করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে সৈয়দপুরে নরসুন্দরদের দুর্দিন চলছে


মিজানুর রহমান মিলন সৈয়দপুর  নীলফামারী প্রতিনিধিঃ খুরশীদ আলম, বয়স ৩২ বছর। নরসুন্দর (নাপিত) সম্প্রদায়ের লোক নয়। উর্দূভাষী (বিহারী) পরিবারের মানুষ। বংশপরস্পরায় তাঁর কেউই পেশায়ও ছিলেন না কখনো। মূলতঃ জীবিকার তাগিদে পেশায় আসেন। নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের শহীদ তুলশীরাম সড়কে (দিনাজপুর রোডনিকটাত্মীয়ের একটি দোকানের চুল দাঁড়ি কাটার কাজ করে জীবন নির্বাহ করে আসছেন তিনি। বৃদ্ধা মা, স্ত্রী দুই শিশু সন্তান নিয়ে পাঁচ সদস্যের পরিবার তাঁর। অন্যের সেলুনের দোকানে শর্তসাপেক্ষে (দৈনিক যত টাকার কাজ করে তার অর্ধেক পান) যে উপার্জন হয় তা নিয়ে কোন রকমে ডাল ভাত খেয়ে দিন কেটে যেত তাঁর। কিন্তু বর্তমান করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে অন্যান্য দোকানপাটের সঙ্গে সেলুন দোকানও একেবারে বন্ধ রয়েছে। অবস্থায় চরম বিপাকে পড়েছেন নরসুন্দর খুরশীদ। তাঁর মতো পেশায় জড়িত কাশেম, কাল্লু, রহমান, ইয়াকুব আলী, মজিদ, চুন্নু সবারই করুণ অবস্থা। সেলুন দোকান বন্ধ থাকায় এখন তারা একবারে উপার্জনহীন হয়ে পড়েছেন।  বর্তমান পরিস্থিতিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে কি করবেন ভেবেচিন্তেও কুলকিনারা পাচ্ছেন না। সরকারি-বেসরকারি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন কিংবা ব্যক্তিগত ভাবে খাদ্য সহায়তাও মিলছে না তাদের। আল-আমিন (প্রকৃত নাম নয়) নামের এক ব্যক্তি খুরশীদের হাতে নিয়মিত চুল-দাঁড়ি কাটান। পেশায় তিনি স্থানীয় একজন সংবাদকর্মী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানান, গত / দিন আগে নরসুন্দর খুরশীদ আকস্মিক ফোন দেন তাকে। তিনি ফোন রিসিভ করলে খুরশীদ জানান, ভাই আমাদের  দোকানপাট বন্ধ। ফলে কাজকর্ম  করতে পারছি না। একেবারে কর্মহীন হয়ে পড়েছি।  জমানো টাকা পয়সাও নেই যে তা দিয়ে এখন বাজারঘাট করবো। আর এখনকার এই ভয়াবহ অবস্থায় কেউ ধারদেনাও দিচ্ছেন না। তাই পরিবার পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে আছি। আমার জন্য একটু ত্রাণ সহায়তার ব্যবস্থা করেন। পরবর্তীতে তিনি (সংবাদকর্মী) ইন্সটিটিউশন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনীয়ার্স,বাংলাদেশ (আইডিইবি) সৈয়দপুর সাংগঠনিক জেলা শাখার লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন নরসুন্দর খুরশীদের জন্য ত্রাণ সামগ্রীর ব্যবস্থা করেন। সৈয়দপুর শহরের একটি অভিজাত কলেজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অধ্যক্ষ জানান, তিনি শহরের খালেদ মার্কেটের পেছনে একটি সেলুন দোকানে নিয়মিত চুল দাঁড়ি কাটান। গত কয়েকদিন আগে ওই সেলুন দোকান থেকে কর্মচারী দীলিপ (ছদ্মনাম) তাকে ফোন করে ত্রাণ সহায়তা চান। পরবর্তীতে তিনি তাকে ত্রাণ সহায়তার ব্যবস্থা করেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সৈয়দপুর পৌরসভা উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে হাটবাজারে  মিলে প্রায় সহ¯্রাধিক নরসুন্দর পরিবার রয়েছে। যাদের একমাত্র কাজ হচ্ছে পুরুষ মানুষের চুল-দাঁড়ি কাটা। প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শুরু পর থেকে মানুষজন সেলুনে আসা ছেড়ে দিয়েছেন। কারণ বার বার স্বাস্থ্যগত বিধি নিষেধ সর্তকবার্তা বলা হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলুন। সেলুনে চুল-দাঁড়ি কাটাতে গিয়ে তো আর সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হয়। তাছাড়া মানুষের মধ্যে একটি ধারণা জন্মেছে করোনা ভাইরাস ছোঁয়াচে ভাইরাস। মানুষের সর্দি কাশি থেকে সহজে এটি ছড়ায়।  আর সেলুনের দোকানে তো একই কাচি ক্ষৌর দিয়ে সকলের চুল দাঁড়ি কাটানো হয়। তাই সেলুন চুল-দাঁড়ি কাটতে গিয়ে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে মানুষজন আর নাপিতের ধারের কাছেও যাচ্ছেন। এতে সৈয়দপুর শহরের মতো গ্রামাঞ্চলে থাকা নরসুন্দর পরিবারগুলো উপার্জনহীন হয়ে পড়েছেন। ফলে বর্তমান পরিস্থিতিতে নরসুন্দর (নাপিত) পেশায় জড়িতরা নিদারুন দুঃখকষ্টে রয়েছেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ