ব্রহ্মপুত্রের কড়াল গ্রাসে ৭ বার ভিটেমাটি হারা শতাধিক পরিবারের ভাগ্যে জোটেনি ত্রাণ সহায়তা

মো: মাসুদ রানা, কুড়িগ্রাম: পাশেই ব্রহ্মপুত্র নদী। অার নদীর দক্ষিণে বিস্তৃর্ণ চরাঞ্চল চর ঘনেশ্যামপুর। প্রায় ১০০ পরিবারের বসবাস এ চরে। দূর থেকে চরটিকে দেখলে মনে হয় এ যেন ভিন্ন একটি পৃথিবী। এ চর থেকে প্রায় ১০০-১৫০ হাত দূরে এ প্রতিবেদককে দেখতে পেয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলো এখানকার ৫-৬ জন নারী ও শিশু। অসহায় চেহারা ও চোখে কি যেন এক পাওয়ার প্রত্যাশায় অপেক্ষার প্রহর গুনছিলো তারা। তাদের অসহায় চেহারা ও চোখে হতাশার ছাপ দেখতে পেয়ে এ প্রতিবেদক তাদেরকে কোন ত্রাণ সহায়তা পাওয়ার কথা জিজ্ঞেস করতেই, তারা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলেন, "বাহে হামাক অাইজ পর্যন্ত কাইয়ো ত্রাণ দেয় নাই। দেশে ভাইরাচ অাইচ্ছে হাতে হামার কাজকর্ম বন্দ হয়্যা পড়ছে। সারাদিনে কোন দিন একবেলার খাবার জুটলেও পরের দিন খাবার জোটা অসম্ভব হয়। কোন রকমে খ্যায়া না খ্যায়া অমজানের ওজা অাকছি। সরকার নাকি মেলা সাহায্য দিব্যার নাগছে, হামরা তো কিচ্ছু পাইলোং না"!  এমনিভাবে হতাশার কন্ঠে কথা বলছিলেন, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের নদীগর্ভে ৭-৮ বার ভিটেমাটি হারা ঘনেশ্যামপুর চরে বসবাসরত গৃহিনী- অাকলিমা, ছকিনা ও জোবেদা। রবিবার (২৪ মে) সকালে সরেজমিনে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়। জানা যায়, প্রায় ১শ পরিবার বসবাস করছে এ চরে। তারা সবাই ব্রহ্মপুত্র নদীর সাথে একাধিকবার যুদ্ধ করে ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। বাধ্য হয়ে কোন উপায় না পেয়ে এই চরের জমির মালিকদের কাছ থেকে একাধিক পরিবার  মিলে প্রতি বিঘা ৫০ হাজার টাকা বাবদ জমা দিয়ে জমি ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন। সেটারও মেয়াদ পরবর্তী বন্যা পর্যন্ত। পরবর্তী বন্যা অাসলে অাবারও তাদের যেতে হবে অন্যত্র। এমনি করে সংসার ভাঙ্গা ও গড়ার মাঝেই চলছে তাদের জীবন। চলমান করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারনে কর্মহীন পড়া এই চরের কর্মজীবি নারী ও পুরুষের রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা। খেয়ে না খেয়ে দিন অতিবাহিত করলেও দেখার কেউ নেই। এখন পর্যন্ত কোন প্রকার ত্রাণ সহায়তা পাননি এসব পরিবার। স্থানীয় কর্মহীন হয়ে পড়া যুবক অাঃ মজিদ অাক্ষেপ করে বলেন, খালি ছবি অাইডেন্টি কার্ডের ফটোকপি নিয়্যা যায়। অার কিছুই নাই। অামার কইলে হয়তো অাপনি বলবেন মিছে কথা কয়। অাইজ পর্যন্ত অামার নামে অাঃ মজিদ নামে পরিষদে খুঁজি দেখবেন ১০ সের চাউল যদি পাইছি! অামার নামে। কি বলবো। মানুষের কথা কইতে পারিনা। এই যে কিছু দিন অাগোত অাইডেন্টি কার্ডের ফটোকপি টটোকপি নিয়ে গেল ২৫শ করি বলে টেহা দিবে। এখানে ৩ জন লোক পাইছে। অার নাই। দুই বার দিছি। একটা করি ফটোকপি করতে ১০ টেহা করি নাগে। আরেক কর্মহীন পড়া স্থানীয় বৃদ্ধ তমছের উদ্দীন জানান, বহুবার বাড়ী ঘর নদী ভাঙ্গনে চলে গেছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় ১০ হাজার, ২০ হাজার, ২৫ হাজার, ৩০ হাজার লাস্টে ৪০ হাজার টাকায় জায়গা ভাড়া নিয়ে ছিলাম। অামার জমি জমা যা ছিল সব নদীতে। থাকার কোন জায়গা না থাকায় নিরুপায় হয়ে ৫০ হাজার টাকা অগ্রীম ভাড়া দিয়ে এখানে অাছি। যার জমাজমি ধন সম্পদ অাছে এলিফ তাকেই দেয়। হামাক দেয় না। হামরা দিন অানি দিন খাই হামাক দেওয়ার কাইও নাই। বর্তমানে হামার কোন বাজেট নাই। অাগে বাড়ী ভাঙ্গলে ৩ হাজার করি টাকা পাইছি। এখন অার পাইনা। সরকারের ঘরোত নাম থাকলেও হামার কিছুই নাই। অাজ পর্যন্ত মেম্বার চেয়ারম্যান কিছু দেওয়া তো দূরের কথা কি হালে অাছি তাক দেইকপারও অাইসে নাই। পার্শ্ববর্তী ফারাজী পাড়া গ্রামের মফিজুল ও ছকিনা জানান, অামরা রেশন কার্ডের ৩০ কেজি চাউল সহ অন্যান্য সামান্য কিছু ত্রাণ পেয়েছি কয়েকটি পরিবার। কিন্তু অামাদের পাশের ঘনেশ্যামপুর চরের একটি পরিবারও কোন প্রকার ত্রাণ পায়নি। এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী অফিসার বলেন, অামি জানি না তারা ত্রাণ সহায়তা পেয়েছে কিনা। যদি তারা ত্রাণ সহায়তা না পেয়ে থাকে তাহলে যাচাই বাছাই করে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হবে। এ বিষয়ে যাত্রাপুর ইউপি চেয়ারম্যান অাইয়ুব অালী সরকার বলেন, তারা যতোটা বলেছে ততোটা নয়। অামরা অন্যান্য বারের চেয়ে এবারের ঈদে ত্রাণ সহায়তা অনেক কম পেয়েছিন। তাই সবখানে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তবে অামরা পর্যায়ক্রমে সব জায়গায় ত্রাণ সহায়তা পৌঁছাবো। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ