দোতারার সুর শুনে ঔষধ কিনতে আসে ক্রেতারা


হাসানুজ্জামান হাসান, লালমনিরহাটঃ
 

"ইদুর মারা বিস্কুট বের হইছে' তেলাপোকা মারা পাউডার বের হইছে এমন কোন হকারী কথা নয়"এবার ব্যতিক্রমী এক মানুষের কথা শুনবো। নাম কাশেম আলী(৮০)।লোকে ডাকে কাশেম বয়াতী নামে।৫২ বছর থেকে বিভিন্ন হাট বাজারে গান গেয়ে ঔষধ বিক্রি করেন কাশেম আলী। আর কিছু চাইনা মনে গান ছাড়া এই কথাটির যথার্থই প্রমান করেছেন তিনি।

দেশ স্বাধীনের পর থেকেই গান গেয়ে বেড়ায় কাশেম বয়াতী। জীবনের শেষ সময় এসেও গান ছাড়ছে না কাশেম ৮০বছর বয়সি এই বৃদ্ধ। ৫২ বছরের অধিক সময় ধরে গান গেয়ে বেড়ায়,লোকে তার নাম কাশেম আলীর সাথে যুক্ত করেছে (বয়াতী)।এলাকায় কাশেম বয়াতী নামেই বেশ পরিচিত কাশেম আলী।

ঝড়,রোদ,বৃষ্টি, কন কনে শীত উপেক্ষা করেই বিভিন্ন হাট-বাজারে সাইকেল চালিয়ে গান গেয়ে বেড়াতেন তিনি বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে মানুষ আর হাটে-বাজারে লোক গান শুনতে ইচ্ছুক নয়,গান শুনে টাকাও দেয় না। তাই তিনি বেছে নিয়েছেন অন্য পথ। এখন হাট- বাজারে দোতারা নিয়ে গান গায় আর সেই গান শুনতে এসে অনেকে নিচ্ছে হাস-মুরগির ঔষধ। কেউ বা নিচ্ছে কৃমির ঔষধ, দাঁত মাজার পাউডার,দাউদ ও চুলকানি-খোশ পাচরার মলম ইদুর, তেলাপোকা মারা সহ বিভিন্ন পাউডার ঔষধ বিক্রি করছেন তিনি।

রবিবার ৩ জানুয়ারী সন্ধ্যায় কালীগঞ্জ উপজেলার শান্তিগঞ্জ হাটে দেখাযায় তার মলম ও ঔষধ বিক্রির চিত্র। দোতারার সুর শুনে দলবেধে ছুটে আসছে মানুষ! কিনছে মলম ও পোকা মারার ওষধ। কাশেম আলী(বয়াতি) লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা চাঁপারতল এলাকার বাসিন্দা। বয়সের ভারে একটু বেড়াতে সমস্যা হলেও দমে যাননি কাশেম বয়াতী। একটু ভালো বোধ করলেই সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন।

স্থানীয় যুবক ইদ্রিস আলী(৪৬)জানান,আমার জ্ঞান হয়েছে থেকে দেখি কাশেম চাচাকে ঔষধ বিক্রি করতে। তার দুই ছেলে একজন রিক্সা চালায়,আর একজন অন্যের বাড়িতে কাজ করে। তার সংসারে অসচ্ছলতা থাকায় এভাবে সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন প্রতিদিন।হাট-বাজার ঘুরে যা বিক্রি করে তা দিয়ে সংসার চলে কোন রকম।তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান করেন। তার গান শুনে উৎসুক জনতা ভিড় জমায়। কাশেম আলী জানান, আগে বিভিন্ন যায়গায় গান গেয়ে বেড়াতাম এখন বয়স বেড়ে গেছে তাই লোকে আর গান শুনে না। এখন বিভিন্ন হাট-বাজারে গিয়ে গান গেয়ে মলম ও বিভিন্ন রোগের ঔষধ বিক্রি করি। আশপাশের বাসিন্দাদের কাছেও বিক্রি করি।এসব বিক্রি করে যে টাকা পাই তা দিয়ে কোন রকম সংসার চলে।

কাশেম বয়াতি আরো বলেন, প্রতিদিন ১৮/২০ কিলো রাস্তা সাইকেল চালিয়ে উপজেলা ও জেলা সহরবে বিভিন্ন  হাট-বাজারে গান গেয়ে,ঔষধ বিক্রি করে যা উপার্জন করে, তা দিয়ে সংসার ভালো চলে না।বাড়িতে বসে না থেকে বেড়িয়ে পরি হাট-বাজারে। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত সময় কাটিয়ে বাড়িতে ফিরি! বাড়ি ফিরতে কোন দিন রাত ১২টার বেশি সময় লাগে।  বেকার মানুষ এটি আমার পেশা থেকে এখন নেশায় পরিনিত হয়েছে,বাকি জীবনটা এভাবেই কাটিয়ে দিতে চাই।গান মনের খোরাগ যোগায়,আনন্দ দেয়, গান আমার ভালো লাগে।দেশ স্বাধীনের পরে উপজেলায় গান গেয়ে দর্শকের মন মাতিয়ে কয়েক বার পুরস্কিত হয়েছে কাশেম আলী।তার গান গেয়ে ঔষধ বিক্রি পেশা থেকে নেশায় পরিনত হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ