গুরুদাসপুরে লিচু চাষিরা দিশেহারা

জালাল উদ্দিন, গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি,
নাটোরের গুরুদাসপুরে প্রথমে এবার লিচুর বাম্পার ফলন হলেও সর্বশেষ আম্ফান ঝড়ের কারনে ভালো দাম না পাওয়ায় চাষীরা লোকসানের মুখে পড়েছেন। উত্তরজনপদের অন্যতম লিচু মোকাম নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের কানুমোল্লার বটতলা। এই মোকাম থেকেই মোজাফ্ফর, চায়না সহ দেশীয় জাতের রসেভরা পাকা লাল টসটসে লিচু সারা দেশে যায়। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে লিচু ব্যবসায়ীরা পাইকারি দরে লিচু কিনতে আসেন বলে চাষীরাও এখানে তাদের উৎপাদিত লিচু বিক্রি করতে নিয়ে আসেন।
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, এই উপজেলার ৪৫০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। এবারে আম্ফান ঝড় আর শিলাবৃষ্টিতে লিচু নষ্ট হওয়ায় চাষিরা পড়েছে বিপদে। লিচু স্বল্প সময়ের রসালো ফল হওয়ায় পাকার সঙ্গে সঙ্গেই বাজারে আসতে শুরু হয়ে যায়। সরেজমিনে লিচুর আড়তে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বিসমিল্লাহ ফল ভান্ডার, মুন্নী ফল ভান্ডার, মক্কা মদিনা ফল ভান্ডার, মোল্লা ফল ভান্ডার, মায়ের দোয়া বাণিজ্যালয়, সততা ফল ভান্ডার, সোনার বাংলা ফল ভান্ডার এবং ভাই ভাই ফল ভান্ডারসহ প্রায় ১৫টি লিচুর আড়ৎ রয়েছে। এসব আড়ৎ থেকে প্রতিদিন রাজধানী ঢাকাসহ, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, কুমিল্লা, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, সিলেট, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ দক্ষিণাঞ্চলের কুষ্টিয়া, যশোরসহ বিভিন্ন জেলা, উপজেলা এবং বিভাগীয় শহর এই লিচু মোকাম থেকে দেশের সব জেলায় লিচু সরবরাহ করা হচ্ছে।
বিশ বছর ধরে ওই লিচু মোকামে উপজেলার বেড়গঙ্গারামপুর, মামুদপুর, কুমারখালী, বিয়াঘাট, বিন্যাবাড়ি, ঝাউপাড়া, মোল্লাবাজার সিংড়ার সোনাপুর এলাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের লিচু বাগান মালিকরা পাইকারি দরে আড়তদারদের কাছে লিচু বিক্রি করতে আসেন। পরে দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকারিরা ট্রাক, মিনিট্রাক পিকআপ নিয়ে এসে আড়তদারদের কাছ থেকে সেই সব লিচু কিনে সারা দেশে সরবরাহ করেন। তবে বেড়গঙ্গারামপুর লিচু মোকাম পরিচালনা কমিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন মোল্লা সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম মোল্লা বলেন, এবারের লিচু মৌসুমের শুরুতে অতিবর্ষণ, শিলাবৃষ্টি এবং সর্বশেষ আম্ফান ঝড়ে লিচু চাষীরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। প্রতিটি গাছেরই প্রায় অর্ধেক লিচুই ঝড়ে পড়েছে। যার কারনে এবারে লিচু বাগানের দামও আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে।
উপজেলার মামুদপুর গ্রামের লিচু চাষী জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, গত বছর তার একটি লিচু বাগান লাখ ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও এবারে তার দাম পেয়েছেন মাত্র ৬০ হাজার টাকা।
চাঁচকৈড় বাজারের লিচু ব্যবসায়ী ফয়সালবাইরের ক্রেতা নির্ভর আমাদের লিচুর বাজার। করোনার কারণে অন্য জেলা থেকে মহাজন, ব্যাপারী ফরিয়ারা এবার ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। তাই আমরাও বাগান নেয়া বা চাষিদের সাথে কোনো চুক্তিতে আসতে পারছি না। এবার প্রায় বাগানেই ন্যায্যমূল্য পাওয়া থেকে লিচু চাষি বঞ্চিত হচ্ছেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ