চিরিবন্দরের মা ছেলে অপহরন তেতুঁলিয়ার এএসপি সারোয়ার কোটি টাকার বাড়ী করেছেন


মোঃ কামরুল ইসলাম কামু, পঞ্চগড়ঃ

পঞ্চগড়ের তেতুঁলিয়া উপজেলার একজন সৎ ও গুনী শিক্ষক ছিলেন শিক্ষক মোঃ মতিউর রহমান। তার ছেলেকে মানুষের মতো মানুষ করবেন। এ ছিলো তার স্বপ্ন। তিনি ঠিক পথেই এগেচ্ছিলেন । কিন্তু মানুষও করলেন। তার নাম মোঃ সারোয়ার কবীর। এলাকায় এক সময় তার বেশ সুনাম ও ছিলো। কিন্তু পুলিশে চাকুরী করার পর বদলে যায় সে। অনেক কস্টের সংসারে তার বাবা তাকে শিক্ষিত করে তোলে উজ্জল স্বপ্নের আশায়। স্কুল-কলেজ পেরিয়ে রাজশাহী বিশ্ববদ্যালয় হতে বিবিএ এমবিএ শেষ করে। এরপর২০১৪ সালে ৩৩ তম বিসিএস ক্যাডারে পুলিশ ক্যাডারে নিয়োগ পায়। সেই ছেলে মোঃ সারোয়ার কবীর সিআইডি রংপুরে যোগদান করে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসাবে। কর্মরত সিআইডি’র অপরাধ তদন্ত বিভাগে।

এএসপি সারোয়ার কবীর দিনাজপুরের চিরিবন্দরের মা ছেলেকে অপহরণ ঘটনায় জড়িত। তাদের অপহরণ করে মুক্তি পণ চাওয়ার অভিযোগে দিনাজপুর জেলা পুলিশ তাকে সহ আরো দুজন পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় বুধবার তাদের আদালত তাদের জেল হাজতে পাঠান।

জানা যায় গ্রেপ্তার হওয়া এএসপি সারোয়ার কবীর ওরফে সোহাগ পঞ্চগড়ের তেতুঁলিয়া উপজেলার কালারাম গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. মতিউর রহমানের ছেলে। বাবা স্থনীয় কাজী শাহাবউদ্দীন গার্লস স্কুল এন্ড কলেজে বিএসসি শিক্ষক ছিলেন। পরিবারে এক েেছেলে ও এক মেয়র মধ্যে  সারোয়ার কবীর ছিলেন মেধাবী। চাকরী হওয়ার পর ২০১৬ সালে ঠাকুরগাওয়ের এক পুলিশ কর্মকতার্র মেয়েকে বিয়ে করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসী জানান, সারোয়ার কবির চাকরিতে যোগদানের কয়েক বছরের মাথায় তেঁতুলিয়া উপজেলায় ডাঙ্গিবস্তি এলাকায় কোটি টাকার বাড়ি নির্মাণ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে আগে থেকেই মাদক গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। তবে এ বিষয়ে সারোয়ারের পরিবারের কারো সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে মা ও ছেলেকে অপহরণ করে মুক্তিপণ চাওয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তার সিআইডির কনস্টেবল আহসান উল ফারুকের বাড়ি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার দলগ্রামে। তাঁর ডাকনাম পুলক। তিনি রংপুরে চাকরি করলেও বাড়ি থেকে যাতায়াত করতেন। ঘটনার দিনেও বাড়ি থেকে সেখানে গিয়েছিলেন।

পারিবারিক সূত্র জানায়, তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় আহসান। স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক না টেকায় দুই দশকেরও বেশি সময় আগে তিন ভাইকে নিয়ে তাঁর মা দলগ্রামে বাবার বাড়িতে চলে যান। শিক্ষকতা করে সেখানেই সন্তানদের বড় করেন তিনি। এসএসসি পাস করার পর আহসান যোগ দেন পুলিশে। তাঁর ছোট ভাই কারমাইকেল কলেজের শিক্ষক। আরেক ভাই একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন। ওই কনস্টেবলের স্ত্রী স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত। আহসানের মামা রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান। মূলত তিনিই মানুষ করেছেন আহসানসহ অন্য ভাইদের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘটনার দিন ছুটিতে বাড়িতেই ছিলেন সিআইডির ওই কনস্টেবল। এএসপি সারোয়ার কবিরের ডাকেই নিজের মাইক্রোবাস নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন তিনি। পরবর্তী সময়ে চিরিরবন্দরে তাঁর মাইক্রোবাসটিই আটক হয়। স্থানীয় লোকজন আহসানুল হককে ‘ভালো’ ছেলেই হিসেবেই জানে। এর আগে তাঁর বিরুদ্ধে এ ধরনের কোনো অভিযোগ কেউ শোনেনি বলে জানিয়েছে তারা। 

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। গত বছর টাকা জমা দিয়েও করোনার কারণে হজে যেতে পারেননি।আহসানের স্ত্রী শামীমা জাহান  বলেন, ‘আমার স্বামী নির্দোষ। বদলিজনিত কারণে তিনি বাড়িতে ছিলেন। কিন্তু এএসপি তাঁকে নির্দেশ দিয়ে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন।’ সিআইডির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) হাসিনুর রহমানের বাড়ি দিনাজপুরের বিরল উপজেলার বিজোড়া ইউনিয়নের রসুল সাহাপুর গ্রামে। ওই গ্রামের কৃষক গোলাম মোস্তফার ছেলে তিনি। স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, হাসিনুরের বাবা খুব ভালো মানুষ। তবে হাসিনুরের আচরণের কারণে এলাকায় কেউ তাঁকে পছন্দ করে না। তিনি গ্রেপ্তার হওয়ায় খুশি গ্রামবাসী। কারণ হাসিনুর নিজ গ্রামের মানুষকে ‘মানুষ মনে করতেন না কখনো’।বিজোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন  জানান, ১০ বছরের বেশি সময় ধরে চাকরি করছেন হাসিনুর। ছেলেবেলা থেকে এমনিতে এলাকার কেউ তাঁকে পছন্দ করে না। তার ওপর চাকুরিতে যোগদানের পর থেকে টাকার গরমে হাসিনুর হয়ে ওঠেন আরো বেপরোয়া। 

তিন সদস্য গ্রেপ্তারের দায় সিআইডি নেবে না বলে জানিয়েছেন রংপুর সিআইডির এসপি (পুলিশ সুপার) আতাউর রহমান। তিনিবলেন, ‘তাঁরা আমার অনুমতি না নিয়ে চিরিরবন্দরে অভিযানে গেছেন। তাঁদের মধ্যে এএসআই ও কনস্টেবল ২১ আগস্ট থেকে ১০ দিনের ছুটিতে ছিলেন। তাঁরা একটি অভিযোগের ভিত্তিতে সেখানে যান। সরকারি গাড়ি ব্যবহার না করে এবং অনুমতি ছাড়াই তাঁরা ভাড়া করা গাড়ি নিয়ে অপারেশনে যান। তাঁদের অপকর্মের দায়ভার সিআইডি নেবে না।’ তিনি আরো বলেন তাঁদের ব্যাপারে ইতিমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ