উপকরণের লাগামহীন উচ্চ মূল্য দাম বাড়ছে বেকারী পণ্যের


মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুরঃ

কাল শনিবার থেকে সৈয়দপুরসহ নীলফামারী জেলায় বেকারী পণ্যের দাম বাড়ছে। বিভিন্ন মানের পাউরুটিসহ প্রতিটি পণ্য কিনতে ৩ থেকে ৪ টাকা বেশি গুণতে হবে ক্রেতাদের। করোনাকালে উপকরণের লামাগছাড়া মূল্য বৃদ্ধির ধাক্কায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। 

উৎপাদন খরচ ও পণ্য বিক্রির মধ্যে লাভ (মুনাফা) না থাকায় বন্ধের উপক্রম হয়েছে বেকারী শিল্প। বেকারী ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পণ্যের দাম বাড়ানো ছাড়া বিকল্প দেখছেন না ফ্যাক্টরী মালিকরা। ফলে ফ্যাক্টরী চালানো নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন তারা।সম্প্রতি বেকারি মালিকদের সংগঠনের এক সভায় ওই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। 

স্থানীয় বেকারী মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, করোনাকালে লকডাউনে বেশ কয়েকটি ফ্যাক্টরী বন্ধ হয়ে যায়। লকডাউন তুলে নেয়া হলেও আগের মত ব্যবসা নেই বেকারী পণ্যের। মালিকরা সংকট কাটাতে শ্রমিক ছাটাই করেও ব্যবসায় মন্দা কাটছে না। এর ওপর দফা দফায় বেকারী উপকরণ কাঁচামালের যথেচ্ছা দাম বৃদ্ধির কারণে ফ্যাক্টরী টিকিয়ে রাখা দায় হয়ে পড়েছে। 

বর্তমান বাজার মূল্যে উৎপাদন খরচের তুলনায় পণ্য বিক্রি লাভজনক না হওয়ায় ফ্যাক্টরী চালাতে হিমশিম খাচ্ছে মালিকরা। বেকারী পণ্য উৎপাদনের মূল উপকরণ পামওয়েল (ভোজ্যতেল), ডালডা, চিনি, ময়দা ও ডিম। এসব উপকরণের দাম দফায় দফায় বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। 

বাজারে ১৮৬ কেজির এক ড্রাম পামওয়েল তেল ১১ হাজার ৫০০ টাকার স্থলে ১৭ হাজার ৫০০ টাকা, ১৬ কেজির এক কার্টুন ডালডা ১ হাজার ২০ টাকার স্থলে ১ হাজার ৫২০ টাকা, ৫০ কেজির এক বস্তা চিনি ২ হাজার ৭০০ টাকার স্থলে ৩ হাজার টাকা,৭৩ কেজির এক বস্তা ময়দা ২ হাজার ১০০ টাকার স্থলে ২ হাজার ৩৫০ টাকা এবং ১০০ মুরগির ডিম ৬০০ টাকার স্থলে ৮৫০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। এর বাইরেও রয়েছে নানা প্রকার রাসায়নিক দ্রব্য (ফুডমেড) ও পণ্যের প্যাকেজিং সামগ্রী। 

যার মূল্যও অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও রয়েছে জ্বালানী, বিদ্যুৎ ও শ্রমিক মজুরীর মত মোটা অংকের খরচ। ফলে পণ্যের উৎপাদন খরচের তুলনায় পণ্য বিক্রি লাভজনক হচ্ছে না। কারণ পাঁচ বছর আগে যে দাম ছিল সেই দামেই রয়ে গেছে পণ্যের। ফলে পণ্যের বিক্রয় মূল্য দিয়ে ফ্যাক্টরী চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় ফ্যাক্টরী মালিকরা বেকারী পণ্যের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

সূত্র মতে, নীলফামারী জেলায় ছোট বড় মিলিয়ে ৪৫টি বেকারী ফ্যাক্টরী রয়েছে। এর মধ্যে সৈয়দপুরে রয়েছে ১৫টি ফ্যাক্টরী। উপকরণের চড়ামূল্যের কারণে বেশ কয়েকটি ফ্যাক্টরী কোন রকমে সচল রয়েছে। অন্য ফ্যাক্টরীগুলো সচল থাকলেও লোকসান থেকে বাঁচতে শ্রমিক ছাঁটাই করেছে। 

বেকারী পণ্য বিক্রি কমে যাওয়ায় অনেক ফ্যাক্টরী উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। তারপরও সংকট কাটছে না ফ্যাক্টরীগুলোর। গাউসিয়া কনফেকশনারীর মালিক হাজী মো. আওরঙ্গজেব বলেন, লোকসানের বোঝা বইতে বইতে দেয়া পিঠ ঠেকে গেছে আমাদের। তাই বেকারী শিল্প টিকিয়ে রাখতে কাঁচামালের মূল্য কমাতে সরকারের উদ্যোগ প্রয়োজন।

জানতে চাইলে, বাংলাদেশ ব্রেড বিস্কুট ও কনফেকশনারী প্রস্তুতকারক সমিতি নীলফামারী জেলা শাখার সভাপতি ও সৈয়দপুর ডায়মন্ড কনফেকশনারীর মালিক মো.আখতার সিদ্দিকী পাপ্পু জানান, করোনাকালের ব্যবসায়িক মন্দা ও কাঁচামালের উচ্চমূল্যের কারণে ফ্যাক্টরীগুলো মহাসংকটে পড়েছে। উৎপাদন খরচের তুলনায় পণ্য বিক্রি আয় দিয়ে পোষাচ্ছে না ফ্যাক্টরী মালিকদের। অনেক ক্ষেত্রে লোকসান গুণছে ফ্যাক্টরীগুলো। 

ফলে বেকারী ব্যবসাকে বাঁচাতে সম্প্রতি মালিক সমিতির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণে পণ্যের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। যা কাল শনিবার থেকে কার্যকর হবে। এটি ক্রেতাদের জন্য অসহনীয় হবে না। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে দাম বৃদ্ধির কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। অন্যথায় সিংহভাগ ফ্যাক্টরী বন্ধ হয়ে যাবে। 

একই সঙ্গে কর্মহীন হয়ে পড়বে সহস্রাধিক শ্রমজীবী মানুষ। যা কারো জন্য কাম্য না। তিনি এক প্রশ্নের উত্তরে, বেকারী শিল্প রক্ষায় দ্রুত বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে সরকারি উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানান।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ