নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষন করলো প্রভাষক


মো. সাদিক-উর রহমান শাহ্ (স্কলার) রংপুর ব্যুরোঃ

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার নয়ানখাল স্কুল এ্যান্ড কলেজের ইংরেজী বিষয়ের প্রভাষক সৈয়দ পাপলু মিয়ার (৩২) বিরুদ্ধে উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক ছাত্রীকে ধর্ষনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবা বৃহস্পতিবার  রংপুর জেলার তারাগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেছে।

তারাগঞ্জ থানার ওসি ইসমাইল হোসেন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মামলার একমাত্র আসামী প্রভাষক সৈয়দ পাপলু মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি জানান, উক্ত প্রভাষককে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার চতরা ইউনিয়নের কাঁটাদুয়ার গ্রামের নিজবাড়ি হতে গ্রেফতার করে নিয়ে আসা হয়। উক্ত প্রভাষক উক্ত গ্রামের সৈয়দ আব্দুর রশিদের ছেলে।

মামলা সূত্র ও ছাত্রীর পরিবারের অভিযোগ মতে, উক্ত প্রভাষক নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার বাহাগিলি ইউনিয়নের নয়ানখাল স্কুল এ্যান্ড কলেজের ইংরেজি বিষয়ের প্রভাষক। তিনি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন কলেজ সংলগ্ন রংপুর জেলার তারাগঞ্জ উপজেলার থানাপাড়া এলাকায়। ছাত্রীটি কিশোরগঞ্জ উপজেলার বাহাগিলি ইউনিয়নের উত্তরপাড়ার বাসিন্দা ও উক্ত কলেজের এইচ.এস.সি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।

করোনাকালিন সময়ের আগে কলেজ চলাকালিন প্রভাষক পাপলু মিয়া মেয়েটিকে ডেকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। মেয়েটি তার অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলতে বলে প্রভাষককে। এ অবস্থায় প্রভাষক মেয়েটির সঙ্গে মোবাইলে নিয়মিত কথা বলতেন ও প্রেমের সর্ম্পক গড়ে তুলেন। 

করোনাকালিন সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে প্রভাষক মেয়েটির বাবার কাছে বিয়ে প্রস্তাব দেয়। মেয়ের বাবা প্রভাষককে তার অভিভাবকদের নিয়ে আসতে বলেন। এ অবস্থায় প্রভাষক মেয়েটিকে প্রাইভেট পড়ার জন্য তার ভাড়া বাসায় নিয়মিত আসতে বলেন। 

কলেজ বন্ধ থাকায় মেয়েটি অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গিয়ে প্রাইভেট পড়তো ওই প্রভাষকের নিকট। এ অবস্থায়  ৫মে সকাল ১১টায় মেয়েটি অন্যান্য দিনের মতো প্রাইভেট পড়তে গেলে প্রভাষকের বাসায় গিয়ে দেখে সে ছাড়া আর কোন শিক্ষার্থী প্রাইভেট পড়তে আসেনি। 

এ সময় প্রভাষক তাকে অচিরেই বিয়ে করবে বলে জড়িয়ে ধরে ও ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষন করে। এ অবস্থায় মেয়েটি ঘটনাটি তার অভিভাবকদের অবগত করলে প্রভাষককে তারা দ্রুত বিয়ে করার জন্য অনুরোধ করেন। করোনা সংকট স্বাভাবিক হলে বিয়ে করবে বলে সময় পাড় করতে থাকেন প্রভাষক। 

এমন অবস্থায় প্রভাষক হঠাৎ করে ভাড়া বাসা ছেড়ে দিয়ে তার নিজ বাড়ি পীরগঞ্জে চলে গিয়ে মেয়েটির সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। বিষয়টি মেয়ের পরিবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও ম্যানেজিং কমিটিকে অবগত করলে তারা উল্টো ঘটনা মিথ্যে বলে মেয়ের পরিবারকে কোন সহযোগীতা করেনি বলে মেয়েটি অভিযোগ করেন। 

এমনকি বিভিন্ন প্রভাবশালীদের হুমকী ধমকিতে তারা মামলা করার সাহস পায়নি এতোদিন বলে জানায়। মেয়ের বাবা জানান, সকল হুমকী ভয় ভীতি পেছনে রেখে গতকাল বুধবার (১৪ অক্টোবর/২০২০) সন্ধ্যায় মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে মামলা করার জন্য কিশোরগঞ্জ থানায় যাই। পুলিশ সকল ঘটনা শুনে রাতে সেখানে একটি জিডি দায়ের করেন এবং ধর্ষনের ঘটনাটি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলা এলাকায় হওয়ায় তারাগঞ্জ থানায় যোগাযোগ করে আমাদের সেখানে পৌছে দেয়া হয়। 

এরপর তারাগঞ্জ থানায় মামলা দেই। মেয়ের বাবা আরো বলেন, তারাগঞ্জ থানার ওসি ওই রাতেই পুলিশ ফোর্স নিয়ে ধর্ষককে ধরতে তার গ্রামে অভিযান চালায় ও আজ বৃহস্পতিবার ভোরে ধর্ষক প্রভাষককে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে।নির্যাতিতা ছাত্রীর বাবা আরো বলেন, বিয়ের আশ্বাস দিয়ে প্রভাষক আমার মেয়ের ইজ্জত নষ্ট করেছে আমি তার উপযুক্ত বিচার চাই। 

তারাগঞ্জ থানার ওসি ইসমাইল হোসেন বলেন, ধর্ষণের অভিযোগে প্রভাষক সৈয়দ পাপলু মিয়ার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের  ৯(১) মামলা রুজু করা হয়েছে (মামলা নম্বর ৮ তারিখ ১৫/১০/২০২০) । ভিকটিমের ডাক্তারি পরিক্ষার জন্য আদালতের মাধ্যমে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি গ্রেফতারকৃত আসামীকেও আদালতে প্রেরন করা হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ