বাড়ি বাড়ি উপহারসামগ্রী পৌঁছে দিয়ে তৈরী করা হচ্ছে ‘সম্পর্ক’

মোঃ সাদিকউর রহমান(স্কলার)ঃ নুর আলম। একজন দিনমজুর। সারাদিন বাড়ির আশপাশের কিছু বাড়িতে কাজ করে উপার্জিত অর্থ দিয়ে পরিবারের ৬ জন সদস্যের মুখে খাবার তুলে দেন তিনি। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে দেশব্যাপী অঘোষিত লকডাউন চলছে, বন্ধ হয়ে গেছে সকল কাজ-কর্ম। বাইরে বেরোলেই করোনায় আক্রান্তের শঙ্কা, তার ওপর করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার সবাইকে বাড়ি থেকে বাইরে না বের হওয়ার এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছে। সেখানে খেটে খাওয়া এই মানুষগুলো বাইরে বের না হলে, কাজ না করলে খাবার যোগাড় হবে কিভাবে? তারা কি অনাহারেই মারা যাবে?  দিন এনে দিন খাওয়া মানুষদের ঘরে বসে সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহ কামনা করা ছাড়া যেন অন্য উপায় নেই। ঠিক এমন অবস্থায় নুর আলমের মত নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার ১০০ পরিবারের বাড়ি বাড়ি গিয়ে উপহার (খাদ্যসামগ্রী) পৌঁছে দিয়ে এসেছে সিএসআর উইন্ডো বাংলাদেশ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।  করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় ‘সম্পর্ক’ শিরোনামে অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি পরিচালনা করছে এই সংগঠন। পাশে এসে দাড়িয়েছে দেশের বৃহত্তম আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড। মাসব্যাপী শ্রমজীবি মানুষের জন্য বিনামূল্যে খাবার বিতরণে সহায়তা করছে এই প্রতিষ্ঠানটি। ১৮ টি জেলার প্রায় ২ হাজার পরিবারের মাঝে তিনটি ধাপে এই খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে দ্বিতীয় ধাপে সৈয়দপুর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার কর্মহীন ১০০ পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী তুলে দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে ‘সম্পর্ক’। শুক্রবার (১০ এপ্রিল) থেকে শুরু করে রবিবার (১২) এপ্রিল পর্যন্ত উল্লেখিত পরিবারগুলোর বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্যসামগ্রী পৌছে দেয় সংগঠনটির স্থানীয় সেচ্ছাসেবকগণ। খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে ছিল- ৮ কেজি চাল, ৩ কেজি আলু, পেঁয়াজ, লবণ, সয়াবিন তেল, মসুর ডাল প্রতিটি ১ কেজি করে এবং সাবান দু’টি। এছাড়া অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি।
এই প্রসঙ্গে সিএসআর উইন্ডো বাংলাদেশ-এর সমন্বয়কারী আহসান রনি বলেন, আমরা মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে বিশ্বাসী। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখবো কিন্তু দায়বদ্ধতা থেকে পিছিয়ে আসতে চাই না। সিএসআর উইন্ডো বাংলাদেশের মাধ্যমে আমরা সমাজের জন্য কিছু করতে চাই। তিনটি ধাপে এই খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। যে জেলাগুলো নির্ধারণ করা হয়েছে, তা হলো- চাঁদপুর, নীলফামারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, শরিয়তপুর, টাঙ্গাইল, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, ঝিনাইদহ, নাটোর, চুয়াডাঙ্গা, হবিগঞ্জ, ভোলা, সিলেট, জামালপুর, রংপুর, কুড়িগ্রাম, এবং রাজশাহী। প্রায় ২ হাজার পরিবারের সঙ্গে আমরা সম্পর্ক গড়ছি। কারণ, তারা তো আমাদেরই স্বজন। আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড এর এমডি এবং সিইও আরিফ খান বলেন, দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে খেটে খাওয়া মানুষের পাশে থাকার জন্য আমাদের এই প্রয়াস। সকলের সমন্বিত উদ্যোগে আমরা এই সমস্যা থেকে উত্তরণ হতে পারবো বলে আশা করছি। প্রসঙ্গত, খাদ্য বিতরণ কর্মসূচির পূর্বে সিএসআর উইন্ডো বাংলাদেশ বিভিন্ন জেলায় মাইকিং, লিফলেট এবং পোস্টার প্রর্দশনের মাধ্যমে আতংক নয়, চাই সচেতনতা শে­াগানের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করেছে। তা ছাড়া সামাজিক দূরত্ব সৃষ্টিতে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে ৩ ফিট দূরত্বে জীবানুনাশক স্প্রে ও দাঁগ এঁকে দেওয়া হচ্ছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ