দর্শনার্থীদের নজড় কাড়ছে কাকিনার সূর্যমুখী বাগান


হাসানুজ্জামান হাসান, লালমনিরহাটঃ

একটা সময় ছিল যখন সুন্দর কিছু দেখে মানুষ চোখ মুদে গেঁথে নিতো মনে। এখন মনে গাঁথার আগেই ছবি তুলতে ব্যস্ত হচ্ছেন ফোনে। কেউ তুলছেন সেলফি কেউ ছিঁড়ছেন ফুল"কেউ হাটছে গল্প-গুজব করছে! এমন চিত্র লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা মহিমারঞ্জন স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের পশ্চিমে ১শত গজ দূরে স্থানীয় কৃষক খোরশেদ আলম(৩৪)এর সূর্যমুখী ফুল বাগানে।

আর এভাবেই এই বাগানটি দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছে শত শত দর্শনার্থী। সূর্যমুখী বাগানে ‘দর্শনার্থী’র উৎপাতে বিপাকে চাষি। শুধু স্থানীয় নয় বাগানটিকে এক নজর দেখার জন্য বা একটি সেলফি তোলার জন্য প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন উৎসুক জনতা। এমনকি ভিন্নজেলা থেকেও অনেকেই ঘুরতে আসছেন এখানে। কাকিনার মানুষের পছন্দের স্থানে পরিণত হয়েছে এই বাগানটি।

কৃষি কর্মকর্তারা  জানায়, এ বছর কৃষি সম্প্রসারণ  অধিদপ্তরের সহায়তায় উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু কৃষক সূর্যমুখী ফুল চাষ করেছেন। কৃষকদের বিজ ও সার দেয়া হয়েছে। এছাড়াও কৃষকদের বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা এবং সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। মনোমুগ্ধকর এই পরিবেশে একটু সময় কাটানোর জন্য আর হাজার হাজার সূর্যমুখী ফুলের হাসির ঝিলিক দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে উৎসুক জনতা এসে ভিড় করছেন।

সূর্যমুখী ফুল দেখতে আসা দর্শনার্থীদের সংখ্যা এতই বেশি যে তাদের অবাধ বিচরণে হুমকিতে পড়েছে বাগানটি। এতে বিপাকে পড়েছেন মালিক পক্ষ। অনেকেই ছবি তোলার জন্য ঢুকে পড়ছেন বাগানের ভেতর। ফুলের চেয়ে বেশি দর্শনার্থীর সংখ্যা। দর্শনার্থীদের অবাধ চলাফেরায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে গাছ ও ফুল। কেউ কেউ জোর করে ছিঁড়ে নিচ্ছেন ফুল, আবার কেউ নিতে চান আস্ত গাছ। ফসলের মাঠের মাঝখানে সূর্যমুখী ফুলের বাগান। ফুটে আছে হাজার হাজার হলুদ বর্ণের সূর্যমুখী ফুল। যে দৃশ্য প্রকৃতিপ্রেমীদের মন জয় না করার কোনো উপায় নেই। সম্প্রতি এই দৃশ্যটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকেই বাগানটি এক নজর দেখতে ছুটে আসছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা।

সূর্যমুখী ফুল বাগানের দেখতে আসা দর্শনার্থী প্রিয়াঙ্কা রায় বলেন, আসলে একসঙ্গে এতগুলো সূর্যমুখী ফুল আগে কখনো দেখা হয়নি। তাছাড়া কাকিনায় সূর্যমুখীর বাগান আগে কখনও আমি দেখিনি তাই এখানে এসেছি। দর্শনার্থী জানান রফিকুল জানায়, আমি ঢাকায় থাকি। কিছুদিন ধরে আমার বন্ধুবান্ধব এখানে এসে ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করে। সেটা আমি দেখতে পাই। আর সেখান থেকেই বাগানটি নিজের চোখে দেখার আগ্রহ জন্মে। তাই বাড়িতে আসার সঙ্গে সঙ্গে এখানে চলে আসি।

আরিফ উদ্দিন নামের একজন দর্শনার্থী জানান, এই সূর্যমুখী ফুল বাগানটি মানুষের নজরে আসছে। তাই আমরাও সৌন্দর্য উপভোগ করতে সবাই মিলে দেখতে এসেছি। খুব ভালো লাগলো।পরিবেশটা খুব সুন্দর। বাগানটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা বাগান মালিক খোরশেদ আলম জানান, দর্শনার্থীদের সংখ্যা এতটাই বেশি যে এখন বাগানের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা আমাদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি সারাদিন এখানেই পড়ে থাকি।কারণ দর্শনার্থীরা অনেক সময় ভেতরে ঢুকে গাছ এবং ফুল দুটোই নষ্ট করে। প্রতিদিন শত শত মানুষের আনাগোনা এখানে। এত মানুষ সামাল দেয়া আমার জন্য অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দা সিফাত জাহান জানান, সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের উৎসাহ দেয়া হচ্ছে।স্থানীয় কৃষকদের ফসলটি চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে।এক কেজি সূর্যমুখী বীজ থেকে আধা লিটার ভোজ্যতেল উৎপাদন করা যায়। আশা করা হচ্ছে খোরশেদ আলমের কাযর্যক্রম দেখে এখানকার কৃষকেরা সূর্যমূখি চাষে পদক্ষেপ নিবে। আগে এই  এলাকায় সূর্যমুখী আবাদ না হওয়ায় দর্শনার্থীদের সংখ্যা একটু বেশি। কৃষকের ক্ষতি না করে এবং বাগান নষ্ট না করে সেলফি তোলা এবং আনন্দঘন সময় কাটানোর জন্য দর্শনার্থীদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়ের কারণে বাগানের সৌন্দর্য অনেকটাই বিনষ্ট হচ্ছে। আগত দর্শনার্থীরা যদি আরেকটু সচেতন হন তাহলে সূর্যমুখী বাগান তার সৌন্দর্য ফিরে পাবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ