মৎস্য উন্নয়নকর্পোরেশনের অগ্রযাত্রায় বঙ্গবন্ধুর অসামান্য অবদান

আব্দুল আলীম নোবেল বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান এবং সমুদ্র বিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার,তিনি সম্প্রতি সরকারি সফরে কক্সবাজারে আসেন এইসময় দৈনিক কক্সবাজার ৭১ কথা বলেছে তাঁর সঙ্গে। বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি সদ্য দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তার কর্পোরেশনের উন্নয়নে আরো বেশি ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ গ্রহণ করবেন তিনি। মৎস্যকে শিল্পে রূপান্তর করতে দৃঢ়ভাবে নিরলস কাজ করে যাবেন। #সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তরের লক্ষ্যে বিমানবন্দরটি সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। সে লক্ষ্যে বিমানবন্দরের আশেপাশের এলাকায় সরকারি খাস জমিতে বিশেষ করে কুতুবদিয়া পাড়া-সমিতিপাড়া-নাজিরারটেক নামে পরিচিত কক্সবাজার পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড এলাকায় বসবাসরত বাসিন্দাদের স্থানান্তরের প্রয়োজন হয়। ঐ এলাকায় বসবাসরত ৪৬০৯টি পরিবারকে সরিয়ে নিয়ে খুরুশকুল বিশেষ আশ্রায়ণ প্রকল্পে পুনর্বাসনের পাশাপাশি তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য ‘কক্সবাজার জেলায় শুটকি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপন’ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ০১টি শুটকি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল ও বিক্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে যেখানে শুটকি উৎপাদন ও বিক্রয়ের মাধ্যমে তাদের জীবিকা উপার্জন নিশ্চিত হবে। প্রকল্পের সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যসমূহঃ পুনর্বাসিত পরিবারসমূহের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। গুণগত মানসম্পন্ন কাঁচা মাছ সংগ্রহের জন্য আধুনিক মৎস্য অবতরণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। শুটকী মাছ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন গগুণগত মানসম্পন্ন শুটকি মাছের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশাধিকারে সহায়তা করা। প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমসমূহ ও লক্ষ্যমাত্রাঃ ২৫০০ বর্গমিটার আয়তনের অবতরণ শেড নির্মাণ, ১৮৬০ বর্গমিটার আয়তনের ৪ তলাবিশিষ্টল্যাব, অফিস, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কাম ডরমেটরী নির্মাণ, ১০০টন ক্ষমতাসম্পন্ন কোল্ড স্টোরেজ (৪ চেম্বারবিশিষ্ট) নির্মাণ, ০২টি ওয়ে ব্রীজ এবং ০৩টি পন্টুন/গ্যাংওয়ে তৈরী করা, ৩৫০টি বিএফআরআই ফিস মেকানিক্যাল ড্রায়ার এবং ৩০টি মেকানিক্যাল ড্রায়ার স্থাপন, ৩৬টি শুটকী বিক্রয় কেন্দ্র নির্মাণ, ১০টি টয়লেট জোন নির্মাণ। প্যাকেজিং ফ্যাক্টরী স্থাপন, ইটিপি,এসটিপি ও ডাব্লিউটিপি নির্মাণ; ০৩টি জেনারেটরসহ ০১টি বৈদ্যুতিক সাবষ্টেশন স্থাপনকরা ৩টি আরসিসি জেটি নির্মাণকরা করা হবে। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার আরো বলেন, তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়া কর্তৃক ১৯৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১০টি সমুদ্র গামী ফিশিং ট্রলার উপহার দেওয়া হয়। ১০টি ট্রলার নিয়েই বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়নকর্পোরেশন বঙ্গোপসাগরে সর্বপ্রথম বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মৎস্য আহরণ শুরুকরে এবং সামুদ্রিক মৎস্যকে দেশের জনসাধারণের কাছে পরিচিত করে তোলে। বঙ্গোপসাগরে মৎস্য সম্পদের জরিপ ১৯৭২ সালে সম্পন্ন করা হয়। জরিপের ভিত্তিতে সাউথ প্যাচেজ, এলিফ্যান্টপয়েন্ট, ইস্ট অব সোয়াচ অব নোগ্রাউন্ড এবং সোয়াচ অব নোগ্রাউন্ড নামে ৪টি বাণিজ্যিক মৎস্য আহরণ ক্ষেত্র শনাক্ত করা হয়। এ জরিপের ভিত্তিতেই বঙ্গোপসাগরে সামুদ্রিক মৎস্য আহরণকরা হচ্ছে। ছোট ছোটকাঠের পাল তোলা দেশীয় নৌকা যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে উপকূলীয় ও সামুদ্রিক মৎস্য শিকারের গোড়া পত্তন হয়। পরে ১৯৭৩ সালে চট্টগ্রাম মৎস্য বন্দর একটি পূর্ণাঙ্গ মৎস্য বন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়। গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণের নিমিত্তে মৎসজীবী, ট্রল অপারেটর, নেভিগেটর, ফিশপ্রসেসিং টেকনোলজিস্টসহ প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবলসৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালেবিএফডিসি’রঅধীনে মেরিনফিসারিজ একাডেমি প্রতিষ্ঠাকরা হয়। বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়নকর্পোরেশন (বামউক) সরকারি মালিকানাধীন সেবাধর্মী স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান যার ২০টি কেন্দ্র দেশের মৎস্য সম্পদ ও মৎস্য শিল্পের উন্নয়নে কাজ করছে। কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে দেশে আধুনিক ট্রলারের মাধ্যমে সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ, আহরিত মৎস্যের স্বাস্থ্যসম্মত অবতরণ, সংরক্ষণ, প্রক্রয়িাকরণ ও বাজারজাতকরণসহ মৎস্য রপ্তানিকারকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা র্অজন অবদান রেখে চলছে। কর্পোরেশন চট্টগ্রাম মৎস্য বন্দরের মেরিন ওয়ার্কশপ এবং মাল্টিচ্যানেল স্লিপ ওয়েডকইয়ার্ড এর মাধ্যমে সমুদ্রগামী মৎস্য ট্রলারসমূহের মেরামত সেবা প্রদান করছে। এছাড়াও চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে স্থাপিত টি-হেড জেটির মাধ্যমে সমুদ্রগামী মৎস্য ট্রলারের বার্থিং সুবিধা প্রদান করছে। কর্পোরেশন ১৯৬৪ সালহতে ৬৮,৮০০ হেক্টর জলায়তনের কাপ্তাই হ্রদে মিঠাপানির মাছ উৎপাদন, আহরণ, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ সংক্রান্তর্কাযক্রম পরিচালনার মাধ্যমে পার্বত্য রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলাধীন ১০টি উপজেলার ৭ লক্ষাধিক উপজাতি ও স্থানীয়জন সাধারণের আর্থ-সামাজিক অবস্থারউন্নয়ন, প্রোটিনের চাহিদাপূরণ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে আসছে। সমুদ্র, উন্মুক্ত ও বদ্ধ জলাশয়ে মৎস্য উৎপাদন, আহরণ, আহরিত মৎস্যের অপচয় হ্রাসকরণের লক্ষ্যে স্বাস্থ্যসম্মত অবতরণ, প্রক্রয়িাকরণ, সংরক্ষণ এবং বিপণন র্কাযক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের প্রধান কাজ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ