মোসলেম উদ্দিন, হিলি স্থলবন্দর প্রতিনিধিঃ
দিনাজপুরের হিলির রোস্তমপুরের শাহাবুদ্দিন ও তার ঘোড়া লালমনি এখনও ধরে আছে পুরনো ঐতিহ্য। আবার ঘোড়া লালমনিই তার উপার্জনের এক মাত্র অবলম্বন। প্রায় ৫০ বছর বয়স শাহাবুদ্দিনের। দুই ছেলে আর এক মেয়ে। বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলেরা এখনও সংসারের হাল ধরতে পারেনি। আবাদি জমি নেই তার।
২০ বছর আগে শখের বশে একটা ঘোড়া সে কিনে। তখন থেকেই শাহাবুদ্দিন ঘোড়ার ওপর চেপে নানান ব্যবসা-বাণিজ্য করে আসছে। এখন তার বয়স হয়ে গেছে, তিনি আর লাফ দিয়ে ঘোড়ায় চড়তে পারে না। তাই বর্তমান ঠেলা গাড়ি বানিয়ে ঘোড়ার সাথে লাগিয়ে, তাতে বসে বিভিন্ন হাট-বাজারে ঘুরে কলার ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
প্রথম জীবনে তিনি নিজেকে সিনেমার নায়ক মনে করে একটি ঘোড়া ক্রয় করে ছিলেন। তখন থেকেই তার ঘোড়া দিয়ে পথ চলা শুরু। আজ শরীরে তেমন আর জোর নেই। তবে বর্তমান যুগে এতো আধুনিক যানবাহন তৈরি হয়েছে, তবু তিনি এই ঘোড়ার গাড়ি ছাড়া অন্য কোন যানবাহনে যাত্রা করেননি।
কালের বিবর্তনে আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় পুরনো ঐতিহ্য গুলো আজ বিলুপ্তের পথে। যান্ত্রিক যানবাহন আবিষ্কারের ফলে পুরাতন প্রচলিত যানবাহন আর চলে না। এক সময় এই ঘোড়ার টমটম ছিলো মানুষের যাতায়াতের মাধ্যম। আবার রাজা-বাদশারা এবং তাদের সৈন্যরা ঘোড়ায় চড়ে রাজ্য শাসন করতো। দেখা গেছে আগের সিনেমাতে নায়করা ঘোড়ার পিঠে চড়ে সুদর্শন হয়ে অভিনয় করতে। যুদ্ধক্ষেত্রে ঘোড়া ছিলো সৈনিকদের বড় একটা হাতিয়ার। দূর-দূরান্ত পথ পাড়ি দিতো এই ঘোড়ার ওপর বসে।
আজ অত্যাধুনিক গাড়ি-ঘোড়া তৈরির ফলে এইসব পশুদের প্রচলন পচে গেছে। এখন মানুষ সেকেন্ড আর মিনিটে অনেক দুর চলে যেতে পারে। ঘোড়ার পরিবর্তে সাইকেল, অটোভ্যান, অটোবাইক, সিএনজি, মোটরসাইকেল, বাস, ট্রেন ও উড়োজাহাজ ব্যবহার করে আসছে মানুষ ।
আজ মঙ্গলবার (২৭অক্টবর) সকালে কথা হয় শাহাবুদ্দিনের সাথে তিনি বলেন, আমার এই লালমনি (ঘোড়া) চলার পথের একমাত্র সঙ্গী। তাকে ছাড়া আমি এক পা চলতে পারি না। প্রায় ১৮ থেকে ২০ বছর যাবৎ আমি ঘোড়া ব্যবহার করে আসছি। অনেক আদর আর ভালবাসা দিয়ে এর নাম রেখেছি লালমনি। গোটা শরীরে লাল রঙের লোম দিয়ে ঢাকা তাই তার নাম দিয়েছি লালমনি। লাল মনিকে লালন-পালন করতে আমার তেমন কোন কষ্ট বা ব্যয় হয় না। তাকে যা দেয় তাই খেয়ে ফেলে।
লালমনিকে সেই ছোটটি কিনে ছিলাম, আজ সে অনেক বড় হয়ে গেছে। সে আমার জন্য অনেক কষ্ট করে। যখন যা বলি, তখন সে তাই শোনে। তাকে বেশি ভাল-মন্দ খাওয়াতে পারি না। মাঠে-ঘাটে যেখানে বেঁধে দেয় সেখানে লালমনি ঘাস খেয়ে পেট ভরায়। দিন দিন আমার শরীর অকেজো আর শক্তি কমে আসছে, কিন্তু সেই ছোট লালমনি বড় হচ্ছে আর শক্তিশালী হয়ে উঠছে। তবে আজ আমার শরীরে জোর না থাকলেও লালমনির গায়ের শক্তিতে প্রতিটি পথ পাড়ি দিচ্ছি।
0 মন্তব্য