রাখছি। পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেছে। যে কোন সময় তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাড ফিউজ বিধ্বস্থ হতে পারে। আমরা তিস্তা অববাহিকায় লাল সংকেত দিয়ে মানুষজনকে নিরাপদে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ