বিলুপ্ত ছিটমহলের নাম দিয়েছেন রাজমহল

মোঃ কামরুল ইসলাম কামু পঞ্চগড়ঃ 
ছিটমহল বিনিময়ের হওয়ার আগে পঞ্চগড় সদর উপজেলার বিলুপ্ত গাড়াতি ছিটমহলের চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচিত ছিলো মফিজার রহমান। এর বাইরে তার বড় পরিচয় ছিলো ওঝা (কবিরাজ)। পরে ছিটমহল আন্দোলনের নেতৃত্বে গিয়ে রাতারাতি বদলে গেছে তার জীবন চিত্র। যেই মফিজার পুরনো বাই সাইকেলে করে চষে বেড়াতেন দু'চার এলাকা। 

দেখতেন বিভিন্ন রোগী, করতেন তাবিজ, কবজ আর ঝার-ফুঁক। সেই মফিজার এখন দামী মোটরসাইকেলে চড়েন, টিন শেড বাড়ি বদলে করেছেন বড় দালান। ছেড়েছেন পুরনো পেশা ওঝাগিরিও।২০১৫ সালের ৩১ জুলাই ছিটমহল বিনিময়ের পর পঞ্চগড়ের এই ছিটমহলটির নাম দেয়া হয় রাজমহল। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অগ্রগতির জন্য বিলুপ্ত এই ছিটমহলে শুরু হয় উন্নয়ন। 

রাজমহলের উন্নয়নের সাথে সাথে উন্নত হয় মফিজারের জীবন মানও। বিলুপ্ত এই ছিটমহলে এখন রাজত্ব করছেন তিনি। অপকর্ম ঢাকতে মুজিব সেনা ঐক্যলীগ নামের দল গঠন করে হয়েছেন, জেলা কমিটির সভাপতি। তবে এ নামের কোন অঙ্গ সংগঠন নেই বলে জানিয়েছেন, পঞ্চগড় জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার সাদাত সম্রাট। 

জানা গেছে, ছিটমহল বিনিময়ের পরপরই রাজমহলে স্থাপন করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আলীম মাদ্রাসা, রাজমহল উচ্চ বিদ্যালয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল প্রতিবন্ধী স্কুল ও মফিজার রহমান কলেজ নামের চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ক্ষমতাবলে চারটি প্রতিষ্ঠানেরই সভাপতি পদ দখল করে মফিজার করেছেন, কোটি কোটি টাকা নিয়োগ বাণিজ্য। ছিটমহল আন্দোলনে অংশ নেয়া ব্যক্তিদের মুক্তিযোদ্ধা বানানোর আশ্বাস দিয়ে রাজমহলবাসীর কাছে হাতিয়ে নিয়েছেন মোটা অংকের টাকা।

ছিটমহল আন্দোলনে নিজের সক্রিয় ভুমিকা আর বড় ভাই তৎকালিন যুবলীগ নেতা মরহুম মখলেছার রহমানের ছত্রছায়ায় পঞ্চগড় ও নীলফামারী অঞ্চলের ছিটমহল বিনিময় কমিটির সভাপতি পদও দখল করেন তিনি।মফিজারের এই চতুর্মুখী দুর্নীতির বিরুদ্ধে সম্প্রতি মানববন্ধনও করেছেন রাজমহলের স্থায়ী বাসিন্দারা। এর আগে, রাজমহলবাসীর পক্ষে স্থানীয় আফাজ উদ্দীনের ছেলে মমিনুল ইসলাম বিভিন্ন দফতরে অভিযোগও করেছেন তার বিরুদ্ধে।

মমিনুল বলেন, ছিটমহল বিনিময়ের আগে মফিজার ওঝাগিরি করতেন। সম্পৃক্ত ছিলেন, বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সাথে। এরপর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি দল বদল করেন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ান।মমিনুল আরও বলেন, বিলুপ্ত এই ছিটমহলের চার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শতাধিক পদে শিক্ষক-কর্মচারি নিয়োগ দিয়ে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মফিজার।

অভিযোগ রয়েছে, পঞ্চগড় সদর থানার বিলুপ্ত এই ছিটমহলের তিনিই এখন রাজা। ওই ছিটমহলের অধিবাসী কখনই ছিলেন না তিনি। ছিটমহলের বাইরের হয়েও স্কুল-কলেজ এবং মাদ্রাসা সবকিছুরই নিয়ন্ত্রক এই মফিজার। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ছিটমহলে প্রবেশের প্রথমেই পূর্ব বাগানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আলিম মাদ্রাসা। এক একর জমির উপর দাঁড়ানো মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠাতা মফিজার রহমান। আর অধ্যক্ষ তার ভাই মোজাম্মেল। 

যদিও জমির মালিক ছিটমহলের সৈয়দ জামান। ওই মাদ্রাসায় ছিটমহলের বেকার শিক্ষিতদের চাকরি দেয়ার আশ্বাস ও সৈয়দ জামানকে প্রতিষ্ঠাতা করার প্রলোভন দেখিয়ে জমি নিলেও কথা রাখেনি মফিজার। শিক্ষক নিয়োগে ছিটমহলের কাউকেই চাকরি দেওয়া হয়নি। গাড়াতির মূল সড়ক ধরে একটু ভিতরে রাজমহল উচ্চবিদ্যালয়। ওই প্রতিষ্ঠানেরও সভাপতি মফিজার। 

সেখানেও জমি দাতাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। একই অভিযোগ পাওয়া গেছে মফিজার রহমান কলেজ ও প্রতিবন্ধী স্কুল প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও। নিজের নামের কলেজের নিজেই সভাপতি। সেখানেও জমি দাতাদের সঙ্গে ছলনার আশ্রয়ের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীর অভিযোগ, ছিটমহলের অধিবাসী না হয়েও স্থানীয়দের সরলতাকে কাজে লাগিয়ে অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় মফিজার ছিটমহলের চেয়ারম্যান হন। 

এরপর থেকেই তার প্রভাব বাড়তে থাকে। ছিটমহলবাসীদের ব্যবহার করে বনে যান তিনি ছিটমহল স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা। যদিও নিজের স্বার্থকেই তিনি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। এসব বিষয়ে মফিজার রহমানের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি সব অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে বলেন, ছিটমহলের স্থায়ীদের চাকরিতে অগ্রাধিকারের বিষয়টি ভুল। তারপরও আমি ছিটমহলের ৩৮ জনকে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি দিয়েছি। 

আপনি ওঝা ছিলেন? এমন প্রশ্নে মফিজার বলেন, ওঝা না তবে আমি কিছু আমল টামল করি। আমার কাছে তেল, পানি পড়ে নিলে ছোট বাচ্চারা কান্না করেনা এবং রাতে বিছানায় প্রসাব করেনা।‘ এছাড়া তাকে বলা হয় আপনি নাকি ‘অনেক দুর্নীতি করে অঢেল সম্পদ করেছেন ‘ এসব অভিযোগ ভূয়া বলে দাবী করেন ’ মফিজার রহমান’। তার কছে জানতে চাওয়া হয় স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় অবৈধ নিয়োগ দেওয়ায় বিশাল অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন এবং শিক্ষা ভবনে টাকা দিয়ে পরিবেশ নষ্ট করেছেন ‘ বলছেন অনেক শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক সভাপতি/ কর্মচারীগন এতে তিনি বলেন ‘ 

এসবের কোন প্রমাণ আছে’ শিক্ষা ভবনে টাকা দেই কে বললো’। স্থানিয় লোকজন টাকার জন্য এসব মিথ্যা রটনা ছড়াচ্ছে’। এদিকে মুজিব সেনা ঐক্যলীগ নামের সংগঠনের বিষয়ে তিনি জানান, এই সংগঠনের উপদেষ্টা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ