চকরিয়ায় স্বামী শাশুড়ির অবহেলায় তিন জনের করোন মৃত্যু

বিশেষ সংবাদদাতা, চকরিয়াঃ
চকরিয়ার হারবাংয়ে যৌতুকের দাবিতে গৃহবধুর স্বামী ও শ্বাশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এর জের ধরে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও অবহেলা করে ডেলিভারি সময়ে গর্ভের জমজ সন্তান (নবজাতক) ও নবজাতকের মাকে হত্যার ঘটনা সংঘটিত করেছে বলে দাবি ভুক্তভোগি পরিবারের। 

গত ৩জুন দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের বাজারপাড়া গ্রামে এঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ১০জুন চকরিয়া থানায় ভুক্তভোগি পরিবারের পক্ষে মেয়ের পিতা শামশুল আলম বাদী হয়ে একটি এজাহার দায়ের করেন। এজাহার সূত্রে জানা গেছে, হারবাং ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড বৃন্দাবনখিল গ্রামের বাসিন্দা শামশুল আলমের মেয়ে জোসনা আক্তার (২০) এর সাথে একই ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের বাজারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. এনাম (২৬) এর সাথে ১৫মাস আগে ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক বিবাহ বন্ধণে আবদ্ধ হয়। ওই বিয়েতে সামাজিক রীতি অনুযায়ি কাবিন ধরা হয় আড়াই লাখ টাকা। এতে ১লাখ নগদ ও দেড় লাখ টাকা বাকি দেখানো হয়। সামাজিকভাবে ১লাখ ৬৫হাজার টাকা খরচ করে এই বিয়ে সম্পন্ন করে মেয়ের পরিবার। 

এজাহারে মেয়ের পিতা শামশুল আলম দাবি করেন, শ্বাশুর বাড়ির লোকজন যৌতুক লোভী হওয়ায় বিয়ের পর থেকে বিভিন্নভাবে তার মেয়ে জোসনাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছিল। এরপরও গৃহবধু হিসেবে জোসনা আক্তার শ্বাশুর বাড়ির নির্যাতন সয়ে ধৈর্য্য ধরে স্বামীর সাথে সংসার জীবন চালিয়ে আসছিল। এরইমধ্যে অন্তঃস্বত্তা হয়ে পড়ে গৃহবধু জোসনা আক্তার। অন্তঃস্বত্তাকালীণ শারীরিকভাবে নানা কারণে আক্রান্ত হলে স্বামী ও শ্বাশুরবাড়ির লোকজনের চরম অবহেলায় এর কোন ধরনের সুচিকিৎসা পায়নি মেয়েটি। পরে মেয়ের বাবা নিজ দায়িত্বে অন্তঃস্বত্তা মেয়েকে নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়। চিকিৎসক মেয়ের গর্ভে জমজ সন্তান রয়েছে উল্লেখ করে তাদের রিপোর্ট দেন। এজাহারে শামশুল আলমের অভিযোগ, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ উপেক্ষা করে মেয়েকে দিয়ে নানা ধরনের ভারি কাজ করানো হয়েছে। এ ধরনের বিভিন্ন কর্মকান্ডের পরও থেমে ছিলনা মেয়ের ওপর শ্বাশুর বাড়ির নির্যাতন। একপর্যায়ে ডেলিভারি সময় কাছকাছি হলে নিরুদ্দেশ হয়ে যায় স্বামী মো. এনাম। পরে শ্বাশুর বাড়ির লোকজন হাসপাতালে শরণাপন্ন না হয়ে বাড়িতে ডেলিভারি সম্পন্ন করার জোর জবরদস্তি শুরু করে। 

এজাহার সূত্রে প্রকাশ, ঘটনার দিন রাত্রে জোসনা আক্তারের প্রসব বেদনার খবর পেয়ে মেয়ের মা রোকেয়া বেগম অন্তঃস্বত্তা মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করে। এতে হাসপাতালে নিতে হবেনা; বাড়িতেই ডেলিভারি হবে অজুহাতে বাঁধাগ্রস্ত করে শ্বাশুরবাড়ির লোকজন। ওইরাতে মেয়ের শ্বাশুর বাড়িতে থেকে যায় মেয়ের মা। সকালে মেয়ের প্রচ- প্রসব বেদনা শুরু হলে মেয়ের মা একটি সিএনজি গাড়ি নিয়ে ফের হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করে। এতে শ্বাশুর বাড়ির লোকজন নিতে হবেনা মেয়ে সুস্থ আছে ঘরেই ডেলিভারি হবে জানিয়ে জোরপূর্বক মেয়ের মাকে তাড়িয়ে দেন। পরে ঘটনার দিন ৩জুন দুপুর ১২টার দিকে জনৈক গ্রাম্য ধাত্রীর মাধ্যমে বাড়িতেই অযত্ন অবহেলার মাধ্যমে ডেলিভারি কার্যক্রম শুরু করে শ্বাশুর বাড়ির লোকজন। ফলে জমজ নবজাতক ও নবজাতকের মা বাড়িতেই মারা যায়। ঘটনার পর থেকে শ্বাশুর বাড়ির লোকজন উধাও হয়ে যায়। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সহযোগিতায় চকরিয়া থানাকে অবহিত করে জমজ নবজাতক ও নবজাতকের মায়ের (মৃতদেহ) দাফন কার্যক্রম সম্পন্ন করে। 

এ ঘটনায় ৩ জনের নাম উল্লেখ করে নিহত মেয়ের পিতা শামশুল আলম বাদী হয়ে চকরিয়া থানায় একটি এজাহার জমা দেন। এ ব্যাপারে জানতে ঘটনার তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা চকরিয়া থানার (হারবাং পুলিশ ফাঁড়ি) এস.আই পারচিৎ চাকমার মুঠোফোনে একাধিবার চেষ্টা হলে রিসিভ না করায় বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়নি। এদিকে নিহতের পরিবার মেয়ে হত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চেয়ে উপজেলা-জেলাসহ উর্ধ্বতন সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ