কক্সবাজারে লুটের ১ কোটি ইয়াবার মধ্যে উদ্ধার ২ লাখ!

নিউজ ডেস্কঃ
কক্সবাজার শহরের মাঝিরঘাটস্থ বাঁকখালী নদী থেকে খালাসের সময় এক কোটি ইয়াবা লুটের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট তিনজনকে দুই লাখ পিস ইয়াবাসহ আটক করেছে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। রোববার ভোর রাতে ইয়াবাসহ তাদের আটক করা হয়।
পুলিশ জানায়, সেখানে ইয়াবা ছিল প্রায় ১০ লাখ পিস। তবে ইয়াবার পরিমাণ যা হোক না কেন অপরাধীসহ ইয়াবা পুলিশের আওতায় না আসা পর্যন্ত অভিযান চলবে।
পুলিশের অভিযানে আটককৃতরা হল,কক্সবাজার শহরের টেকপাড়ার মৃত আবদুল করিমের পুত্র, জেলা ছাত্রলীগের সদস্য মোঃ ফয়সাল প্রকাশ ফয়সাল আবদুল্লাহ (৩০),, সদর উপজেলার খরুশকুল ইউনিয়নের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারী ডজনখানেক মামলার আসামি খুরুশ্কুল ইউনিয়নের কুলিয়াপাড়ার মৃত ফজল মিয়ার পুত্র মোঃ ফিরোজ (৩২) ও একই এলাকার মৃত সোলতানের পুত্র মোঃ মোস্তাক আহমেদ লালু (৩৬)।
এই ঘটনায় আটক তিনজনসহ ১১জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মানস বড়ুয়া বাদি হয়ে ২৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
পলাতক আসামীদের মধ্যে রয়েছে, কক্সাবাজার শহরের উত্তর রুমালিয়ারছড়া এলাকার মোঃ মালেকের পুত্র বিলাই হোসেন (৩২), শহরের মাঝিরঘাট এলাকার মৃত ফরিদের পুত্র ইফতেখার খান বাবু (২৪), টেকপাড়ার মুবিন বহদ্দারের পুত্র নাসির (৩০), মাঝিরঘাটের আবু ছৈয়দ কোম্পানির পুত্র মুজিব (২২), টেকপাড়া হাঙ্গরপাড়ার মোঃ বাশি প্রকাশ বাশি বহদ্দারের পুত্র বুলু মিস্ত্রি (৩৩), পেশকারপাড়ার খোরশেদ আলমের পুত্র তানভীর (২১), পশ্চিম টেকপাড়ার গোলাম মাওলা প্রকাশ জজ বাবুলের পুত্র কায়সার (২৮) এবং তার ভাই মোঃ মিজান (৩২ )।
৮ ফেব্রুয়ারি ইয়াবা লুটের পর প্রথমে মোস্তাকের নৌকা করে ইয়াবার একটি অংশ নিয়ে যাওয়া হয়। পরে লুটকৃত ইয়াবার ওই অংশটি তার ভাই রমজানের বাসায় রাখা হয়। পুলিশ ২৩ ফেব্রুয়ারি ভোর রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে খরুশকুল কুলিয়াপাড়াস্থ এক খামার বাড়ি থেকে ফিরোজকে আটকের পর তার স্বীকারোক্তি মতে রমজানের বাসা থেকে ২ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে।
এ দিকে ইয়াবা লুটের সঙ্গে জড়িত তিনজনকে ২ লাখ ইয়াবাসহ পুলিশ আটক করলেও ইয়াবা লুটে নেতৃত্ব দেয়া জেলা পুলিশের তালিকাভুক্ত ছিনতাইকারী মিজান গত ২০ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম থেকে বিমানযোগে দেশ ত্যাগ করেছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। বর্তমানে ইয়াবা লুটের প্রধান হোতা মিজান ভারতে অবস্থান করছেন। বিষয়টিও ইমিগ্রেশনের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছেন কক্সবাজার জেলা পুলিশ।
রোববার ইয়াবা উদ্ধারের অভিযানের নেতৃত্ব দেন কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) ইকবাল হোসাইন ও ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর মানস বড়ুয়া, ইন্সপেক্টর কাজী মিজানুর রহমান।
পরিদর্শক মানস বড়ুয়া আরো জানান, আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে মোঃ ফিরোজ ও মোঃ মোস্তাক আহমেদ লালু স্বীকার করেন এই ইয়াবা চালানের সাথে ছাত্রলীগ নেতা মোঃ ফয়সালসহ আরো বেশ কয়েকজন জড়িত রয়েছে। তাদের স্বীকারোক্তি মতে পরে অভিযান চালিয়ে ছাত্রলীগ নেতা মোঃ ফয়সালকে কক্সবাজার শহর থেকে থেকে আটক করা হয়।
আটক ফিরোজের বরাত দিয়ে মানস বড়ুয়া বলেন, মোঃ ফয়সালের সহযোগিতায় টেকপাড়ার মোঃ মিজান এই বিশাল ইয়াবা চালান বিক্রির চেষ্টা করছিলো। ফিরোজ আরো জানায়, মিয়ানমার থেকে আনা এই ইয়াবা চালানের আরেকটি বড় অংশ মোঃ মিজান এবং আরেকটি বড় অংশ মোঃ শহিদ ও মোঃ বোরহানের কাছে রয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) ইকবাল হোসাইন যুগান্তরকে বলেন, ইয়াবা লুটকারীদের ধরতে পুলিশ ইতিপূর্বে ঘটনাস্থলসহ সম্ভাব্য স্থানে কয়েক দফা অভিযান চালিয়েছে। এই ইয়াবার চালানের সঙ্গে জড়িত এবং লুটকারীদের শনাক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি একটি সফল অভিযানও হয়েছে। অভিযান শেষ হলে বিস্তারিত জানানো হবে বলেও জানান তিনি।
কক্সবাজার পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বিপিএম বলেন, ইয়াবা লুটের ঘটনার পর থেকে পুলিশ এই বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। যে কারণে ইতিপূর্বে ইয়াবার বিশাল একটি অংশ উদ্ধার হয়েছে। পাশাপাশি কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে এই ইয়াবার চালানের সঙ্গে যারা জড়িত রয়েছে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
উল্লেখ্য, গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিকালে কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর মাঝিরঘাটস্থ আবু ছৈয়দ কোম্পানির জেটিতে মাছ ধরা ট্রলারে করে ইয়াবার একটি বিশাল চালান খালাস হয়। জেটি দিয়ে কূলে তোলার সময় স্থানীয় টেকপাড়া এলাকার তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে তার বাহিনী ইয়াবার চালানটি লুট করে।
মিজানের নেতৃত্বে তার বাহিনীতে ওই সময় ছিল তার ছোট ভাই কায়সার, যে জেটি দিয়ে ইয়াবা খালাস হয় ওই জেটির মালিকের ছেলে মুজিব, ইফতেখার খান বাবু, সাইফুল, জুনায়েত, নাছির মিয়া, ভুলু মিস্ত্রি, বাদশা, তানভিরসহ আরও কয়েকজন। লুটের সময় জেটিঘাটে ইয়াবার মালিক বোরহান, তার ভাই শহীদ ও তাদের পার্টনার সাইফুল এবং আবুল কালামের সঙ্গে মিজান বাহিনীর সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে অস্ত্রের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয় ইয়াবার মালিকরা।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি সৈয়দ আবু মো. শাহজাহান কবির বলেন, এক লাখ পিস ইয়াবাসহ তিন আটকের ঘটনায় মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।
/নিউজ কক্সবাজার। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ