চান্দের পাড়াসহ বাঁকখালীতে বালু উত্তোলন থেমে নেই



নিজস্ব প্রতিবেদক

কক্সবাজারে বছরের পর বছর ধরে ভাঙছে বাঁকখালী নদীর দুইপাড়। বিলীন হয়ে যাচ্ছে ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমি। এই অব্যাহত ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় নেই বালুমহাল। তবে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে থেমে নেই একটি প্রভাবশালী মহলের। দেশের আইনকানুনের হয় কোন তোয়াক্কা না করে সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়ন ও পিএমখালী ইউনিয়নের সংযোগস্থল রাবার ড্যাম এলাকায় বাঁকখালী নদী থেকে অবিরাম ভাবে বালু তুলছে প্রভাবশালীরা। ড্রেজার মেশিন দিয়ে দিনে রাতে তোলা হচ্ছে লাখ ফুট বালু।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বাঁকখালী নদীর পৌরসভা, খুরুশকুল, ঝিলংজা, পিএমখালী, চাকমারকূল, মিঠাছরি, ফাতেহারকূল ইউনিয়নসহ আরও কয়েকটি ইউনিয়নে নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি।এসব নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় বাঁকখালী নদীর কোন পয়েন্টে সরকারি ইজারাকৃত কোন বালু মহাল নেই। তবে বালু মহল না থাকার পরেও নদীর একাধিক পয়েন্ট/ এলাকা থেকে অবৈধ বাণিজ্যিক ভাবে বালু তোলা হচ্ছে। এতে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত সরকার। অপরদিকে অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলায় নদীর জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আরো বাড়ছে নদী ভাঙনের তীব্রতা।

বালু তোলা ও পরিহবনের সাথে সম্পৃক্ত একাধিক ব্যক্তি ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সরকারি বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বালু তুলছেন পিএমখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ। অত্যাধুনিক ড্রেজার দিয়ে ২৪ঘন্টা ধরে এ কাজ করে চলছেন তাদের লোকজন। এসব ড্রেজার মেশিন দিয়ে দিনে রাতে লাখ লাখ ঘনফুট বালু তোলা হয়। প্রতি ঘনফুট বালু বিক্রি হয় ১০/১২ টাকা দরে। অবৈধ বালু বিক্রির বিশাল অংকের এ টাকা ঢুকছে বালু খেকো চক্রের পকেটে।

বাঁকখালী নদীর চাঁদের পাড়া রাবার ড্যাম এলাকা থেকে বালু তোলার চিত্র সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ৫টি ড্রেজার দিয়ে বালু তোলার কাজ চলছে। পাশাপাশি বল্কহেডের মাধ্যমে তোলা হচ্ছে বালু। একটু দূরে রয়েছে আরও ৩টি বালু তোলার ড্রেজার।

নদীর জেলে ও স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, অবাধে বালু তোলার জন্য এদের রয়েছে নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী। বালু তোলার ড্রেজারের আশে পাশে কোনো সাংবাদিক যেতে পারে না। কেউ ড্রেজারের কাছে গেলে তাদের হামলা করে এদের লোকজন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাল উত্তোলনকারী সিন্ডিকেটের প্রধান হুতা হাকিম আলী,কামরুল ইসলাম, নাছির উদ্দীনসহ আরো শক্তিশালী লোকজন রয়েছে। হাকিম আলীর নেতৃত্বে স্থানীয় এস্তেমার মাঠে বালু দেওয়ার কথা বলে আরো অনন্য স্পট দিয়ে বালু উত্তোলন অব্যহত রেখেছে।  

তারা দেশের আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করায় বাঁকখালী নদী দুই পাড়ের প্রায় ৩০-৪০কিলোমিটার এলাকায় জুড়ে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ইতি মধ্যে কয়েক বছরে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে হাজার হাজার একর জমি। ভিটে মাটি হারিয়ে নি:স্ব হয়ে যাযাবর জীবন যাপন করছে শত শত পরিবার। তাদেরই একজন আবুল হাসনাত। তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে ছয় বার নদী ভাঙনের কবলে পড়েছেন তার পরিবার। এখন তারা নিঃস্ব। বৃদ্ধ মা, স্ত্রী সন্তান নিয়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে থাকেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, যুগযুগ ধরে নদীর ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। নদীতে বিলীন হয়ে গেছে শত শত একর জমি। ভিটে মাটি হারা হয়েছেন কয়েকশত পরিবার। ২০/৩০বছর আগে ভাঙন কবলিত এলাকায় একটি নতুন চর জেগে উঠতে শুরু করে। এতে সব হারানো মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে। তবে গত ৬ বছর ধরে ওই ডুবোচর কেটে বালু উত্তোলন শুরু করে একটি প্রভাবশালী চক্র। বালু উত্তোলনে নিষেধ করলে স্থানীয়দের উল্টো হুমকি ধামকি দেয়। অনেকে আবার টাকার লোভে মজেছেন।

স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের শিক্ষক (নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে) বলেছেন, নদীর তলদেশ থেকে বালু অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলা হলে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হয়। যার মধ্যে স্থানীয় উদ্ভিদ ও প্রাণিকুলের আবাসস্থল এবং তাদের খাদ্যের উৎস ধ্বংস হচ্ছে। অপরদিকে বালু উত্তোলনে নদী গর্ভের গঠন প্রক্রিয়া বদলে যাচ্ছে এবং নদী ভাঙছে। বালু উত্তোলনের কাছাকাছি মাটির ক্ষয় যেমন ঘটছে, তেমনি মাটির গুনাগুণও নষ্ট হচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তনে প্রভাব ফেলছে এ অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ