পাঁচবিবিতে বিধবা-প্রতিবন্ধী রুলি একটি ভাতা কার্ডের আশায় ঘুরছে দ্বারেদ্বারে


মোসলেম উদ্দিন, হিলি (দিনাজপুর)ঃ

জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার শালাইপুরের কুয়াতপুর গ্রামের মৃত মনোয়ার হোসেনের বিধবা-প্রতিবন্ধী স্ত্রী রুলি বেগম (৩৩) একটি ভাতার কর্ডের আশায় ঘুরছে দ্বারে দ্বারে। সন্তানদের মুখে আহার তুলে দেওয়ার জন্য বিধবা রুলি পঙ্গুত্ব জীবন নিয়ে মানুষের বাড়িতে কাজ করে আসছেন। শত কষ্ট আর যন্ত্রনার মাঝেও বসে থাকেন না তিনি। একটি প্রতিবন্ধী বা বিধবা কার্ড পেলে সামনের পথ চলতে সহজ হতো এই রুলি বেগমের।

ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস অল্প বয়সে দুই বছর আগে মারা যান রুলি বেগমের স্বামী। সংসারে ৮ বছরের এক মেয়ে ও ৪ বছরের এক ছেলে। ছেলে-মেয়েরা পড়াশুনা করে। স্বামী ছিলেন একজন দিনমজুর, তার উপার্জনে চলতো সংসার। স্বামী মারার যাওয়ার পর থেমে যায় তার সংসারের চলার গতি। মাত্র ৪ শতকের ওপর তার একটি বাড়ি, আবাদি নেই কোন জমি। রুলি বেগম একজন জন্মপ্রতিবন্ধী, শরীরে নেই তেমন জোর, তার বাম পা একেবারে অকেজো, কোন রকম চলাফেরা করেন তিনি। 

অনেকটায় স্বামীর উপর ভর করে চলতে হতো তাকে। স্বামী মারা যাওয়ার পর আজ তিনি দিশেহারা। একটি কুড়ে ঘর, তার মাঝে দুই সন্তান নিয়ে বসবাস, একটু ঝড়-বৃষ্টিতেই নড়ে উঠে তাদের এই ঘর। সারাদিন রুলি বেগম মানুষের বাড়ি বাড়ি ঝিয়ের কাজ করে যা পান তাই এনে তুলে দেন সন্তানদের মুখে।

কথা হয় রুলি বেগমের সাথে, তিনি বলেন, কখনও ভাবতে পারিনি এতো অল্প বয়সে স্বামীকে হারাতে হবে। আমি তো অক্ষম মানুষ, পায়ে তেমন কোন জোর পাই না। তারপরও সন্তানদের জন্য আমার এই সংগ্রাম। স্বামী থাকতে ছেলে-মেয়ে, সংসার আর স্বামীকে নিয়ে ছিলো আমার কর্ম ব্যস্ততা। আজ আমি একজন প্রতিবন্ধী-বিধবা নারী। সন্তানদের মুখে হাসি ফুটাতে আমার এই সংগ্রামী পথ চলা। আমি মূর্খ মানুষ, কোন ডান-বাম বুঝিনা। একটি প্রতিবন্ধী কার্ডের কার্ডের আশায় এযাবৎ বিভিন্ন মহলে ধন্যাধরে ছিলাম, কিন্তু কোন কাজ হয়নি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য বাবু মিয়া জানান, বর্তমান আমরা বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ও বিধবা ভাতা কার্ডের জন্য গ্রামের সবাইকে অবগত করেছি। রুলি বেগমকে আমি চিনি, সে একজন অসহায় বিধবা প্রতিবন্ধী নারী। আগামীতে আমি তার একটি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো।

পাঁচবিবি উপজেলার ৭ নং কুসুম্বা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুক্তার হোসেন জানান, আমার ইউনিয়নে মাইকিং করে বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দিয়ে আসছি। রুলি বেগমকে আমরা দেখি, যদি সে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড পাওয়ার উপযোক্ত হয়ে থাকে তাহলে তাকে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দেওয়া হবে। আর যদি সেটি পাবার উপযোক্ত না হয় তাহলে তাকে বিধবা ভাতার কার্ড অবশ্যই করে দেওয়া হবে।

এবিষয়ে পাঁচবিবি উপজেলা সমাজসেবা অফিসার সেলিম রেজা জানান, রুলি বেগম যদি প্রতিবন্ধী তালিকায় তার নাম থাকে তাহলে তাকে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দেওয়া হবে। তা না হলে তাকে বিধবা ভাতার কার্ড করে দিবো।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ