কুড়িগ্রামে কনকনে ঠান্ডায় ১ শ্রমিকের মৃত্যু


রাশেদ স্টাফ রিপোর্টার  কুড়িগ্রামঃ

কুড়িগ্রামের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া শৈত্যপ্রবাহ আরো তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত ২৪ ঘন্টায় হুল ফোটানো কনকনে ঠান্ডা আর উত্তরের সিরসিরি হাওয়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। মানুষ ঘরের বাহিরে থাকতেই পারছে না। উত্তর জনপদ এখন কার্যতঃ হিমঘরে পরিণত হয়েছে। ৩১জানুয়ারী রবিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ৫ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। হুল ফুটানো কনকনে ঠান্ডায় শীতজনিত রোগে আত্রান্ত হয়ে রাজারহাটে ইরি-বোরো চারা তুলতে গিয়ে মোঃ আজাদ আলী(৪৩) নামের এক যুবক মারা গেছে। 

প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে এ অঞ্চলে তাপমাত্রার পারদ নিম্নগামী থাকায় মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। সবচেয়ে বেশি দূর্ভোগের মুখে রয়েছে শিশু ও বৃদ্ধরা। লাগাতার শৈত্যপ্রবাহের কারনে ভরা ইরি-বোরো মৌসুমে তীব্র ঠান্ডায় পানিতে নেমে কৃষি শ্রমিকরা চারা রোপন করতে না পারায় বোরোধান চাষ ব্যাহত হচ্ছে। তীব্র ঠান্ডার কারনে কৃষিতে বিপর্যয়ের আশংকা করা হচ্ছে। এদিকে কাজ করতে না পারায় কৃষি শ্রমিকরা খাদ্য সংকটের মুখে পড়েছে ।

এদিকে রাজারহাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের কেন্দ্রা মৌজার মৃত জহুর উদ্দিনের পুত্র মোঃ আজাদ আলী(৪৩) সহ আলাম কালাম ও মোস্তাককে নিয়ে ৩১জানুয়ারী রবিবার ভোরে গোদ্দারের ব্রীজের পাশে কনকনে ঠান্ডায় ইরি-বোরো চারা তুলতে যায়। চারা উত্তোলনের সময় আজাদ আলী টলে পড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় বলে ওই এলাকার ইউপি সদস্য বিপ্লব আলী ও সাবেক ইউপি সদস্য মাইনুল ইসলাম নিশ্চিত করেন।

জেলার হাসপাতাল ও বেসরকারি ক্লিনিক গুলোতে শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে রোগী ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে । উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো থেকেও শীত জনিত কারনে রোগী ভর্তির খবর পাওয়া গেছে। বিশেষ করে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে ডায়রিয়া,নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ নানা শীত জনিত রোগে। বৃদ্ধদের অধিকাংশই শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতলে চিকিৎসা নিচ্ছে।

এদিকে ঘনকুয়াশা ভেদ করে দিনের ১২টার দিকে সূর্য কিছু ক্ষনের জন্য দেখা দিলেও উত্তাপ নেই। এ অবস্থায় উত্তরের হিমেল হাওয়া ও কনকনে ঠান্ডায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও দিনের বেলাতে আগুনের কুন্ডলী জ্বালিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা করছে ছিন্নমূল মানুষ। বিকেল ৫ থেকে ৬ টার মধ্যে রাস্তা, বাজার ঘাট, ঘরবাড়িসহ পুরো এলাকা ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ছে যা পরদিন সকাল ১১ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত থাকছে । ফলে হাট বাজার ও রাস্তা-ঘাটে জন সমাগম কমে গেছে।

রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষন কেন্দ্রের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, ৩১জানুয়ারী রবিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রাজারহাটে রেকর্ড করা হয় ৫ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আরো ৭২ঘন্টা এরকম পরিস্থিতি থাকবে বলেও জানান তিনি।

ঠান্ডার পারদ নিম্নগামী হওয়ায় অস্বাভাবিক কনকনে ঠান্ডার মুখে পড়েছে মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ছিন্নমূল পরিবারের মানুষজন। গরম কাপড়ের অভাবে চরম দুর্ভোগের মুখে রয়েছে, ছিন্নমূল, হতদরিদ্র পারিবারের শিশু ও বৃদ্ধরা। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে শীতের শুরুতে কিছু কম্বল বিতরণ করা হলেও তা অনেকের ভাগ্যে জোটেনি। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ফারাজী পাড়ার কৃষক আবুল হোসেন ও মোজাহার আলী জানান, তীব্র শীতের কারণে কাজে কর্মে বের হওয়া যাচ্ছে না। কিছুক্ষণ পানিতে কাজ করলে হাত পা অসাড় হয়ে যাচ্ছে। যারা দিনমজুর তারা কাজকর্ম করতে না পেরে সমস্যায় পরে গেছে।

এই গ্রামের ফাতেমা বেগম, লাইলি ও আনোয়ারা জানান, ঠান্ডায় রাতে ঘুম হয়না। পীঠ অসাড় হয়া যায়। সন্তানরা সর্দি-কাঁশিতে আক্রান্ত হচ্ছে। চিলমারী উপজেলার রমনা ইউনিয়নের কৃষি শ্রমিক আকবর হোসেন জানান, এত ঠান্ডা ঘরের ভেতরে থাকায় এখন আমাদের কঠিন হয়ে পড়েছে, এ অবস্থায় ঠান্ডায় পানিতে নেমে চারা লাগালে মরে যাবো। 

উলিপুর উপজেলার ভ্যান চালক ইয়াছিন আলী জানান, কয়েকদিন ধরে রাতে দিনে সমান তালে ঠান্ডা পড়েছে। এখন যে অবস্থা তাতে বাহিরে বের হওয়ায় মুশকিল। গরম কাপড় নেই যে গায়ে দিয়ে ভ্যান নিয়ে বের হবো। কামাই না থাকায় বেশ কষ্টে আছি। এরকম দুর্ভোগের মুখে রয়েছে অনেকেই। এখন যেন উত্তরের হিমেল হাওয়ায় গোটা জেলা কাঁপছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ