মোঃ কামরুল ইসলাম কামু পঞ্চগড়ঃ
গরীবের আবাসনে প্রভাবশালীর বাড়ি নির্মাণ। পঞ্চগড় সদর উপজেলার পানিমাছপুকুরী আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম। যিনি কোটিপতি হিসেবে এলাকায় পরিচিত। সরকারি আবাসনে তিনি ঘর বরাদ্দ পাওয়ায় স্থানীয়রা অবাক হয়েছিল।
এবার লাগোয়া জমিতে ভবন তোলায় তারা চুপ হয়ে গেছে।সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পানিমাছপুকুরী আশ্রয়ণের পূর্ব পারের প্রথম বাড়িই ওই এলাকার মুক্তিযোদ্ধা গমির উদ্দিনের ছেলে রফিকুল ইসলামের। রফিকুল আশ্রয়ণের বরাদ্দ পাওয়া ঘরগুলো ঘেঁষেই তুলছেন ফ্ল্যাটবাড়ি। দৈর্ঘ্যে ৩৬ ফুট এবং প্রস্থে ৩২ ফুট। কাজও অনেক দূর এগিয়ে গেছে। শুধু ছাদ ঢালাই বাকি।
বাইরে থেকে কেউ যেন বুঝতে না পারে সে জন্য বাঁশের চাটাই দিয়ে উঁচু করে বেড়া দেওয়া হয়েছে। ভেতরে চলছে মিস্ত্রিদের কর্মযজ্ঞ। চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে রফিকুলের পরিবারের লোকজন। বাইরের কেউ আসছে কি না নজর রাখাই তাদের কাজ। একটু উঁচুতে দাঁড়িয়ে লক্ষ করলেই বোঝা যায় জায়গাটি আশ্রয়ণের খাসজমির মধ্যেই রয়েছে।
প্রভাবশালী হওয়ায় রফিকুলের বিরুদ্ধে স্থানীয়রা সরাসরি কথা বলতে রাজি হয়নি।অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে কাজে হাত লাগিয়েছেন ওই ব্যক্তি।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আশ্রয়ণের এক বাসিন্দা বলেন, ‘রফিকুল কোটিপতি মানুষ। তার পরও তাকে আশ্রয়ণে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ঘর পাওয়ার পর এখন কৌশলে ভবন তুলছেন।’
মানিমাছপুখুরী আশ্রয়ণ প্রকল্প সমবায় সমিতির সভাপতি তোফাজ্জল হক বলেন, ‘আমরা জানি ওই জমিটুকু আশ্রয়ণের ভেতরের খাসজমি। কিন্তু এখন রফিকুল হঠাৎ জমিটি তার কেনা দাবি করে ফ্ল্যাট তুলছে। প্রশাসন বিষয়টি জানে। প্রশাসন কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দিলেও ভেতরে ভেতরে কাজ চলছে।
রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার কেনা জমিতেই আমি ফ্ল্যাট তুলছি। এটি খাসজমি নয়। আশ্রয়ণের খাসজমিসংলগ্ন আমি ১৫ শতাংশ জমি কিনেছি। সেই জমিতেই ফ্ল্যাট তুলছি। সদর এসি ল্যান্ড অফিস থেকে আমাকে নোটিশ করেছে। নোটিশ পেয়ে আমরা কাজ বন্ধ রেখেছি।
এ ছাড়া জমিটির সব কাগজপত্র আমি এসি ল্যান্ড অফিসে জমা দিয়েছি।’হাফিজাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মুছা কলিমুল্লা বলেন, ‘তারা গোপনে কাজ শুরু করেছে। আমরা বিষয়টি জানতাম না। যখন অবকাঠামো দৃশ্যমান হয়েছে তখন আমরা জেনেছি। প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। জমি যেহেতু সরকারের তাই বিষয়টি প্রশাসনই দেখবে।’
পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ হোসেন বলেন, খাসজমির ওপর ওই ফ্ল্যাটটি নির্মিত হচ্ছে। সেটি উচ্ছেদের জন্য অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করা হয়েছে। নির্দেশনা পেলে সেটি উচ্ছেদ করা হবে।অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আব্দুল মান্নান বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই ব্যক্তিকে দু-এক দিনের মধ্যেই আরেকটি নোটিশ করব। সে নিজে থেকে সরে না গেলে আমরা আইনি প্রক্রিয়ায় তাকে উচ্ছেদ করবো।
0 মন্তব্যসমূহ