ফের তিস্তার পানি বিপদসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার উপরে

মহিনুল ইসলাম সুজন, স্টাফ রিপোর্টারঃ 
উজানের ঢল ও টানা বৃষ্টি এবং গজলডোবা হতে প্রচুর পানি ছেড়ে দেয়ায় ভয়ংকর রূপে ফুঁসে উঠেছে তিস্তা নদী। 
পানি বেড়ে যাওয়ায় ওপারে দোমহনী হতে বাংলাদেশের জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ভারত কর্তৃপক্ষ তিস্তা নদীর অরক্ষিত এলাকায় লাল সংকেত জারি করেছে। অপরদিকে বাংলাদেশের অংশে হলুদ সংকেত রাখা হয়েছে।


শুক্রবার বিকাল ৬টায় তিস্তা পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল,  রাত ১২টায় আরও বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

শনিবার সকাল থেকে পানি কমতে শুরু করলেও রাত ৮টায় ফের পানি ৩৩সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। শনিবার সকাল ৬টায় তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ২৪সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও দুপুরে ছিল ২০সেন্টিমিটার,বিকেলে,২৮ সেন্টিমিটার, রাত ৮টায় বিপদসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ওপরে। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যাপূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্র জানায়,শনিবার সকালে উজানের ঢল কমে আসায় বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও দুপুরে থেকে পানি বেড়ে রাতে ভয়ানক রুপ নিয়েছে।


তিস্তা চরাঞ্চলের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে কোমর থেকে হাঁটুপানিতে তলিয়ে গেছে।রাতে প্রশাসনের সহযোগিতায় দুর্গম এলাকার লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনা হয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড নীলফামারীর ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, পরিস্থিতি সামাল দিতে তিস্তাা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে।

উত্তরাঞ্চলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, উজানে ভয়াবহতার কারণে ভারত লাল সংকেত জারি করেছে। অপরদিকে বাংলাদেশ অংশে হলুদ সংকেত রাখা হয়েছে। 

পরিস্থিতি বেশি খারাপ হলে লাল সংকেত দেয়া হবে। ব্যারাজের কর্মকর্তারা নজরদারিতে মাঠে রয়েছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে উজানের ঢলে চতুর্থ দফায় ভয়াবহ বন্যায় তিস্তা অববাহিকায় নতুন করে প্রায় ১৫ হাজার পরিবার বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে নিরুপায় হয়ে পড়া চরবেষ্টিত এলাকার মানুষজনকে নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে।

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ৭ ইউনিয়ন,পূর্ব ছাতনাই,খগাখড়িবাড়ি,গয়াবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাঁপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী ও নাউতারা ইউপি চেয়ারম্যান জানান, তিস্তা ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। ডিমলার কিছামত ছাতনাই, ঝাড় শিঙ্গেশ্বর, চর খড়িবাড়ি, পূর্ব খড়িবাড়ি, পশ্চিম খড়িবাড়ি, তিস্তাা বাজার, তেলির বাজার, বাইশ পুকুর, ছাতুনামা, ভেন্ডাবাড়ি এলাকার পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় সেখানকার মানুষজন গরু ছাগল নিয়ে নিরাপদে সরে গেছে।  এতে করে প্রায় ৫ হাজার পরিবার নতুন করে বন্যা কবলিত হয়েছে।


পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ খান জানান, পরিস্থিতি ভালো না। উজানের ঢল প্রচন্ডভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এবার ভয়ংকর বন্যা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

টেপাখড়িবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ময়নুল হক জানান,গত কয়েকদিন থেকে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এতে বন্যা কবলিত হয়ে পড়া মানুষজনকে সরিয়ে নিতে কষ্ট পেতে হচ্ছে। রাতে পূর্ব খড়িবাড়ি, পশ্চিম খড়িবাড়ি,ঝিঞ্জির পাড়া বেশকিছু গ্রামের প্রতিটি বাড়ি হাঁটু থেকে কোমর পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। 

শনিবার ভোর থেকে পানি কমতে শুরু করলেও বিকেল থেকে রাতে ফের ভয়ানক রুপ নেয় তিস্তা।
ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বলেন, রাতে প্রচন্ড বেগে বন্যার পানি প্রবেশ করায় ছাতুনামা, ভেন্ডাবাড়ি তিন শতাধিক পরিবারকে নৌকায় বাঁধে নিয়ে আসা হয়।


ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়শ্রী রানী রায় বলেন, আমরা সর্তক রয়েছি। 

জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে তিস্তা অববাহিকার চরবেষ্টিত গ্রামের পরিবারগুলোকে রাতে নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ