কক্সবাজারে ভাঙ্গা রাস্তায় সোচ্চার স্যোসাল মিডিয়া

দেশের প্রধান পর্যটন শহর কক্সবাজারের ভাঙ্গাচুরা অলিগলি এবং রাস্তা-ঘাট নিয়ে ভুক্তভোগিরা নেমেছে এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কোন মিছিল-সমাবেশ নয়, নয় মানববন্ধন সহ অন্যান্য প্রতিবাদ কর্মসুচিও। যে যেভাবেই পারে কেবল ফেসবুক আইডিতেই প্রতিবাদ জানিয়ে যাচ্ছে। এমনকি পৌরশহরের রাস্তা মেরামতের দাবিতে রাজপথে আন্দোলনে নামার হুমকিও দেয়া হচ্ছে ফেসবুক আইডিতে।
সর্বশেষ কক্সবাজার পৌর শহরের প্রধান সড়কটির মাত্র চার কিলোমিটার খানা-খন্ধকে ভরা এলাকা সংষ্কারের জন্য বেশীর ভাগ ফেসবুক আইডিধারিরা খোদ প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন রাখছেন। ফেসবুক আইডিধারিদের অনেকেই স্ব স্ব আইডিতে দেয়া পোষ্টে বলেছেন-তারা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে আর আস্থা রাখতে পারছেন না। তাই উপায়ন্তর না দেখে পর্যটন শহরের রাস্তা সংষ্কারের এমন একটি ক্ষুদ্র আবদার নিয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বাধ্য হচ্ছেন।

সবচেয়ে আলোচনা চলছে কক্সবাজার পৌরসভার প্যানেল মেয়র, সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র এবং জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান চৌধুরীর একটি ফেসবুক পোষ্ট নিয়ে। ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা বলেছেন-‘কউক চেয়ারম্যান মহোদয়, আপনার সদয় অনুমতি পেলে
আমি মাহবুব কক্সবাজারের মেইন রোড মেরামত করতে আগ্রহী, নিজ তহবিল থেকে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দোষ কি ?’
যুবলীগ নেতা ইমরুল কায়েস চৌধুরী তার ফেসবুক আইডিতে বলেছেন-‘মাননীয় এমপি, কউক চেয়ারম্যান, ডিসি স্যার, মেয়র মহোদয়… কক্সবাজার শহরকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে, এই শহর থেকে সবাইকে বের করে দিলেই সব ঝামেলা শেষ।’ তিনি অপর এক পোষ্টে বলেন, কক্সবাজার সড়কের জরুরি মেরামতের জন্য কউকের সামনে “মুক্ত হস্তে দান” কর্মসুচিতে সবাই যোগদান করুন।



সাংবাদিক মোঃ মুজিবুল ইসলাম তার ফেসবুক আইডিতে দেয়া পোষ্টে বলেছেন-‘ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর আগেই কক্সবাজারের প্রধান সড়ক সচল চাই, অনন্যোপায় জেলাবাসী এ ব্যাপারে খোদ বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছে।’ রাখাইন নেতা মংহ্লামি তার পোষ্টে বলেন-‘ যে শহরে চলাচলের জন্য কোন ভার রাস্তা নেই সেই শহরে কোটি টাকা খরচ করে তিনটি পুকুরের সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ এগিয়ে চলছে নির্বিঘেœ।’
রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশ টেলিভিশনের কক্সবাজার জেলা সংবাদ প্রতিনিধি ও কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহেদ সরওয়ার সোহেল তার পোষ্টে বলেন-‘ আসুন, সকলে গণচাঁদা দিই, আর প্রধান সড়ক সংষ্কার করি। আর পারছি না….পথে নামি।’ সাংবাদিক আজিম নিহাদ তার পেসবুক পোষ্টে বলেছেন-‘সন্মানিত পর্যটকবৃন্দ বেড়ানোর উদ্দেশ্যে কক্সবাজারে আসবেন না। এখানকার সব সড়ক তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিধ্বস্ত…।’

এডভোকেট ফারহানা কবির চৌধুরী তার পোষ্টে বলেন-‘ কক্সবাজারে বর্তমান রাস্তাঘাট দেখলে মনে হবে কিছুদিন আগে এখানে যুদ্ধ হয়েছিল। যুদ্ধ শেষ হবার আগে শত্রুবাহিনী সব রাস্তাঘাট কুঁড়ে কুঁড়ে নষ্ট করে দিয়েছে। কক্সবাজার থেকে পৌরসভা, কউক যা যা আছে সবার বিদায় নেওয়া উচিত। চলুন সবাই কক্সবাজারে রাস্তা পূণঃনির্মাণ আর নালা নর্দ্দমা সংষ্কারের জন্য একটি ফান্ড করি। যে ভোবে পারে সহযোগিতা করবে। চলুন এমন একটা উদাহরণ আমরা তৈরি করি। নিজেদের টাকায় রাস্তা তৈরি করব। নালা নর্দমা সংষ্কার করব। নাহয় এভাবে দিন যাবে। কিছুই হবে না….।’
কক্সবাজারের রাস্তা-ঘাট তদারকির কাজে দায়িত্বে রয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, কক্সবাজার পৌরসভা এবং কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)সহ তিনটি সংস্থা। দীর্ঘকাল ধরে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী কক্সবাজার পৌরসভা এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগ নিজেদের আওতাধীন সড়কগুলোর তদারকি করে আসছিল। কিন্তু গত তিন বছর আগে কক্সবাজারে কউক’র কার্যক্রম শুরু হলে সংস্থাটিও সড়কের তদারকির ভাগ দাবি করে বসে।

কউক’র দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পর্যটন শহরের অন্যতম জনগুরুত্বসম্পন্ন চলাচলের প্রধান সড়কটি সড়ক ও জনপথ বিভাগ এক বছর আগেই গেজেট নোটিফিকেশন মূলে দায়িত্ব হস্তান্তর করে কউকের কাছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ ও লোকবলের অভাব সহ আরো নানা সংকটের কারনে কউক প্রধান সড়কের সংষ্কার কাজ শুরু করতে ব্যর্থ হয়। ফলে উপর্যুপরি টানা দুই বছর ধরে সংষ্কারের অভাবে পৌর শহরের একমাত্র প্রধান সড়কটির অনেকাংশ হয়ে পড়ে এক প্রকার চলাচলের অযোগ্য। এমন অবস্থায় শহরবাসি সড়কটি নিয়ে সবচেয়ে বেশী দুর্ভোগ সহ্য করেছেন গেল বর্ষার সময়।

অপরদিকে কক্সবাজার পৌরসভার অভ্যন্তরীণ সমস্ত সড়ক এবং অলিগলিও দীর্ঘদিন ধরে সংষ্কারবিহীন অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ভুক্তভোগীদের অনেকেই এসব অলিগলি এবং সড়কগুলোতে যানবাহনকেও এড়িয়ে চলছেন। যানবাহনে এসব রাস্তায় চলাচল এখন সবচেয়ে কষ্টদায়ক হয়ে পড়েছে। একারনে অনেক চলাচলকারি নাগরিক গন্তব্যে যেতে যানবাহন এড়িয়ে হাঁটাকেই নিরাপদ মনে করছেন।
সড়কের অনিরাপদ চলাচল নিয়ে লোকজন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট প্রতিকার দাবি করেও ব্যর্থ। তাই ধৈর্যহারা লোকজন এখন আশ্রয় নিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের। তবে শহরে চলাচলের সময় সবচেয়ে বেশী দুর্ভোগের মুখে পড়ে পর্যটন শহর থেকে বিমুখ হয়ে ফিরছেন এ শহরে আসা ভ্রমণ পিপাসু লোকজন। এমনকি গেল সপ্তাহের অকাল বর্ষণে পানি জমে পৌরবাসী ও পর্যটকদের অবস্থা আরো কাহিল করে দিয়েছে।

এসব বিষয় নিয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেছেন-‘ ভুক্তভোগী পৌরবাসী সহ অনেক ভ্রমণকারি পর্যটকরাও প্রতিনিয়িত শহরের সড়কের ব্যাপারে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকেন। আমি কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পৌরসভা, কউক ও সওজ কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয় করে চলেছি। যতদ্রুত সম্ভব উন্নয়ন কাজ এগিয়ে নেয়া হবে।’ কউক চেয়ারম্যান লেঃ কর্ণেল ফোরকান আহমদ জানিয়েছেন, শহরের বাইপাস সড়কের কাজ চলছে। শীঘ্রই প্রধান সড়কের কাজও শুরু হবে। পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান জানিয়েছেন, পৌরসভার অভ্যন্তরীণ ভাঙ্গাচোরা বেশীর ভাগ সড়কের টেন্ডারও হয়েছে ইতিমধ্যে। শীঘ্রই দৃশ্যমান কাজ হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ