অটো মিলারদের বিরুদ্ধে কারসাজির অভিযোগ


মিজানুর রহমান মিলনঃ
 

পেঁয়াজের বাজারে দামের অস্থিরতা কাটতে না কাটতেই সৈয়দপুরে চালের বাজার উর্ধ্বমুখী হয়েছে। মাত্র ৭ দিনের ব্যবধানে পাইকারী ও খুচরা পর্যায়ে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে অস্বাভাবিক হারে। পাইকারী বাজারে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা চালের দাম বেড়েছে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা। একই সঙ্গে খুচরা পর্যায়ে কেজি প্রতি বিভিন্ন  চালের দর বেড়েছে ৩ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত। 

এর মধ্যে স্বর্ণা জাতের মোটা চাল বাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে। এতে বেশী দামে অন্যান্য জাতের সরু চাল কিনতে বাধ্য হচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা। চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন বাজারে সরু চালের ওপর চাপ বেড়ে যাওয়ায় দাম নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ আয়ের শ্রমজীবী মানুষ। গতকাল বৃহস্পতিবার ও আজ শুক্রবার সরেজমিনে শহরের পাইকারি ও খুচরা চাল মার্কেটে দেখা যায়, সাধারণ মানুষের বেশী চাহিদার স্বর্ণা চাল তেমন একটা পাওয়া যাচ্ছে না। 

বলা যায় স্বর্ণা চাল বাজার থেকে হঠাৎ করে উধাও হয়ে গেছে। বাজারে স্বর্ণা চাল না পেয়ে তারা সরু চাল কিনছেন। পাইকারী বাজারে ৫০কেজির প্রতি বস্তা স্বর্ণা চাল ২১০০ টাকায় উঠলেও তা পাওয়া যাচ্ছে না। চালের পাইকারী বাজারে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা চালের দাম বেড়েছে ১৫০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে বাজারে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা ২৩৫০ টাকার মিনিকেট ২৬০০ টাকায়, বিআর ২৯  চাল প্রতি বস্তা ২১৩০ টাকার স্থলে ২৩০০ টাকায়, বিআর ২৮ চাল প্রতি বস্তা ২২৫০ টাকার স্থলে ২৫০০ টাকায়, পাইজাম চাল প্রতি বস্তা ২১৫০ টাকার স্থলে ২৩০০ টাকায় এবং বাসমতি চাল প্রতি বস্তা ২৬০০ টাকার স্থলে ২৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পাইজাম চাল ৪৬ টাকার স্থলে ৪৯/৫০ টাকায়, বাসমতি প্রতি কেজি ৫৭ টাকার স্থলে ৬০ টাকায়, বিআর ২৯ চাল ৪৬ টাকার স্থলে ৪৯/৫০ টাকায়, বিআর ২৮ চাল ৫০ টাকার স্থলে ৫৩/৫৪ টাকায় ও মিনিকেট চাল ৫২ টাকার স্থলে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চালের উর্ধ্বমুখী দামে উদ্বেগ বেড়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। 

বাজারে চাল কিনতে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরিজীবী খালিদ হোসেন আরমান বলেন, আমরা কম আয়ের মানুষ। পেঁয়াজের সঙ্গে চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কষ্টে চলছে সংসার। প্রশাসন বাজার মনিটরিং না করার কারণে পেঁয়াজের মত দফায় দফায় বাড়ছে চালের দাম। তিনি দাম নিয়ন্ত্রণে বাজার মনিটরিং করতে প্রশাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করার দাবি জানান।

এদিকে চালের খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, চালের বাজারে সিন্ডিকেট ভর করেছে। বড় পাইকারী ব্যাবসায়ীরা দর নিয়ন্ত্রণ করায় চালের বাজারে দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে। পাইকারী বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে খুচরা বাজারে কেজিতে ৩/৪ টাকা দাম বেড়ে গেছে।

এ ব্যাপারে চালকল মালিক ও পাইকারী চাল ব্যবসায়ী রেজাউল ইসলাম রেজু জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে ফলন কম হওয়ায় হাটে-বাজারে ধানের পর্যাপ্ত আমদানি নেই। চড়ামূল্যে ধান বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে হাটে ৭৫ কেজির প্রতি বস্তা ধান ১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ধানের দাম বৃদ্ধির প্রভাবে চালের বাজার উর্ধ্বমুখী হয়েছে। 

এছাড়াও চালের বাজার বড় বড় অটোমিল মালিকদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ায় দাম তারাই নিয়ন্ত্রণ করছে। চালের দাম বৃদ্ধির পিছনে অটো মিলারদের কারসাজি রয়েছে বলে অভিযোগ করেন। আগে স্থানীয় পর্যায়ে হাসকিং চালু থাকার কারণে চালের বাজার মূল্য প্রতিযোগিতাপূর্ণ ছিল। বর্তমানে অটো চাল কলের দাপটে হাসকিং মিলগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে চালের বাজারে একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়েছে বড় বড় অটো মিলগুলোর। 

ফলে চালের দর বৃদ্ধি এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। তবে অন্য একটি সুত্রের দাবি বাজার দরের চাইতে চালের সরকারি দর কম হলেও চুক্তি ঠিক রাখতে সরকারি খাদ্য গুদামে অটো মিল মালিকরা চাল দিয়েছে। এতে তারা অার্থিক ক্ষতি হয়েছে। ফলে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তারা সিন্ডিকেট করে চালের বাজার নিয়ন্ত্রন করছেন।

তবে অটো মিল মালিকরা এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তারা বলছেন করোনা পরিস্থিতি ও অব্যাহত বর্ষণের কারণে হাট বাজারে ধানের আমদানি কম হচ্ছে। আবার ধান মিললেও মূল্য অনেক বেশী। ফলে বাড়তি দামে ধান কেনাসহ উৎপাদনে খরচ বেশী হওয়ায় দাম একটু বেড়েছে। ধানের বাজার স্বাভাবিক হলে চালের দাম কমে আসবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ