হিলিতে বাদাম বেচে চলে আলেমুলের সংসার


মোসলেম উদ্দিন, হিলি (দিনাজপুর)ঃ

বাদাম,এই বাদাম, লাগবে নাকি বাদাম? গলায় ডালী ঝুলিয়ে দিনাজপুরের হিলি বাজারের অলিগলি ঘুরে বাদাম বিক্রি করছে ৩৭ বছর বয়সী আলেমুল আলী। প্রতিদিন পুরো হিলি শহর ঘুরে ৫ থেকে ৬ কেজি বাদাম বেচেন তিনি। 

আর তা থেকে লাভ হয় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা এবং এই আয় দিয়ে চলে আলেমুলের সংসার।  ৭ বছর ধরে বাদাম বিক্রি করে আসছেন আলেমুল। প্রতিদিন সকাল ৯টায় গরম গরম বাদাম ডালীতে সাজিয়ে শুরু হয় তার কর্মজীবন। রোদ,বৃষ্টি, ঝড় কিংবা প্রচন্ড শীতকে উপেক্ষা করে তার এই পথ চলা।

জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার বাগজানা ইউনিয়নের পাশে মাহালী  পাড়ায় আলেমুলের বসবাস। এক ছেলে এক মেয়ে স্ত্রী ও তার মাকে নিয়ে থাকে সে। নীলফামারি জেলায় তার স্থায়ী বাড়ি। প্রায় ২০ বছর যাবৎ এখানে থাকেন তিনি। জীবনে অনেক ঘাতপ্রতি পেরিয়ে আজ এখানে। প্রথমে রিকশা চালিয়েছে সে। আল্প আয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে আলেমুল। 

চিন্তা-ভাবনায় আজ তার শরীর অকেজো হয়ে পড়েছে। সংসারে তার পাঁচ জন খানেয়ালা,এই ছোট ব্যবসা থেকে সকল চাহিদা মেটাতে হয় তাকে। সেই সকালে গরম ভাত খেয়ে, গরম বাদামের ডালা গলায় নিয়ে, চলে সারাদিন। অনেক ক্ষুধা লাগলেও টাকার মায়ায় কোন কিছু খায় না আলেমুল। সে ভাবে ৩০ টাকা দিয়ে খাবার কিনে খাবো, থাক? ৩০ টাকা থাকলে মা বাচ্চাদের চাহিদা মেটাতে পারবো। 

বাদাম ব্যবসায়ী আলেমুলের নিকট বাদাম কিনতে আসা কয়েকজন ক্রেতার সাথে কথা হয়, তারা বলেন, ইনার বাদাম ভাজা খুব কড়া,খেতেও অনেক স্বাদ। আবার লবণেও তৈরি করে বিভিন্ন মসলা দ্বারা। প্রতিদিন হিলি শহরের বিভিন্ন এলাকায় তিনি ঘুরে বেরিয়ে বাদাম বিক্রি করে। আমি তার নিকট প্রতিদিন বাদাম কিনে খায়।

কথা হয় ঐ বাদাময়ালা আলেমুলের সাথে, চোখ-মুখ শুকনা হলেও হাসিটা তার অতিব মিষ্টি। আর মিষ্টি হাসি ও বিষন্নতা নিয়ে সে বলেন, কষ্টের সাথে ভাই আমার বসবাস। প্রথমে অল্প বয়সে আমার বল্যবিবাহ হয়েছিল, সংসারটা বেশি দিন টিকেনি। ছোট বউ,বয়স অল্প। তাই সংসারে অভাব-অনটন দেখে সে পালিয়ে গেছে। 

আবার যখন ভারস্থ বয়স ২৫ বছরে বিয়ে করছি। বিয়ে করা প্রায় ১২ বছর হলো। দুই ছেলে-মেয়ে। নিজের কষ্ট হলেও বউ,বাচ্চা ও মাকে নিয়ে অনেকটাই সুখে আছি। বাড়িতে প্রতিদিন বউ,মা মিলে ৫ থেকে ৬ কেজি বাদাম ভাজি। আবার গরম খাবার খেয়ে বাদাম নিয়ে বের হই সারাদিনের মনে। ব্যবসা শেষে, রাতে যা লাভ হয় তাই দিয়ে বাজার খরচ করে বাড়ি ফিরি। এটাই আমার নিত্যদিন জীবন-সংসার।

আলেমুলের স্থানীয় ইউপি সদস্য আরিফ হোসেন জানান, আলেমুলকে আমি ব্যক্তিগত ভাবে চিনি। বাগজানা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তার পরিবারটিকে বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে আসছি। তার স্ত্রীকে ৫ বছর মেয়াদি মাটি কাটার কাজ দিয়েছি এবং আলেমুলকে একটা ভিজিডি অথবা ভিজিএফের কার্ড করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিবো।

তিনি আরও জানান, তার মা লতিফা বেগমকে একটা বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ