বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ইয়ামিনের মহতি উদ্যোগ বৃদ্ধদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে পঞ্চগড়ে ‘লাস্ট পেজেস্ ওফ দ্য ডায়েরি’র যাত্রা শুরু


মো. কামরুল ইসলাম কামু,পঞ্চগড়ঃ

সমাজে বয়স্ক মানুষের বর্তমান পরিস্থিতি অনেকটাই অসহায়। বিশেষ করে কোভিড-১৯ এর কারনে ইচ্ছেমত হাঁটাচলা-খোশগল্প করা, একে অপরের সাথে মন খুলে কথা বলা, প্রতিবেশী বা স্বজনদের সাথে দেখা করা তাদের জন্য কষ্টকর হয়ে গেছে। তারাও ‘সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলা'-মানতে গিয়ে একবারেই গৃহবন্দী। যেখানে প্রযুক্তির এই যুগে কোভিড-১৯ এর বিশেষ নিষেধাজ্ঞা মেনে সকল শ্রেনীর পেশার মানুষ নেট জগতে বিচরণ করছেন দিনের বেশির ভাগ সময়েই। 

তারা যাবতীয় তথ্য, খবর শুনছেন বিনোদনও নিচ্ছেন বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তাতে করে সাধারণ মানুষ নিজেকে খুব একটা বন্দী ভাবছে না বা একাকিত্ব ও তেমন বোধ করছেন না। কিন্তু বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তিরা যারা মোবাইল ফোনে বা অন্য যে কোন ডিভাইসের যথাযথ ব্যাবহার না জানার কারনে এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আত্মীয় স্বজনদের যাতায়াত না থাকায় সঠিক কথোপকথনের অভাবে একাকীত্ব বোধ করছেন। তাতে করে তারা মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, ফলে শারীরিক ভাবেও অসুস্থতা বেড়ে যাচ্ছে। 

এ সকল বিষয় মাথায় রেখে ইয়ূথ এসেম্বলি ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় ‘লাস্ট পেজেস্ ওফ দ্য ডায়েরি’ নামে একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন বাংলাদেশ হোম ইকোনমিকস কলেজের খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আসহাব আল ইয়ামিন। যা ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশ এর অপঃরাব পরঃরুবহং পড়ারফ-১৯ জবংঢ়ড়হংব:ংড়পরধষ ধপঃরড়হ রহহড়াধঃরড়হ রফবধং' শিরোনামের কমপিটিশনে টপ টেন আইডিয়াগুলোর মধ্যে একটি হয়।গতকাল রোববার সকালে পঞ্চগড়ের শালবাহানের কালান্দিগঞ্জ নামক এলাকায় বয়স্ক মানুষদের নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে সংগঠনটি। 

এখানে বয়স্ক মানুষদের মাঝে মাস্ক ও সেনিটাইজার বিতরনের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করে তারা। উক্ত অনুষ্ঠানে পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহন ও মন ভলো রাখার বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। উপস্থিত সকলেই খেলায় অংশগ্রহণ করেন ও বিজয়ীদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণ করা হয়। এছাড়া সকলের জন্য সান্তনা পুরষ্কার প্রদানসহ খাবারেরও ব্যাবস্থা করা হয়। এসময় সংগঠনের অন্য সদস্য একই কলেজ ও বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া ওয়াসীমা ও আফসানা মিমি আরবি, মকবুলার রহমান সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী নিশাত পারভীন নিশি, দিনাজপুর সরকারি মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আরনিকা নাওয়ার নোভা ও হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের সোসিওলোজি বিভাগের শিক্ষার্থী শাহনাজ রহমতুল্লাহ। 

টিম লিডার আসহাব আল ইয়ামিন জানান, আমরা দেখেছি কোভিড-১৯ এর এই সময়টাতে একই বাসায়, একই পরিবারের প্রতিটি সদস্য যার যার মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ নিয়ে দাপ্তরিক কাজ, পড়াশোনা অথবা বিনোদনে ব্যস্ত থাকেন। ওই বাসাতেই যদি বয়স্ক কোন ব্যাক্তি থাকেন যিনি ইতস্তত বোধ করে এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করছেন। কখনও বা বারান্দার গ্রীল ধরে দূরের আকাশে তাকিয়ে আছেন চুপচাপ। 

হয়তো নিজের ফেলে আসা অতীত শৈশব, কৈশর, তারুƒন্যের ব্যস্ততম সুন্দর দিনগুলোর স্মৃতি রোমন্থন করছেন অথবা ভাবছেন ‘আমার কি প্রয়োজন ফুরিয়েছে’ এমন হতাশায় মন খারাপ করছেন। তাঁদের কথা চিন্তা করেই ‘লাস্ট পেজেস্ ওফ দ্য ডায়েরি’র যাত্রা শুরু হল। আপাতত পঞ্চগড় জেলা থেকেই এই কর্মসূচি শুরু করা হল। পরবর্তিতে অন্যান্য জেলায় এই কার্যক্রম চালানোর উদ্যোগ আমাদের রয়েছে। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ