অবসর গ্রহনের ২০ বছর; এখনো পেনশন সুবিধা পাননি-অবসরপ্রাপ্ত মাইনউদ্দীন

মো. কামরুল ইসলাম কামু পঞ্চগড়ঃ 

২০ বছর আগে অবসর গ্রহণের পরও এখন পর্যন্ত পেনশন সুবিধা পাননি পঞ্চগড় পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী পাম্প চালক মাইনউদ্দীন আহম্মেদ।চাকুরী করেছেন ৩৩ বছর পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠাকুরগাঁও পওর সার্কেলের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর ভুলের মাসুল দিতে গিয়ে যথাসময়ে চাকুরী স্থায়ীকরণ না হওয়ায় তিনি এখনও পেনশন সুবিধা থেকে বঞ্চিত। 

পেনশন পাওয়ার জন্য তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান কার্যালয়, দুদক, মানবাধিকার কমিশনসহ বিভিন্ন জায়গায় আবেদন নিবেদন করেও কোন ফল পাননি। বর্তমানে তিনি পঞ্চগড় জেলা শহরের মিঠাপুকুর এলাকায় এখনও সরকারি জরাজীর্ণ বাসায় পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। তিনি মৃত্যুর আগে পেনশন সুবিধা পাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। 

লিখিত আবেদনে জানা যায়, স্বাধীনতার আগে ১৯৬৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মাইনউদ্দীন আহম্মেদ বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী পাম্প চালক (অনিয়মিত) হিসেবে চাকুরীতে যোগদান করেন। এরপর ১৯৮০ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠাকুরগাঁও পওর সার্কেল হতে কর্মরত সকল অনিয়মিত পাম্প চালক ও সহকারী পাম্প চালককে নিয়মিত করা হলেও ওই তালিকায় ভুল বশত তার নাম বাদ পড়ে যায়। 

এ নিয়ে ওই কর্মচারী পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মচারী পরিদপ্তরে আবেদন করেন। তাকে কি কারণে নিয়মিত করা হয়নি এ নিয়ে বিস্তারিত বিবরণ ৭ দিনের মধ্যে দাখিলের জন্য কর্মচারী পরিদপ্তরের উপ পরিচালক ২০/০৪/১৯৯৯ তারিখে পাউবো’র ঠাকুরগাঁও পওর সার্কেলের তত্ত্ববধায়ক প্রকৌশলীকে চিঠি দেন। ওই চিঠির প্রেক্ষিতে ঠাকুরগাঁও পওর সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ২৭ জুলাই ১৯৯৯ কর্মচারী পরিদপ্তরের পরিচালককে দেয়া এক চিঠিতে বলেন, ১৯৮০ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অনিয়মিত কর্মচারীকে আত্মীকরণের জন্য দেয়া তালিকা থেকে ভুলক্রমে ওই কর্মচারীর নাম বাদ পড়ে। 

ওই চিঠিতে তিনি ওই কর্মচারীকে ০১/০৩/১৯৬৯ তারিখ হতে নিয়মিত করার সুপারিশ করেন। এই চিঠির আলোকে কর্মচারী পরিদপ্তরের পরিচালক ২৬/০৭/২০০০ তারিখে এক আদেশের মাধ্যমে তাকে ০১/০৩/১৯৬৯ তারিখ হতে নিয়মিত করে দপ্তরাদেশ দেন। এরপর ১০/০৩/২০০০ তারিখে তাকে চাকুরী হকে পূর্ণ অবসর প্রদান করা হয়। পূর্ণ অবসরের পূর্বে তাকে ০১/১১/১৯৯৮ তারিখে নিয়মিত পদে আত্মীকরণ দেখিয়ে চাকুরীর মেয়াদ এক বছর চার মাস দশ দিন হিসেব করে পেনশনের পরিবর্তে গ্র্যাচুইটি হিসেবে এক লাখ ৬৬ হাজার ৭২০ টাকা প্রদান করা হয়। 

তিনি পেনশনের পরিবর্তে গ্র্যাচুইটি প্রদানের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে ০৪/০৪/২০০৭ তারিখে পঞ্চগড় সেনা ক্যাম্পের অধিনায়ক বরাবরে আবেদন করলে সেনা ক্যাম্প কর্তৃক ওই আবেদন বাপাউবোর হিসাব রক্ষণ পরিদপ্তরের পরিচালক বরাবরে পাঠানো হয়। ওই আবেদনের পর বাপাউবো’র হিসাব রক্ষণ পরিদপ্তর থেকে তাকে জানানো হয় ওই অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীর গ্র্যাচুইটির পরিবর্তে তাকে পেনশন প্রদানের সুযোগ নাই। 

সর্বশেষ তিনি ০৪/০৭/২০১৯ তারিখে দুর্নীতি দমন কমিশন দিনাজপুর জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের উদ্যোগে পঞ্চগড়ে অনুষ্ঠিত দুর্নীতি বিরোধী গণশুনানীতে পুনরায় আবেদন করেন। গণশুনানীতে তিনি সমসাময়িক ৭ জন সেচ পরিদর্শক নিয়মিত পেনশন পেলেও তিনি পেনশন হতে বঞ্চিত হয়েছেন মর্মে আবেদন পুনঃবিবেচনা করার আবেদন করেন। 

উক্ত গণশুনানীতে দুদক কমিশনার পাউবো’র পঞ্চগড় পওর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে এ ব্যাপারে পদক্ষেণ গ্রহণ ও কমিশনকে অবহিত করার নির্দেশ প্রদান করেন। এই নির্দেশের আলোকে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী ১৯/০৮/২০১৯ এবং ১৮/০২/২০২০ তারিখে পর পর দুইবার অবসরপ্রাপ্ত সহকারী পাম্প চালক মাইনউদ্দীন পেনশন পাওয়ার যোগ্য কিনা তা জানার জন্য বাপাউবো’র কর্মচারী পরিদপ্তরের পরিচালক বরাবরে একটি চিঠি দেন। 

কিন্তু সেই চিঠির জবাব এখনও আসেনি।   অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী মাইনউদ্দীন আহম্মেদ বলেন, একজন কর্মকর্তার ভুলের জন্য আমাকে পেনশন থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এই ভুলের দায় তো আমার না। ৩৩ বছর চাকুরী করে আমি ২০ বছর আগে অবসরে গেলেও এখন পর্যন্ত পেনশন সুবিধা না পেয়ে মানবেতভাবে দিন কাটাচ্ছি। টাকার অভাবে বাইরে কোথাও বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে পারছি না। স্ত্রী সন্তান নিয়ে জরাজীর্ণ সরকারি বাসায় পড়ে আছি। 

বর্তমানে আমার বয়স প্রায় ৮০ বছর। প্রধানমন্ত্র্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করে তিনি বলেন, আমি যেন মৃত্যুর আগে পেনশন সুবিধা পাই।  এ ব্যাপারে পঞ্চগড় পানি উন্œয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুর রহমান জানান, আমি পঞ্চগড়ে নতুন যোগদান করেছি। বিষয়টি আমার জানা নেই। ওই লোক আমার কাছে এসে বিস্তারিত জানালে আমি বিষয়টি অবগত হয়ে পরবর্তি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবো।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ