ডুবে গেছে ৫’শ হেক্টর জমির আখ: সংকটে নর্থবেঙ্গল সুগার মিলস

নিজস্ব প্রতিবেদক
উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে ভারি শিল্প কারখানা নাটোরের লালপুর উপজেলার নর্থ বেঙ্গল চিনিকল। এই চিনিকলের তিনভাবের একভাগ আখের চাহিদা মিটিয়ে থাকে লালপুর উপজেলার ১৮টি চরের উৎপাদিত আখ। কিন্তা হঠাৎ বণ্যার কারনে ডুবে গেছে চরের বেশি ভাগ আখ। ফলে আগামী মৌসুমে চিনি উৎপাদনে ব্যাহত হবে এই মিলটির। পর্যাপ্ত পরিমানে আখ সরবরাহ না পাওয়ার কারনে এমনিতে মিলটি লোকসানের বোঝা দিন দিন বাড়লেও মৌসুমের শুরুতে বড় ধরনের ধাক্কা খেল মিলটি।

জানা যায়, উপজেলার পদ্মাতীরবর্তী বিলমাড়িয়া, চরদিয়ারবাহাদুরপুর, দিয়ার শংকরপুর, বন্দোবস্ত গোবিন্দপুর, চর লস্করপুর, নওশারা সুলতানপুর, আরাজি বাকনাই, চাকলা বিনোদপুর, চর লালপুর সহ ১৮টি চরেই শীতকালীন সবজি মূলা, পুঁইশাক, লালশাক, বেগুন, লাউ আখ এবং পেয়ারা উৎপাদন হয়। এরমধ্যে আখ উৎপাদনই হয় সবচেয়ে বেশি। কিন্তু বন্যার পানির কারনে সব চর ডুবে যাওয়ার কারনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে আখ। আর এবারের বণ্যায় কৃষিতে বড় সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে এই উপজেলায়।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, প্রাথমিক ভাবে বিভিন্ন চর ঘুরে ক্ষতির পরিমান নির্নয় করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থের মধ্যে ৫০০ হেক্টর জমির আখ, ১ হেক্টর জমির মুলা,২ হেক্টর জমির লাল শাখ, ১ হেক্টর জমিতে বেগুন, ১হেক্টর কলা, ১ হেক্টর জমিতে ফুল কপি। এছাড়া ১বিঘা জমিতে কুল, চাল কুমড়া, পটল, হলুদ মাস কালাই ডুবে গেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ক্ষতির পরিমান আরো বাড়বে। আগামী দু-একদিনের মধ্যে ক্ষতির পরিমান পুনরায় নির্ধারণ করা হবে।

লালপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চর জাজিরা গ্রামের ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বলেন, একটা চরেই অন্তত সাড়ে তিন’শ ঘর রয়েছে। এই ঘরের সব গুলো মানুষ আখ উৎপাদন করে। কিন্তু যাদের আখ এখন পানির নিচে। যার কারনে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
চর জাজিরা গ্রামের সাইফুল ইসলাম বলেন, আখ উৎপাদনের পর আমরা বাদাম রোপন করি। কিন্তু আখের জমি সব পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণে আমাদের বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে।
লালপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সিদ্দিক পলাশ বলেন, চরের বেশির ভাগ মানুষ আখের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু আখ ডুবে যাওয়ার কারনে তারা দিশেহারা। সরকার থেকে তারা কৃষি প্রনোদনার দাবি জানিয়েছেন।

নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল সূত্র জানায়, আগামী ১ নভেম্বর থেকে নর্থবেঙ্গল সুগার মিলটি চিনি উৎপাদন শুরু করবে। তিন থেকে চারমাস চলা এই মিলটিতে এবার আখ মাড়াইয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২লাখ ৯০হাজার। যার বেশির ভাগ অথাৎ অন্তত ১লাখ মেট্রিক টন আখের সরবরাহ আসে ১৮টি চর থেকে। কিন্তু গত কয়েক দিনের বন্যার কারনে বেশির ভাগ আখ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছ। যার কারনে সুগার মিলটিতে পর্যাপ্ত পরিমানে আখ সরবরাহ না হওয়ার সম্ভাব তৈরী হয়েছে।

নাটোর নর্থবেঙ্গল সুগার মিলের এজিএম (কৃষি) মাজহারুল ইসলাম জানান, গত দু’দিন ধরে তিনি পানিবন্দি এলাকা পরিদর্শন করেছেন। আগামী ১ নভেম্বর থেকে নর্থবেঙ্গল সুগার মিলে চিনি উৎপাদন শুরু হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০০ হেক্টর অর্র্থাৎ ৩হাজার ৭৫০বিঘা জমিতে আখের জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। অবস্থার উন্নতি না হলে নতুন নতুন এলাকার আখের জমি প্লাবিত হবে। যার কারণে আগামী চিনি মৌসুমে চিনির উৎপাদন কমে যেতে পারে।

তিনি আরও বলেন, তিন ভাগের এক ভাগ আখ সরবরাহ আসে পদ্মা নদীর বিভিন্ন চর থেকে। কিন্তু বন্যার কারনে আখ ডুবে যাওয়ায় মিলটি আখ সরবরাহ পাবে না। যার কারনে চিনি উৎপাদনও কম হবে। আর চিনি উৎপাদন কম হলে লোকসানের পরিমানও বাড়বে।

লালপুর উপজেলা কৃষি অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, ১৮টি চরে মোট ১৬’শ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়। এরমধ্যে ৫০০ হেক্টর জমির আখ ডুবে গেছে। পানি বৃদ্ধির কারণে প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। যার কারনে মিলটি তার চাহিদা অনুযায়ী আখ সরবরাহ পাবে না। তবে দু-একদিনের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হলে কিছুটা অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ