চট্টগ্রামে জনবহুল এলাকায় ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবসায় নেই কোন অনুমোদন


মোঃ মনছুর আলমঃ আইন লঙ্ঘন করে চট্টগ্রাম নগরীর গুরুত্বপূর্ণ জনবহুল পয়েন্টে অবাধে কেমিক্যাল বা রাসায়নিকের ব্যবসা পরিচালনা করছেন একটি প্রভাবশালী চক্র। অবৈধভাবে কেমিক্যাল ব্যবহার, সংরক্ষণ, বিপণন ও সরবরাহ সবই চলছে জনসারণের নাগালে। কেমিক্যাল আমদানি করার লাইসেন্স আবশ্যক ও বিপজ্জনক কেমিক্যালসহ নানা দাহ্য পদার্থের ব্যবহার, বিপণন ও সরবরাহের নানা বিধান থাকলেও তা তোয়াক্কা না করেই নগরের দুইনাম্বার গেইট এলাকায় জনবহুল পরিবেশে অবৈধভাবে এ ব্যবসা করে যাচ্ছেন একটি মহ। রাসায়নিক মজুদের কোন রকম অনুমোদন ছাড়াই নিয়মিত বিভিন্নধরনের ক্যামিকেল ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে ট্র্রেড জেন্ট্রাস নামের এই প্রতিষ্ঠানটি। ‘বিপজ্জনক রাসায়নিক মজুদ, পরিবহন ও বিক্রির ক্ষেত্রে আইন না মানার ফলে অগ্নিদুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। দ্রত এটি সরানোর পরামশ্য দিয়েছে বিশিষ্টজনেরা।

অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়া শুধুমাত্র সিটি করপোরেশনের মেয়াদোত্তীর্ণট্রেড লাইসেন্স নিয়ে অনুমোদিত ঠিকানা বাদ দিয়ে নগরীর ২ নং গেই এলাকায় ২৫০০ বর্গফুটের একটি ফ্লোর ভাড়া নিয়ে বিপজ্জনক রাসায়নিক গুদামজাত এবং খোলাবাজারে বিক্রি করে আসছে ট্রেড জেন্ট্রাস। অথচ রাসায়নিক মজুদ করতে হলে আইন মতে, গুদামের নকশা, আমদানি-রপ্তানির লাইসেন্স, অগ্নিনির্বাপণ সনদসহ অনেকগুলো শর্ত পূরণ করতে হয়।
আইন ও শাস্তির বিধান যতটুকুই আছে, তা পড়ে আছে কাগজে-কলমে। বাস্তবে এর প্রয়োগ নেই বললেই চলে। ফলে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে যে যেভাবে পারছে অবাধে বিপজ্জনক কেমিক্যালের ব্যবসা পরিচালনা করছে।

সরোজমিন গিয়ে দেখামেলে দুই নাম্বার গেইট এলাকায় গিঞ্জি পরিবেশে ক্যামিকেল মজুদ করে বিক্রি করছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ,যেখানে মজুদ করা আছে প্রায় চল্লিশ প্রকার ক্যামিকেল। প্রতিষ্ঠানের ম্যানাজার পরিচয় দিয়ে কথা বলে মো: জুয়েল,তিনি বলেন এই সব ক্যামিকেল পরিবেশের কোন ক্ষতি করেনা। আমরা এগুলো গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখান হতে সাপ্লাই দিয়ে থাকি। 

প্রতিষ্ঠান এর সাইনবোর্ড নাই , প্রতিষ্ঠান এর কাগজপত্রে দেখা যায়, চট্টগ্রাম সিটিকর্পোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করা হয় ৬ ডিসেম্বর ২০ সালে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর দীর্ঘ সময় ধরে মেয়াদ উত্তীর্ণ ব্যবসায়ীক ট্রেড লাইসেন্স সদ্য নতুন ভাবে তৈরী সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করলেও পাইনি অনুমোদন। ইতিপূর্বে ট্র্রেড জেন্ট্রাস মালিকের নাম আকরাম হোসেন। স্থায়ী রেজিস্টার্ড ঠিকানা দেখানো হয় গ্রাম:রায় পাড়া ,সদরদী, পোস্ট সদরদী, ৭৮৩০ ভাংগা, ফরিদপুর। ব্যবসায়ের বর্তমান ঠিকানা লেখা আছে আইয়ুব খান হাউস, ১৮৪, চুন্নু মিয়া বাই লেইন হাট হাজারী রোড, পাঁচলাইশ। প্রতিষ্ঠানের ধরন আমদানি ,রপ্তানী ও সরবরাহ কারী। কিন্তু বর্তমানে সদ্য করা ট্রেড লাইসেন্সে মালিকের নাম উল্লেখ করা হয় মোঃ নাজমুল হোসেন। গড়মিলের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটিতে দায়িত্বরত মোঃ জুয়েল বলেন, পূর্বের ট্রেড লাইসেন্স ছিল ম্যানেজারের নাম, তবে বর্তমানে নতুন ট্রেড লাইসেন্স মালিকের নামে করা হয়।

বিস্ফোরক পরিদপ্তর চট্টগ্রামের পরিদর্শক ও অভিযোগ নিস্পত্তি কর্মকর্তা মো: তোফাজ্জল হোসেন সকালের সময়কে বলেন, " যে কোন কেমিক্যাল মজুদ উৎপাদন বিপনন করতে হলে প্রথমে উক্ত প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স লাগবে , পারিবেশ অধিদপ্তর ও ফায়ারসার্ভিসের সার্টিফিকেট এবং জেলা প্রশাসনের অনাপত্তিপত্র লাগবে , এই সব কাগজ থাকলে তারা বিস্ফোরক অধিদপ্তরে আবেদন করবে ,যদি আমরা পরিদর্শন করে বুঝতে পারি এসব দাহ্য কেমিক্যাল গোডাউন জনবহুল এলাকার বাইরে এবং দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা নাই তার পরে বিস্ফোরক অধিদপ্তর ছাড়পত্র দিবে। তিনি আরো বলেন, অনুমোদন ছাড়া যারা জনবহুল এলাকায় এই সব কেমিক্যাল মজুদ এবং ব্যবসা পরিচালনা করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

বিস্ফোরক পরিদপ্তরের আরেক কর্মকর্তা জানান, রাসায়নিক দ্রব্য আমদানি, সংরক্ষণ ও ব্যবহার আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বিধি লঙ্ঘন করে কেমিক্যাল আমদানি, পরিবহন, মজুদ, বিতরণ , উৎপাদন ,শোধন, মিশ্রণ বা প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে পুনঃব্যবহার কিংবা বিতরণের স্থান বা পরিবহনরত যানের তত্ত্বাবধানে নিযুক্ত ব্যক্তি লাইসেন্সের কোনো শর্ত লঙ্ঘন করলে, এসব কাজে নিযুক্ত ব্যক্তি যদি ধারা ১৩ এর অধীন ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তাকে-(অ) উক্ত স্থানে বা ক্ষেত্রমতে যানে কোনো কেমিক্যাল পরিদর্শনের সময় বা উক্ত পরিদর্শনে যুক্তিসঙ্গত সহযোগিতা প্রদানে অস্বীকার বা অবহেলা করেন, অথবা (আ) কেমিক্যালের নমুনা সংগ্রহ করতে অসহযোগিতা করেন এবং ধারা ২৪ এর অধীন কোনো দুর্ঘটনার সংবাদ প্রদানে ব্যর্থ হন, তাহলে উক্ত ব্যক্তি অনধিক ৬ মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। 

সরেজমিনে দেখা যায়, গুদাম এবং প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা পরিচালনা দুইনাম্বার গেইট সংলগ্ন বেবী সুপার মার্কেট এলাকার মূল সড়কের পশ্চিম দিকে জনবহুল এলাকায়।পাশে ররয়েছে ৫ তলা ভবন ক্লিনিক এবং দোকানের সারি। আশে পাশে বসবাসকারীরা প্রকাশ্যে কিছুই বলতে সাহস করেননা। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট প্রভাবশালী চক্র হওয়ায় আশে পাশের দোকানদার মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

এব্যপারে সু শাসনের জন্য নাগরিক (সুজন ) চট্টগ্রাম বিভাগের সভাপতি ও ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর সিকান্দার খান বলেন ,"এই সকল বিপজ্জনক ক্যামিকেল গোডাউন শহরের জনবহুল এলাকায় অনুমোদন দেওয়ার কথা না, যদি অনুমোদন ছাড়া কেউ ভয়ানক ক্যামিকেল মজুদ এবং বিক্রি করে তা গুরুত্বর অপরাদ, যারা এই বিষয়গুলো দেখাশুনা করার কথা তাদের আরো দায়িত্বশীল হওয়া দরকার, যাতে বড় ধরনের কোন অগ্নি দুর্ঘটনা হতে রক্ষা করা যায়।"

পরিবেশ উন্নয়ন ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এ্যাড ভিশন বাংলাদেশ’র চেয়ারম্যান শেখ নওশেদ সরোয়ার পিল্টু বলেন, আমরা চাই সবুজঘেরা পরিবেশ বান্ধব পরিকল্পিত আধুনিক চট্টগ্রাম নগরী, এই সব ক্ষতিকর কেমিক্যাল আমাদের পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে, ক্ষতিকর কেমিক্যাল মজুদ কোনভাবেই শহরের কোন স্থানে মজুদ এবং ব্যবসার জন্য অনুমোদন দেওয়া যাবেনা।" ঝুঁকি এড়াতে এখনি স্থানান্তর করা দরকার। সেক্ষেত্রে, উন্নতমানের কন্টেইনারে আনা-নেয়া, সংরক্ষণ, নিয়মিত গোডাউন পরীক্ষা করা, রেসিডেন্সিয়াল এরিয়া থেকে দূরবর্তী স্থানে গোডাউন স্থাপন, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় যেহেতু কেমিক্যালের বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের কাগজ পত্র ঠিক রাখা, আইনত বিধিনিষেধ মেনে চলা ইত্যাদি বিষয় দেখে নগরীর বাইরে এইসব প্রতিষ্ঠান অনুমোদন দেয়ার কথা। আর না হয় বড় কোন দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে এই সব অনুমোদনহীন কেমিক্যাল গোডাউনগুলো। 

এব্যপারে চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের (মেট্রো) পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাস বলেন "এই সকল অনুমোদনহীন কেমিক্যাল গোডাউনের খবর পেলে আমরা দ্রত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি। এদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ