সৈয়দপুরে দুই সন্তানসহ অসহায় বিধবা নিজ বাড়িতে যেতে পারছেন না

মিজানুর রহমান মিলন, স্টাফ রিপোর্টারঃ
নীলফামারীর সৈয়দপুরে এক উচ্ছৃঙ্খল প্রতিবেশির বিরুদ্ধে  বিধবা কাওসারী বেগমের (৪২)বাড়িতে যাওয়ার রাস্তা দখলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়,ওই অসহায় বিধবাকে তাঁর বাড়িতেও যেতে দিচ্ছেনা। বাড়ি ছাড়া করতে দেওয়া হচ্ছে নানা রকম হুমকি। 

এনিয়ে সৈয়দপুর পৌরসভাসহ বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করেও বিধবা তাঁর বাড়িতে যাওয়ার রাস্তার জায়গার কোন সুরাহা করতে পারেননি । এ অবস্থায় নিরুপায় হয়ে অসহায় বিধবা কাওসারী বেগম (৪২) দুই প্রতিবন্ধী পুত্রকে নিয়ে একই এলাকায় আরেক প্রতিবেশির বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। 

অভিযোগে জানা গেছে, সৈয়দপুর শহরের নতুন বাবুপাড়া মহল্লার শহীদ বি-জামান রোডের বাসিন্দা কাওসারী বেগম। এক সময় তাঁর সংসারে সুখ শান্তি সবই ছিল। তাঁর স্বামী সমসের খাঁন ছিলেন নির্মাণ শ্রমিক। গত ২০০৬ সালের ২৪ মে তাঁর স্বামী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মৃত্যুকালে স্ত্রী, 

অবুঝ দুই শিশু পুত্র এবং  মাত্র ২ শতক জমির ওপর বাড়িঘর রেখে যান। মৃত্যুর সময় তাঁর বড় ছেলে রেজা ও ছোট ছেলে রিয়াজের বয়স ছিল যথাক্রমে চার এবং দুই বছর। স্বামীর মৃত্যুর পর দুই ছেলে সন্তানকে নিয়ে বিধবা কাওসারী বেগম দিশেহারা হয়ে পড়েন। 

তাঁরপরও অন্যের বাড়িতে কাজকর্ম করে কোন রকমে সংসার চালিয়ে আসছিলেন তিনি। এ সময় একটি মহলের পরামর্শে সংসারের অভাব অনটন মেটাতে খৃষ্টান ধর্ম গ্রহণ করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কিন্তু পরিবারটি ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে খৃষ্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত  হওয়ার বিয়ষটি জানতে পারেন প্রতিবেশি রেলওয়ে কর্মচারী আলহাজ্ব মো. আজগর আলী ও শিক্ষিকা হাসনা হেনা দম্পতি। 

সংসারে অভাব  অনটন মেটাতে একটি পরিবার ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে অন্য ধর্মে যাবেন বলে বিষয়টি তারা মেনে নিতে পারেননি। এ অবস্থায় একটি পরিবারকে ধর্মান্তরিত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে বিধবা কাওসারী বেগম ও তাঁর  দুই ছেলেকে আশ্রয় দেয়া, ভরণ পোষণসহ সকল দায়িত্বভার আইনী প্রক্রিয়ায় গ্রহণ করেন ওই দম্পত্তি। এরপর থেকে দুই ছেলে সন্তান নিয়ে বেশ ভালোভাবেই দিন কাটছিল বিধবা কাওসারী রেগমের। 

প্রতিবেশি রেলওয়ে কর্মচারী আলহাজ্ব মো. আজগর আলী ও  শিক্ষিকা হাসনা হেনা দম্পতির সহযোগিতায় বিধবার দুই ছেলে কিছুটা লেখাপড়াও  করছিল। কিন্তু গত বছরের ৮ মার্চ বিধবা কাওসারী বেগমের সংসার জীবনে আরেকটি দূর্ঘটনা ঘটে। বাড়িতে আগুন লেগে তাঁর মাথা গোজার ঠাঁই ঘরবাড়িসহ সংসারের সর্বস্ব পুড়ে যায়। এরপর দুই পুত্রকে   নিয়ে তাঁর আশ্রয় হয় প্রতিবেশি ওই দম্পত্তির বাসায়। 

আর এ সুযোগে বিধবা কাওসারী বেগমের বাড়ির চলাচল রাস্তার জায়গা  দখলে নেয় প্রতিবেশি শাকিল ও তাঁর স্ত্রী রোকেয়া। পরবর্তীতে কাওসারী বেগম বিভিন্নজনের আর্থিক সহায়তা স্বামীর বসতভিটায় আবারও নতুন করে বাড়িঘর তৈরি করার উদ্যোগ নেয়। এজন্য আশ্রয় দেয়া ওই দম্পত্তিও বাড়ি তৈরী করার জন্য বেশ কিছু টাকা দেন।

পরে নতুন করে বাড়ি নির্মাণ করার উদ্যোগ নেন ওই বিধবা। এজন্য নির্মাণ সামগ্রীও কেনা হয়। কিন্তু বাড়ি নির্মাণে বাধ সাজে প্রতিবেশী শাকিল ও তাঁর স্ত্রী রোকেয়াসহ পরিবার।  বাড়ি নির্মাণ করতে গেলে কাওসারী বেগমকে তাকে চলাচলের রাস্তার জায়গা কিংবা বাড়িতে ঢুকতে দেননি। প্রতিবেশি মো. শাকিলের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে বিধবার বাড়ির চলাচলের রাস্তার কোন জায়গা নেই। 

আর এ কথা বলে প্রতিবেশি তাঁকে  বাড়িতেও প্রবেশে বাঁধা দিচ্ছেন। সেই সঙ্গে তাঁকে বিভিন্ন রকম হুমকি ধমকি দিচ্ছেন প্রতিবেশি সাকিল ও তার পরিবার । এ অবস্থায় চলাচলের রাস্তার জায়গায় উদ্ধারে বিধবা কাওসারী বেগম আশ্রয়দাতা শিক্ষিকা হাসনা হেনার সহযোগিতায় পৌরসভাসহ বিভিন্ন স্থানে লিখিত আবেদন করেন। 

গত ২০১৭ সালের ২৯ এপ্রিল সৈয়দপুর পৌরসভায় মেয়র বরাবরে ওই আবেদন করলে  পৌরসভার মেয়রের পক্ষ থেকে বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়। ৫ সদস্যের সেই তদন্ত কমিটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে যথাসময়ে তদন্ত প্রতিবেদনও মেয়র বরাবরে জমা দেয়। এরপর কয়েক দফায় বৈঠক করেও বিষয়টির সুষ্ঠু কোন সুরাহা হয়নি আজ পর্যন্ত । 

একারণে  বিধবাও ফিরতে পারেননি নিজের ভিটেমাটিতে। এজন্য মানসিক টেনশনে থাকা বিধবা কাওসারী বেগমও স্মরণ শক্তি হারিয়ে ফেলছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে নতুন বাবুপাড়া এলাকায় কথা হয় অসহায় বিধবা কাওসারী বেগমের সাথে। তিনি জানান, তাঁর ছেলেরা বড় হচ্ছেন। 

সন্তানদের নিয়ে আর কতদিন মানুষের বাড়িতে আশ্রয়ে থাকবেন ? তাই তিনি তার বাড়ির চলাচলের রাস্তার জায়গায় উদ্ধার করে নিজ বাড়িতে যাওয়ার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনসহ গণমাধ্যম কর্মীদের সার্বিক সহযোগিতা চেয়েছেন। 

এবিষয়ে সমাজকর্মী তামিম রহমান জানান,অসহায় বিধবা কাওসারী বেগম ও তার সন্তানরা যাতে নিজের বাসায় ফিরে যেতে পারেন সেজন্য সকলের সহযোগিতা দরকার।

জানতে চাইলে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল খালেক সাবু বলেন বিধবা কাওসারী বেগম যাতে তার বাড়িতে যেতে পারে সেজন্য অনেক চেস্টা করা হয়েছে। কিন্তু শাকিল ও তাঁর স্ত্রীর উচ্ছৃঙ্খল আচরনের কারনে তা হয়নি।এজন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। 

এ ব্যাপারে কথা হয় বিধবার পরিবারকে অাশ্রয় দেয়া দম্পত্তি আলহাজ্ব মো. আজগর আলী ও হাসনা হেনার সাথে। তারা বলেন বিধবা কাওসারী বেগম যাতে তার সন্তানদের নিয়ে নিজের বাসায় থাকতে পারে সেজন্য তারা সবধরণের চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। 

ওই বিধবার পক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাসিম আহমেদ বরাবরে একটি আবেদন করা হয়েছে। ২/১ দিনের মধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পক্ষ থেকে সাকিল দম্পত্তিকে নোটিশ করা হবে বলে জানিয়েছেন ইউএনও মো. নাসিম আহমেদ। এজন্য  গণমাধ্যমকর্মীসহ সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন শিক্ষিকা হাসনা হেনা। 

এ ব্যাপারে ইউএনও মো. নাসিম আহমেদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোন রিসিভ না করায় কোন মন্তব্য জানা যায়নি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ