খাদ্য অধিদপ্তরের নিয়োগ পরীক্ষা, শেষ সময়ের প্রস্তুতি

ডেস্ক রিপোর্টঃ
► ১১৬৬ পদের বিপরীতে আবেদন করেছেন ১৪ লাখ প্রার্থী।
► বাছাই পরীক্ষা হবে ২০ মার্চ থেকে।
► প্রতি সপ্তাহে ৪টি বা ১০টি পদের জন্য বাছাই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

খাদ্য অধিদপ্তরের অধীন নন-গেজেটেড ২৪টি ক্যাটাগরির ১১৬৬টি শূন্য পদের জন্য ২০১৮ সালে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আগামী এক মাস (সম্ভাব্য) পর থেকে বিভিন্ন পদের নিয়োগ পরীক্ষা ধাপে ধাপে অনুষ্ঠিত হবে। এ সময়ের মধ্যে কিভাবে প্রস্তুতি নেওয়া যায়—সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে প্রস্তুতির কৌশল নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন এম এম মুজাহিদ উদ্দীন;

► নিয়োগপদ্ধতি : খাদ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক মামুন আল মোরশেদ বলেন, খাদ্য অধিদপ্তরে ২৪টি ক্যাটাগরির ১১৬৬টি শূন্য পদের বিপরীতে প্রায় ১৪ লাখ আবেদন পড়েছে। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কমিটি ২০ মার্চ ২০২০ তারিখ থেকে বাছাই পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিভিন্ন কারণে সময় বাড়তে পারে। পদভিত্তিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। প্রথম দিকে কারিগরি পদগুলোর পরীক্ষা নেওয়া হবে। তারপর ধাপে ধাপে অন্য পদগুলোর পরীক্ষা নেওয়া হবে। প্রতি সপ্তাহে ৪টি বা ১০টি পদের জন্য বাছাই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। যেসব পদের পরীক্ষার্থী বেশি, সেসব পদের জন্য প্রার্থীদের প্রিলিমিনারি অর্থাৎ এমসিকিউ পরীক্ষা দিতে হবে, তারপর লিখিত পরীক্ষা, ক্ষেত্রবিশেষে ব্যাবহারিক পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে। সর্বশেষ মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। আর যেসব পদের বিপরীতে প্রার্থী তুলনামূলক কম, সেসব পদের জন্য সরাসরি লিখিত পরীক্ষা অথবা ব্যাবহারিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। আর সব পদের জন্যই সর্বশেষ মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। পরীক্ষার সব আপডেট খাদ্য অধিদপ্তর, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে। এ ছাড়া পরীক্ষার তারিখ, কেন্দ্র ইত্যাদি প্রার্থীদের মোবাইল নম্বরে এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।
 
► বিগত সালের প্রশ্ন দেখি : যেকোনো পরীক্ষার কার্যকর প্রস্তুতির জন্য বিগত সালের প্রশ্নগুলো বিশ্লেষণ করা জরুরি। বিগত সালের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করলে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ধরন সম্পর্কে জানা যায়। আর পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ধরন সম্পর্কে যত ভালো জানা যাবে প্রস্তুতি নিতে তত সহজ হবে। কৌশলী হওয়া যাবে।
 
► নিজের সাজেশন নিজে করি : বিগত সালের প্রশ্নগুলো বিশ্লেষণ করার পর বোঝা যাবে, কোন পদের জন্য কোন কোন সাবজেক্ট থেকে প্রশ্ন আসে। কোন কোন টপিকস থেকে প্রশ্ন নিয়মিত আসে, সেগুলো নির্ধারণ করে নোট খাতায় লিখে ফেলতে হবে। তারপর টপিক ধরে ধরে প্রস্তুতি নিতে হবে। নিজের প্রস্তুতির জন্য সাজেশন বা গাইডলাইন নিজে তৈরি করলে সেটা উত্তম গাইডলাইন হতে পারে। আর সে গাইডলাইন অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে হবে।
 
► কম্পিউটারে দক্ষতা বাড়াই : অফিস সহকারী-কাম-কম্পিউটার অপারেটর, ডাটা এন্ট্রি অপারেটরসহ বেশ কয়েকটি পদের জন্য কম্পিউটারের ব্যাবহারিক দক্ষতা যাচাই করা হয়ে থাকে। তাই আপনি যদি এ ধরনের পদের প্রার্থী হয়ে থাকেন, তাহলে আজ থেকেই কম্পিউটারের ব্যাবহারিক দক্ষতায় জোর দিন। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট করে হলেও কম্পিউটারে বাংলা ও ইংরেজি টাইপ করুন। এসব পদের জন্য টাইপিং দক্ষতা অবশ্যই লাগবে। মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, মাইক্রোসফট এক্সেলের দক্ষতা প্রয়োজন হয়। আজ থেকেই এসব দক্ষতা বাড়ানোর জন্য কাজে নেমে পড়ুন। মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেলের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য ইউটিউবে বেশ ভালো ভালো ভিডিও টিউটরিয়াল আছে, সেগুলো দেখে দেখে শিখতে পারেন। এ ছাড়া বাজারে ভালো মানের বেশ কিছু বইও আছে, তাই বইয়ের সাহায্যও নেওয়া যেতে পারে।
 
► গণিতচর্চা প্রতিদিন হোক : গণিতে দক্ষ হওয়ার জন্য নিয়মিত বুঝে বুঝে অনুশীলন করার কোনো বিকল্প নেই। যাঁদের গণিতে দক্ষতা কম, তাঁরা সপ্তম থেকে দশম শ্রেণির বোর্ডের গণিত বইটা অনুশীলন করতে পারেন। এ ছাড়া বাজারের প্রচলিত গাইড বই থেকে প্রথমে সহজ টপিক, তারপর ধীরে ধীরে কঠিন টপিকের গণিতগুলো অনুশীলন করা যেতে পারে। নিয়মিত গণিত অনুশীলন করলে গণিতভীতি কেটে যাবে। আর যাঁরা গণিতে একটু বেশি দুর্বল, তাঁদের জন্য গণিতে এই এক বা দেড় মাসে পুরোপুরি দক্ষ হয়ে ওঠা কষ্টকর হবে। এ জন্য গণিত নিয়মিত অনুশীলন করে অন্যান্য বিষয়ের ওপর জোর দিতে হবে। তবে গণিত বাদও দেওয়া যাবে না। কেননা এখন গণিতচর্চা করলে এ পরীক্ষা না হলেও সামনের অন্যান্য নিয়োগ পরীক্ষায় কাজে দেবে।
 
► ইংরেজিকে অবহেলা নয় : অনেকেই আছেন, যাঁরা ইংরেজিকে ‘যমের মতো’ ভয় পান! তাঁরা যদি এ পরীক্ষায় ইংরেজিকে পাশ কাটিয়ে সফল হতে চান, তাহলে সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে পারে। এ জন্য ইংরেজিকে অবহেলা না করে প্রতিদিন অল্প হলেও ইংরেজি পড়ুন। বিগত সালের বিভিন্ন চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় আসা প্রশ্নগুলো সমাধান করুন। নিয়মিত গ্রামারের রুলসের সঙ্গে বিগত সালের প্রশ্নগুলো অনুশীলন করুন। আর বেশি গুরুত্ব দিয়ে পড়ুন মেমোরাইজিং আইটেমগুলো (যে টপিকগুলো মুখস্থ করতে হয়)। যেমন—Synonym, Antonym, Group verb, Idioms and phrases ইত্যাদি। মেমোরাইজিং টপিকগুলোতে পরীক্ষায় নম্বর পাওয়া তুলনামূলক সহজ। কেননা কয়েকটি টপিক থেকেই নিয়মিত প্রশ্ন আসে। আর এটা মুখস্থ থাকলেই পারা যায়।
 
► সাধারণ জ্ঞান অসাধারণ নয় : সাধারণ জ্ঞান বিষয়টা সাধারণই। নিয়মিত পত্রিকা মনোযোগ দিয়ে পড়লে এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদ শুনলে সাধারণ জ্ঞানের অনেকটা প্রস্তুতি হয়ে যায়। এ ছাড়া বাজারের প্রচলিত ভালো মানের একটি গাইড বই থেকে স্থায়ী সাধারণ জ্ঞানের বিষয়গুলো পড়া যেতে পারে। বর্তমান সময়ের নিয়োগ পরীক্ষাগুলোর প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে—সাম্প্রতিক ঘটনা বা তথ্যের চেয়ে স্থায়ী বা গতানুগতিক সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্নই পরীক্ষায় বেশি আসে। এ বছর মুজিববর্ষ, তাই বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত প্রশ্ন আসার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
খাদ্য অধিদপ্তরের পরীক্ষা হওয়ায় ‘খাদ্য’ নিয়ে কাজ করে এমন বিভিন্ন দেশি ও আন্তর্জাতিক সংস্থা, প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে প্রশ্ন আসাটা খুব স্বাভাবিক।
 
► বেশি নম্বর পেতে কম্পিউটার ও তথ্য-প্রযুক্তি : নিয়োগ পরীক্ষায় বেশি নম্বর তুলতে হলে কম্পিউটার ও তথ্য-প্রযুক্তির প্রস্তুতিতে বেশি জোর দিতে হবে। এ বিষয়ে প্রস্তুতির জন্য বাজারের ভালো মানের একটি বা দুটি প্রস্তুতিমূলক বই আর দৈনিক পত্রিকাই যথেষ্ট। কম্পিউটার ও তথ্য-প্রযুক্তিতে যাঁদের প্রস্তুতি তুলনামূলক কম, তাঁরা বিগত সালের প্রশ্নগুলো বেশি বেশি অনুশীলন করতে পারেন। তারপর বাজারের ভালো মানের একটা গাইড বই থেকে টপিক ধরে ধরে প্রস্তুতি নিন। এক মাসে কম্পিউটার ও তথ্য-প্রযুক্তিতে ভালো প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব।
 
► নিজেই নিজের পরীক্ষক হোন : বাসায় বসে ঘড়ি ধরে প্রতিদিন একটি করে মডেল টেস্ট দিন। হয়ে যান নিজেই নিজের পরীক্ষক! নিজের লেখা উত্তর নিজেই মূল্যায়ন করুন। মডেল টেস্ট দেওয়ার সুবিধা হলো, আপনার প্রস্তুতি সম্পর্কে ধারণা হবে; অন্যদিকে পরীক্ষার হলের সময়-ব্যবস্থাপনাও আয়ত্তে চলে আসবে। বাজারে চাকরির প্রস্তুতির মডেল টেস্টের বই পাওয়া যায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ