পঞ্চগড় তালমা নদী দখল হয়ে যাচ্ছে; নদীটির অববহিকা হুমকির মুখে


মো. কামরুল ইসলাম কামু, পঞ্চগড়ঃ 

পঞ্চগড় শহরের উপকণ্ঠে প্রবহমান তালমা নদী দখরের পায়তারা চলছে। কয়েক দিন ধরে শত শত ট্রলি দিয়ে বালু ফেলে নদীটিকে দখল করছে সৌদি বাংলা এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ইকো ফ্রেন্ড লিমিটেড নামের একটি বেসরকারি কোম্পানি। 

এর আগে নদী দখল করে গড়ে উঠেছে হিমালয় বিনোদন পার্ক নামের একটি বিনোদন কেন্দ্র। ফলে নদীটি এখন প্রায় অর্ধমৃত অবস্থায়। নদীটি অচিরেই বিলীন হয়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। নদীটি বিলীন হলে পরিবেশ এবং কৃষি অর্থনীতির ওপর বিরাট প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন পরিবেশবাদীরা। 

পঞ্চগড় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, বাংলাদেশ নদী রক্ষা কমিশনের পঞ্চগড় জেলার নদ-নদী, খাল-বিল ও জলাশয় জলাধারভিত্তিক অবৈধ দখলদারদের তালিকা অনুসারে সৌদি বাংলা এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ইকো ফ্রেন্ড লিমিটেড প্রায় সাড়ে ৭ একর নদীর জমি দখল করেছে। বর্তমানে তারা নদীর প্রবহমান ধারায় বালু ফেলছে। অন্যদিকে হিমালয় বিনোদন পার্ক প্রায় সাড়ে ৮ একর জমি দখল করেছে। তালমা নদীর ওই এলাকায় এলজিইডি একটি রাবার ড্যাম্প স্থাপন করেছে। 

এই ড্যাম্পের মাধ্যমে খরা মৌসুমে স্থানীয় কৃষকদের বিভিন্ন আবাদে কেনাল সেচের মাধ্যমে পানি দেওয়া হয়। স্থানীয় কৃষকরা জানান, নদী ভরাট করার  ফলে পানিশূন্য হয়ে পড়েছে তালমা। ফলে চাষাবাদ নষ্ট হয়ে যাবে। কৃষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বামনপাড়া এলাকার খতিবুল ইসলাম জানান, অনেক দিন থেকেই প্রশাসনের নাকের ডগায় তালমা দখল হয়ে যাচ্ছে। 

নদীটি মরে গেলে এলাকায় কোনো প্রকার কৃষি হবে না। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) পঞ্চগড় জেলা কমিটির সভাপতি এ কে এম আনোয়ারুল খায়ের জানান, প্রকাশ্যে তালমা নদীকে হত্যা করা হচ্ছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে আমরা আন্দোলনে যাব। এদিকে গতকাল সকালে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমিনুল ইসলাম এবং সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু আক্কাস আহামদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। 

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, নদীর চলমান প্রবাহ বালু ফেলে বন্ধ করা হয়েছে। আমরা নদী ভরাটের কাজ বন্ধ করেছি। একটি তদন্ত রিপোর্ট তৈরির কাজ চলছে। অচিরেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন জানান, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ নদী রক্ষা কমিশন নদী খাল বিলের দখলদার হিসেবে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় ১৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান, সদর উপজেলায় ৯২ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এবং দেবীগঞ্জ উপজেলার ২২ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়েছে। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ