কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি ২ শতাধিক চরে

মোঃ মাসুদ রানা, কুড়িগ্রামঃ
উজানের ঢল ও বৃষ্টির পানির কারনে কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমর, ফুলকুমরসহ ১৬ টি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে।

অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার ২ শতাধিক চরাঞ্চলসহ নদ-নদীর অববাহিকার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি জীবন-যাপন করছে। তলিয়ে গেছে সবজি ক্ষেতসহ বিভিন্ন মৌসুমী ফসল। গবাদি পশু নিয়ে নিচু এলাকার অনেক পরিবার বাঁধে ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবস্থান নিয়েছে।

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি বিপদসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার ও চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ৩৩ সেন্টিমিটার এবং নুনখাওয়া পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার পানি বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও জেলার অন্যান্য নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

যাত্রাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণে বিস্তৃর্ণ চরাঞ্চল ঘনেশ্যামপুর এলাকার তমছের উদ্দিন, ছকিনা ও জোবেদা জানান, অামরা ব্রহ্মপুত্রের সাথে লড়াই করে একাধিকবার ভিটেমাটি নদীগর্ভে হারিয়েছি। কোন উপায় না পেয়ে এই চরে এসে জমির মালিকদের কাছ থেকে জমি ভাড়া নিয়ে বসবাস করে অাসছি। অামরা এখানে ১শ পরিবার অাছি। 

অামাদের চারিদিকে বন্যার পানি। অামাদের কাজকর্ম সব বন্ধ হয়ে গেছে। অাবারও অামাদেরকে বাঁধে গিয়ে অাশ্রয় নিতে হবে। 

পাঁচগাছি ইউনিয়নের নওয়াবশ এলাকার বাসিন্দা- নওয়াব, বাবলু ও ফজলু জানান, অামাদের বাড়ী ঘর পানিতে ডুবে গেছে। অামরা অনেক কষ্টে নৌকা যোগে শহরে কর্মস্থলে যাচ্ছি। পানির কারনে পরিবারের সদস্যদেরকে নিয়ে চৌকিতে অবস্থান ও চৌকির উপর চুলা বসিয়ে রান্না করে খাচ্ছি। 

পাঁচগাছি ইউনিয়নের নওয়াবশ পাড়া এলাকার কৃষক- অাব্দুল জব্বার জানান, অামি ২০ শতক জমিতে পানি কুমড়া, ৩২ শতকে ঝিঙ্গা ও ২০ শতক জমিতে কদোয়া চাষ করেছি। যা সব কিছুই পানিতে তলিয়ে গেছে। 

ও একই ইউনিয়নের একই এলাকার কৃষক শহিদুল ইসলাম জানান, অামি ১ একর জমিতে  পটল চাষ করেছি। কিন্তু বন্যার পানিতে পুরো ক্ষেত ডুবে যাওয়ায় অামি প্রায় ১ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। 

নাগেশ্বরী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় নারায়ণপুর ইউনিয়নের উত্তর বালারহাট, আর্দশ গ্রাম ও ভয়ানেরচরসহ ৭-৮টি গ্রামের মানুষ পানি বন্দি জীবন যাবন করছেন তাছাড়াও ১৫০-২০০ বাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। নারায়ণপুর ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোঃ মজিবর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

একই উপজেলার বল্লভেরখাস (ইউপি) ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ অাকমল হোসেন জানান,  অামার ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের কৃষ্ণপুর জেলে পাড়া গ্রামের প্রায় ২৫টি বাড়ী নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। 

এসব বাড়ীর মানুষজন রঘুরভিটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অাশ্রয় নিয়েছে।  কিন্তু ১৯০৩ সালে স্থাপিত এই বিদ্যালয়টি নদীর তীরবর্তী হওয়ায় এটিও যে কোন মুহুর্তে নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে। এবং গঙ্গাধর নদীর তীরবর্তী কয়েকটি গ্রামের অানুমানিক ২৫০শ টি পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। 

উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বালা ডোবা, উত্তর বালা ডোবা, মসালের চরসহ কয়েকটি চর পানিতে পুনরায় তলিয়ে গেছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোঃ বেলাল হোসেন। 

তিনি বলেন, আমার ইউনিয়নে প্রায় দুই হাজার মানুষের বাড়ি-ঘর তলিয়ে যাওয়ায় তারা নৌকা ও টংসহ বিভিন্ন উঁচু স্থানে বসবাস করছেন।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আরিফুল ইসলাম জানান, আগামী দুই এক দিনের মধ্যে ধরলা ও তিস্তার পানি কিছুটা কমলেও ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ