শিল্প কারখানায় বিদ্যুতের লোডশেডিং দৈনিক লোকসান গুণতে হচ্ছে অর্ধ কোটি টাকা


মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুরঃ

বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে শিল্পনগরী সৈয়দপুর। দিনে-রাতে মিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১২ থেকে ২০ ঘন্টা লোডশেডিংয়ের ধকল পোহাতে হচ্ছে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের। তবে লোডশেডিংয়ে সবচেয়ে বেশী নাজেহাল হচ্ছে শিল্প-কারখানার মালিকরা। বিদ্যুতের লুকোচুরি খেলায় সর্বাধিক ক্ষতির মুখে পড়েছে এসব প্রতিষ্ঠান। ঘন ঘন বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় শিল্প প্রতিষ্ঠানে উৎপাদনসহ কর্মঘন্টা অপচয় হচ্ছে। ফলে দৈনিক অর্ধ কোটি টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে ছোট-বড় সব শিল্প উদ্যোক্তাদের। বিদ্যুতের চলমান বেহাল দশার অবনতি হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন ভুক্তভোগী শিল্প মালিকরা। শুধু শিল্প মালিকই নয় লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্রাহকরাও।

নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানী (নেসকো) সূত্রে জানা যায়, সৈয়দপুরে আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্প কারখানা মিলিয়ে ৪৩ হাজারেরও বেশী ভোক্তা রয়েছেন। এর মধ্যে বিসিক শিল্প নগরীসহ ছোট-বড় শিল্প-কারখানা রয়েছে হ¯্রাধিক। এসব ভোক্তাদের দৈনিক চাহিদা প্রায় ২৫ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে ২১ থেকে ২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। ফলে ঘাটতি মেটাতে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা চরমে পৌছেছে।

ভুক্তভোগী শিল্প কারখানার মালিকরা জানান, দীর্ঘদিন বিদ্যুতের সমস্যা থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে লোডশেডিং চরম আকার ধারণ করেছে। দিনে-রাতে বিদ্যুতের আসা-যাওয়ায় আমরা নাজেহাল হয়ে পড়েছি। নিরবিচ্ছন্ন বিদ্যুৎ না মেলায় উৎপাদন ও শ্রম ঘন্টার অপচয় হচ্ছে। কারখানা সচল অবস্থায় বারবার বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় দৈনিক বিপুল পরিমাণ কাঁচামাল নষ্ট হচ্ছে। ফলে মোটা অংকের লোকসান গুণতে হচ্ছে কারখানা মালিকদের। নেসকোর বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রে সমস্যা সমাধানে তাগাদা দিলেও পরিস্থিতির কোন উন্নতি হচ্ছে না। একই অবস্থা বিরাজ করছে শপিং মার্কেট, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক গ্রাহকদের ক্ষেত্রেও। শহরের কাপড় মার্কেটের থ্যাংকস ক্লথ স্টোর-২ এর মালিক একরামুল হক জানান, লোডশেডিংয়ে তাদের ব্যবসায় মন্দা চলছে। দিনে-রাতে ৪-৫ বার বিদ্যুৎ যাওয়া-আসার ঘটনা ঘটছে। লোডশেডিংয়ের পর বিদ্যুৎ আসলেও এক ঘন্টাও থাকছে না। আবার কখনো ১৫-২০ মিনিট পর চলে যাচ্ছে। ক্রেতারাও বিরক্ত হয়ে চলে যাচ্ছেন।

শহীদ জিকরুল হক সড়কস্থ একতা প্রিন্টিং প্রেসের ম্যানেজার রেজাউল ইসলাম রিপন বলেন, বার বার বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় বিপদে পড়েছি। অর্ডারমত ছাপার কাজ ডেলিভারী দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিদিনই কর্মঘন্টা নষ্ট হচ্ছে। কাজ না হলেও শ্রমিক-কর্মচারীদের বসিয়ে বেতন গুণতে গিয়ে লাভই থাকছে না।শহরের কয়ানিজপাড়ার গৃহবধূ আফরোজা বেগম লোডশেডিংয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, বাচ্চাদের লেখাপড়া ও গৃহস্থি কাজকর্মে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। এই গরমের আমরা অতিষ্ঠ বিদ্যুতের লুকোচুরি খেলায়।

সৈয়দপুর বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আমিনুল শিল্প গ্রুপের মালিক আমিনুল ইসলাম নেসকোর ওপর ক্ষোভ ঝেড়ে বলেন, দেশে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উদযাপিত হলেও স্থানীয় শিল্প-কারখানাগুলো তা পাচ্ছে না। ফলে সহ¯্রাধিক ছোট-বড় শিল্প কারখানা সংকটে পড়েছে। এর মধ্যে বিসিক নগরীর ৪০টির মত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আগে এসব প্রতিষ্ঠানে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে আলাদা ফিডার দেয়া হয়েছিল। বর্তমানে ওই ফিডারের অস্তিত্ব নেই। এই ফিডার থেকে আশেপাশের আবাসিক এলাকায় অসংখ্য সংযোগ দেয়া হয়েছে। চলমান লোডশেডিংয়ের সঙ্গে কারিগরি ত্রুটির নামে যখন-তখন বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে বিসিক নগরীর। আমরা কারখানা চালাতে গিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছি। প্রতিদিন ২ থেকে ৪ ঘন্টা করে কর্মঘন্টার অপচয় হচ্ছে। কারখানায় উৎপাদনের কাঁচামাল নষ্ট হচ্ছে অহরহর। চলমান সমস্যায় দৈনিক ১০ লাখ টাকা ক্ষতি হচ্ছে বিসিক মালিকদের। সমস্যা সমাধানে নেসকো কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিলেও সমাধান পাচ্ছি না মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও। বিশেষ করে প্লাইউড, প্লাস্টিক, জুট, বিস্কুট ও কাগজ কারখানায় ক্ষতি হচ্ছে সর্বাধিক। তিনি স্থানীয় শিল্প কারখানাগুলোকে বাঁচাতে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করার দাবি জানান।

জানতে চাইলে, নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানী (নেসকো) সৈয়দপুর বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান লোডশেডিংয়ের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, চাহিদার তুলনায় কম বিদ্যুৎ পাওয়ায় লোডশেডিং হচ্ছে। বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন ক্ষমাতর চেয়ে কম বিদ্যুৎ উৎপাদন হওয়ায় চাহিদামত বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। ঘাটতি পূরণের জন্য উচ্চ পর্যায়ে জানানো হয়েছে। আমরা সব শিল্প-কারখানায় বিদ্যুৎ নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। আর বিসিকের ফিডার আলাদা করার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ