ঠিকাদারি তিন হাতে বদল হওয়া কাজ; পঞ্চগড়ে ভবন নির্মাণের পরেই ছাদ চুয়ে পানি

মো. কামরুল ইসলাম কামু, পঞ্চগড়ঃ 

পঞ্চগড়ে ভবন মেরামত হতে না হতেই ছাদ চুয়ে পানি পড়ছে। সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের একতলা পুরনো ভবনটির সংস্কার কাজ শেষ হতে না হতেই ছাদ চুয়ে পড়ছে পানি। প্রায় ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ভবনটি ব্যবহার উপযোগী করার উদ্যোগ নেয় স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। 

কিন্তু কাজে অনিয়ম হওয়ায় ভবনটি সংস্কার কাজ শেষ হতে না হতেই আবারো ব্যবহারে অযোগ্য হয়ে পড়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার যোগসাজস্যে ঠিকাদার কোন মতে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোর খসে পড়া পলেস্তারা ঢেকে রং করে কাজ শেষ করেছেন। প্রায় ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ হলেও ২ লাখ টাকারও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। 

ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ঝুঁকি নিয়েই অফিস করছেন ওই অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।জানা যায়, হাড়িভাসা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের ভবনটি স্বাধীনতার পরে নির্মিত হয়। ভবনটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ২০১৭ সালের ২৬ নভেম্বর হঠাৎ ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে ওই অফিসের এক কর্মচারীর টেবিলে। সামনে রোগীও ছিলেন। এরপর ওই ভবনে অফিস করতে আপত্তি জানায় কর্মকর্তা কর্মচারীরা। 

কয়েকদিনের মধ্যে অফিসটি হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদে স্থানান্তর করা হয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ওই ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নতুন একটি ভবন নির্মাণের আবেদন করেন। কিন্তু বরাদ্দ আসে ভবনটি সংস্কারের। প্রায় ৮ লাখ টাকা বরাদ্দে কাজটি পায় বগুড়ার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স রুপম এন্টার প্রাইজ। কিন্তু তারা নিজে কাজ না করে দিনাজপুরের এক ঠিকাদারকে কাজটি দেন। 

দিনাজপুরের ঠিকাদারের হাত বদল হয়ে চুক্তিতে কাজটি করেন পঞ্চগড়ের ঠিকাদার এটিএম কামরুজ্জামান শাহানশা। ২০১৯ সালের ২০ মে কাজ থেকে কাজ শুরু করে ঠিকাদার। খুড়িয়ে খুড়িয়ে বছর জুড়ে কাজ করতে থাকেন ওই ঠিকাদার।

চলতি বছরের আগস্টে কোন মতে ওই ভবনের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে খসে পড়া পলেস্তারা কোন মতে ঢেকে দিয়ে রঙ করেই কাজ শেষ করেন ঠিকাদার। তবে ভবনটি এখনো হস্তান্তর হয়নি। হস্তান্তর না হলেও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাদের অফিস সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করায় ভবনটিতে আবারো অফিস করা শুরু করেন কর্মীরা। 

কাজ শেষ হতে না হতে আবারো আগের মতো ছাদ চুয়ে পানি পড়ছে ভবনটি প্রতিটি কক্ষেই। বৃষ্টি হলেই মেঝেতে জমছে পানি। টেবিল, চেয়ার, আলমারি সব পানিতে ভিজে থাকছে। নষ্ট হওয়ার ভয়ে কাগজপত্র ও ওষুধ পলেথিন দিয়ে ঢেলে রাখা হয়েছে। ছাদে কোন কাজই করা হয়নি বলে অভিযোগ করেন ওই অফিসের কর্মীরা। তাই ভবনটি ঝুঁকি রয়েই গেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ এই সংস্কার কাজে ওই অফিসের কোন লাভ না হলেও ঠিকাদার ও স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা পকেট ঠিকই ভরেছে।এ বিষয়ে তথ্য চাইতে গেলে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর পঞ্চগড়ের উপসহকারী প্রকৌশলী রেশমা আক্তার রুনু উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তথ্য দিতে রাজি হননি। 

পরে তথ্য অধিকারের ফরমে তথ্য চাওয়া হয়। কিন্তু দুই মাসেও তথ্য দেন নি ওই কর্মকর্তা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পঞ্চগড়ের স্থানীয় হওয়ায় ওই নারী কর্মকর্তা বাড়ি থেকেই অফিসের কাজকর্ম চালাতেন। সপ্তাহে দুএকদিন কেবল অফিসে দেখা যেত তাকে। অনিয়মের অভিযোগ উঠার পর সম্প্রতি তিনি বদলি নিয়ে অন্যত্র সটকে পড়েছেন।  

হাড়িভাসা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক রাশেদুল ইসলাম রাসেল বলেন, ভবনটির সব কাজ শেষ। রঙ করে দিয়েছে। কিন্তু কিভাবে কি কাজ করলো বুঝতে পারলাম না ছাদ চুয়ে পানি পড়ছে। মেঝেতে পানি জমে থাকছে। চেয়ার টেবিলসহ সবকিছু পানিতে ভিজে যাচ্ছে। সংস্কারের পরও অফিস করার মতো অবস্থায় নেই ভবনটি। 

আমরা অফিসে ঢুকলেই আতঙ্কের মধ্যে থাকি।ওই অফিসের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ইয়াসমিন সুলতানা বলেন, ডর ভয় নিয়েই আমরা অফিস করছি। ছাদ চুয়ে পানি পড়ে বলে ওষুধ পত্র পলেথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হচ্ছে। এর আগে ছাদের পলেস্তারা খসে টেবিলের উপর পড়েছে। অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন আমাদের এক সহকর্মী। 

এমন দুর্ঘটনা যদি আবার হয় তার দায় কে নিবে?হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইয়েদ নূর-ই-আলম বলেন, ভবনটি দীর্ঘদিনের ভবন। এটি ভেঙে নতুন করে ভবন নির্মাণের প্রয়োজন। কিন্তু করা হয়েছে সংস্কার কাজ। কোন মতে তারা খসে পড়া পলেস্তারা ঢেকে দিয়েই কাজ করেছেন। কাজে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। তারা তেমন কোন কাজই করেনি। ছাদে তো কোন কাজই করেনি। 

মাত্র এক দু লাখ টাকার কাজ করে বাকি টাকা ভাগবাটোয়ারা হয়েছে। বৃষ্টি হলেই ছাদ চুয়ে পানি পড়ছে। যে কোন সময় ভবনটি ভেঙে পড়তে পারে। ভবনটির সংস্কার কাজের অনিয়মের বিষয়টি তদন্ত করার দাবি জানান তিনি। 

পঞ্চগড় সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাবিহা কবীর বলেন, সংস্কারের পর ভবনটি এখনো হস্তান্তর হয়নি। তার আগেই ছাদ চুয়ে পানি পড়ছে। সংস্কার কাজ করে কোন লাভই হয়নি। সেখানে এখন যা অবস্থা তা অফিস করার মতো অবস্থায় নেই। 

বিষয়টি আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর পঞ্চগড়ের উপসহকারী প্রকৌশলী রেশমা আক্তার রুনু অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এমনটি হওয়ার কথা না। কাজটি এখনো হস্তান্তর হয়নি। ছাদ চুয়ে পানি পড়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। 

এমনটি হয়ে  এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান।এ বিষয়ে চুক্তিভিত্তিক ঠিকাদার এটিএম কামরুজ্জামান শাহানশাহ বলেন, । যে বৃষ্টি হয়েছে  সে কারনে এ অবস্থা’

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ