পঞ্চগড়ে মাছ চাষে পুকুর ইজারা নিয়ে মালিকানা দাবি


মো. কামরুল ইসলাম কামু, পঞ্চগড়ঃ 

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুরে দারুস সালাম কেরাতুল কোরআন হাফেজিয়া মাদ্রাসার পুকুর মাছ চাষের জন্য ভাড়া নিয়ে এখন পুকুর ও পুকুরের আশপাশের জমির মালিক দাবী করে দিন-দুপুরে প্রভাব ও দাপট দেখিয়ে দখল করার অভিযোগ পাওয়া গেছে মকবুল হোসেন নামে ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে । 

গতকাল বুধবার (১১ নভেম্বর)  বিকেলে সরেজমিনে এমন দখলের চিত্র দেখা যায়। জানা গেছে,জমিটির ক্রয় সুত্রে মালিক ভজনপুর দারুস সালাম কেরাতুল কোরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসার। জমি দখলকারী মকবুল হোসেন জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর বাজারের মৃত ফিরোজ আলীর ছেলে। 

মাদ্রাসা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২০০৮ সালের দিকে  ভজনপুর বিজিবি ক্যাম্পের পিছনে ও ভজনপর-গোয়ালঝাড় পাকা সড়কের পাশে ওই মাদ্রাসার নিজস্ব  সাড়ে সাতাশ শতক জমিসহ পুকুরটি মাছ চাষের জন্য  ৩ হাজার টাকার বিনিময়ে চুক্তি নিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন অভিযুক্ত  মকবুল হোসেন। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে তিনি মাছ মাছ চাষ করতেন। 

এভাবে কয়েক বছর যাওয়ার পর তিনি পুকুরের মালিক দাবী করলে মাদ্রাসা কতৃপক্ষ  ও স্থানীয়রা তার কাছে পুকুর ফেরত নিয়ে মাদ্রাসা নামে দখল ও সীমানা দিয়ে রাখে৷ আর এভাবেই মাদ্রাসা জমিটি পড়ে থাকে। এদিকে করোনা ভাইরাসের কারনে মাদ্রাসা  বন্ধ থাকায় এ সুযোগে আবারো ওই ব্যবসায়ী পুকুরলর মালিক দাবী করে পুকুরসহ পুকুরের আশপাশের জমি দখলের চেষ্টা  করে এবং ভারাটে লোকজন এনে জমিতে বাশের বেড়া দিয়ে দখল করে রেখেছেন।

সরজমিনে জানা যায়,পুকুরসহ জমির প্রকৃত মালিক ছিলেন ওই এলাকার মৃত হাসির উদ্দিন, ১৯৮০ সালে তার কাছে ওই এলাকার ইব্রাহিম নামে এক ব্যক্তি ক্রয় করলে পরে ১৯৮৪ সালে তিনি সাড়ে সাতাশ শতক জমি ভজনপুর দারুস সালাম কেরাতুল কোরআন হাফেজিয়া মাদ্রাসা নামে দান করেন এবং তিনি মাদাসা নামে ওই  জমি দলিলের মাধ্যমে রেজিষ্ট্রি করে দেন এবং দীর্ঘদিন ধরে মাদ্রাসার দখলে রয়েছে জমিটি এবং পুকুর খননও করে মাদ্রাসা কতৃপক্ষ। 

এবিষয়ে ভজনপুর দারুস সালাম কেরাতুল কোরআন হাফেজিয়া মাদ্রাসার সভাপতি হারুন -অর রশিদ প্রধান জানান, পুকুরটি মাদ্রাসার নিজস্ব সম্পদ। মাদ্রাসার জন্য স্থানীয়  মৃত ইব্রাহীম নামে এক ব্যক্তি জীবিত থাকা অবস্থায় মাদ্রাসার নামে দান করে দেন এবং তিনি দখল ও রেজিস্ট্রিও করে দেন। কয়েক বছর আগে মকবল নামে এক ব্যবসায়ী ভাড়া নিয়ে এখন নিজের পুকুর ও জমির মালিক দাবি করছে।

একই কথা জানান,সাধারণ সম্পাদক খামিরুল ইসলাম , মাদ্রাসা সম্প্রসারনের জন্য সাড়ে সাতাশ শতক জমি রয়েছে এবং সেখানে একটি পুকুর রয়েছে,আর পুকুরে মাছ চাষ করে যা আয় হতো তা দিয়ে মাদ্রাসার কাজে ব্যয় করা হতো। পুকুরে পাশের বাড়ি মকবুল নামে ওই ব্যবসায়ী মাছ চাষের জন্য ভাড়া চাইলে তাকে চুক্তি ভিত্তিক ভাড়া দেয়া হয় আর এভাবে তিনি বাড়া নিয়ে মাছ চাষ করতেন তার কাছে এখনও ৫শ টাকা বাকী রয়েছে সে টাকা চাইলে ওল্টো জমির মালিক দাবী করেন তিনি।আমরা প্রশাসনের কাছে মাদ্রাসার জমি উদ্ধারে হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এদিকে স্থানীয়রা জানান,ভজনপুর মাদ্রাসা পঞ্চগড় জেলার মধ্যে ঐতিহাসিক ও শ্রেষ্ঠ মাদ্রাসা। স্থানীয়দলর সহযোগীতায় মাদ্রাসাটি পরিচালিত হয়ে আজ আলো ছড়াচ্ছে। তারা আরও জানান বেশ কয়েকবার মকবুলের হাত থেকে পুকুরটি উদ্ধার করেছেন তারা তবে মকবুল নামে ওই ব্যবসায়ী এবার ভাড়াটে লোক ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পুকুর দখল করায় তারা আইনের উপর শ্রদ্ধা  জানিয়ে বিষয়টি প্রশাসনকে অবগত করেন।  

তবে এবিষয়ে মকবুল হোসেন বলেন,এই দাগে আমার জমি রয়েছে তাই আমি ওই জমিতে বাশের বেড়া দিয়ে দখল করেছি।এদিকে তেঁতুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জহুরুল ইসলাম জানান,ভজনপুর হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও মকবুল নামে এক ব্যক্তির মধ্যে জমিসহ পুকুরের মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বের অভিযোগ পেয়েছি। 

বিষয়টি যেহেতু দেওয়ানী আদালতের বিষয় তাই তাদের আদালতের মাধ্যমে সমাধান করার বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া দু-পক্ষ যেন আইনের পরিপন্থী কাজে না যায় সেক্ষেত্রে তাদের পরামর্শ দেয়া হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ