শ্রমিকলীগ নেতা পেয়ারু'র অত্যচারে অতিষ্ঠ নিরীহ মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

কখনো পুলিশের,কখনো সাংবাদিকের সোর্স আবারও কখনো শ্রমিকলীগ নেতা পরিচয়ে সাধারণ নিরীহ লোকজনকে মামলা,নিউজ এবং আইনী ঝামেলার হুমকি ধমকি দিয়ে মোটা অংকের চাঁদা আদায়,না দিলে নির্যাতনের ভয় দেখিয়ে প্রকাশ্যে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কক্সবাজার পৌরসভাধীন ৯ নং ওয়ার্ডের বাদশার ঘোনা খাঁজা মনজিল এলাকার মৃত আলী হোসেন বৈদ্যের ছেলে মোঃ পেয়ারু (৩০)। 

দৃশ্যমান কোন আয় না থাকা সত্বেও বাইক হাঁকিয়ে রাজকীয় ভাব নিয়ে তার আলিশান জীবন-যাপনের নেপথ্যে রয়েছে মাদক, থানার অসাধু পুলিশ কর্মকর্তাদের দালালী, ছিনতাইকারী চক্রের সাথে আতাতসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড।

অনুসন্ধান ও এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, মৃত আলী হোসেন বৈদ্যের ছেলে পেয়ারু কোন কাজ কাম করে না। তার নেই কোন ব্যবসা, কোথাও নেই চাকরি কিন্তু তার চালচলন দেখলে বুঝা যায় সে একজন দেশের নাম করা শিল্পপতির সন্তান।তার বাবার মৃত্যুর সময় রেখে যাওয়া মাটির দেয়াল দেয়া ঘর বর্তমানে বিল্ডিং।ঘরের আসবাব পত্র দেখে বুঝার কোন কায়দা নেই সেই একজন কর্মহীন মানুষ।ঘরে দামী আসবাবপত্র,দামী বাইক ও বউয়ের শরীরের গহনা কি নেই তার? সবই হয়েছে থানার দালালি ও মাদককারবারের কারনে। 

জানা যায়,এলাকার কোন লোক জমিজমা বিক্রি করলে ও ক্রয় করলে,নতুন কোন ঘর তৈরি করলে অথবা মাটি কাটলে সেখানে হাজির হয় পেয়ারু। সেখানে গিয়ে সাংবাদিক ও পুলিশের ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়।সাধারণ মানুষও কোন জটঝামেলায় না গিয়ে কিছু টাকা গেলেও তাকে ম্যানেজ করতে বাধ্য হয়।যেদি কোন কারনে কেউ টাকা দিতে অস্বীকার করলে তার উপর নেমে আসে নির্যাতন,মামলা,নিউজ আরো কত কি।

তার এই অবৈধ টাকার দাপট দেখিয়ে ভাগিয়ে নিয়েছে পৌরসভাধীন ৮ নং ওয়ার্ডের শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ। সেই পেয়ারু, ৯ নং ওয়ার্ডে ভোটার ও বসবাস করলেও কিন্তু রাজনীতি করে ৮ নং ওয়ার্ডে।আর এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার এক নিকট আত্মীয় জানান,গত ২০১৯ সালে সদর মডেল থানা ছিল পেয়ারুর বেড রুম। তৎকালীন কয়েকজন এসআই ও এএসআইসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্তাদের সাথে খুব বেশি সখ্যতার সুবাদে বিভিন্ন মাদককারবারি, ছিনতাইকারীর  তালিকা তৈরি করে পুলিশের মাধ্যমে ধরে এনে নির্যাতন ও মামলার ভয় দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে সেই টাকা কয়েকজনের মধ্যে ভগভাটোয়ার করতো। 

সে আরও জানায়, কলাতলী এলাকার ওসমান গণির স্বামী পরিত্যক্ত নুর জান্নাত নামে এক নারীর কাছে পুলিশের উদ্ধার করা (ভাগবাটোয়ারাের অংশ) ইয়াবাগুলো জমা রাখা হতো। সেখান থেকে সেই ইয়াবাগুলো ও-ই নারীর মাধ্যমে শহরের বিভিন্ন খুচরা ইয়াবা বিক্রয়কারীর কাছে সাপ্লাই দেওয়া হতো। বিনিময়ে ও-ই নারীকে মাসে ১০-১৫ হাজার টাকা দেওয়া হতো। একদিন পেয়ারুর সাথে ও-ই নারীর মনোমালিন্য হলে সেই জমা রাখা ইয়াবা দিয়ে পুলিশের মাধ্যমে মামলা দিয়ে নুর জান্নাতকে জেলে পাঠানো হয়।পরবর্তী সেই নারী ৯ মাস জেল কেটে আদালতের মাধ্যমে জামিনে বের হয়। কিন্তু সেই নারী ততক্ষণে সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়, অন্যদিকে নুর জান্নাতের বাবা ওসমান গণি মেয়ের চিন্তায় স্ট্রোক করে পঙ্গুত বরণ করে দীর্ঘদিন ধরে ঘরের বিছানায় পড়ে আছে। টাকার অভাবে চিকিৎসাও করাতে পারছে না ওসমান গণি। নুর জান্নাত সম্পর্কে পেয়ারু'র আপন মামাতো বোন।

জানা যায়, ততকালীন সদর থানার সেই পুলিশ কর্তাদের নিয়ে এলাকার অনেক নিরীহ মানুষকে হয়রানি ও মামলা দিয়ে জেল কাটিয়েছে এবং চিহ্নিত মাদক কারবারিদের সাথে পুলিশ অফিসারদের গোপন আতাত করিয়ে দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা। 

জেলার আলোচিত ঘটনা সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহা হত্যার পর জেলার সব থানা হতে ওসি থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত একযোগে বদলি করার পর প্রায় দীর্ঘ একবছর পর্যন্ত পেয়ারু থানার আশপাশে ঘেষতে পারেনি। পরে গেল কয়েকমাস পূর্ব থেকে থানায় ঘুরাঘুরি করতে দেখা যাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়,সদর মডেল থানায় বর্তমানে কর্মরত এক এএসআইর সাথে পরিচয়ের সূত্র ধরে থানা এলাকায় ঘুরাঘুরি করতে দেখা যাচ্ছে পেয়ারুকে।তার নাম ভাঙ্গিয়ে বিভিন্নজনকে হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করছে বলে জানা যায়। 

আরও জানা যায়, সদর মডেল থানার সাবেক এক এএসআই  অভিযান চালিয়ে জাল নোট পাচারকারী চক্রের কাছ থেকে ৫০ হাজার জাল টাকা উদ্ধার করেছিল। সেই জাল টাকা গুলো পেয়ারুর হাতে রক্ষিত ছিল। পরবর্তীতে ও-ই টাকাগুলো বাদশাঘোনা এলাকার ইউনুস প্রকাশ ডেক্সি বেয়ারির কাছে জমা রাখে পেয়ারু। সেই টাকা দিয়ে ও-ই এলাকার এক রাজমিস্ত্রী নুরুল ইসলামসহ দুই জন নিরহ লোককে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের মাধ্যমে ধরিয়ে দিয়েছি পেয়ারু।দীর্ঘদিন জেল কাটার পর আদালতের মাধ্যমে তারা জামিনে বেরিয়ে আসে। এই ভাবে এলাকার অনেক নিরীহ অসহায় মানুষকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়ে হয়রানি করেছে বলে জানা যায়।

সচেতন মহলের দাবী,বর্তমান সদর মডেল থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) মনিরুল গীয়াস একজন অত্যান্ত ভালো মানুষ,সে প্রতিনিয়ত পুলিশি সেবা সাধারণ মানুষের দৌড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে নিরলসভাবে কাজ যাচ্ছেন এমতাবস্থায় কি করে এসব চিহ্নিত দালাল'র  থানা আশপাশে ঘুরাঘুরি? দ্রুত পেয়ারুকে আইনের আওতায় আনার অনুরোধ জানিয়েছেন সচেতন মহল ও ভুক্তভোগীরা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ