সৈয়দপুরে রেলওয়ে স্টেশন মাস্টারের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ

মিজানুর রহমান মিলন, স্টাফ রিপোর্টারঃ

নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনের মাল গুদাম ও ইয়ার্ডে ওয়াগন থেকে পণ্য লোড- আনলোড করা লেবাররা (শ্রমিক) রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. শওকত আলীর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছে । 

রেলওয়ে স্টেশনের মাল গুদাম ও ইয়ার্ডে লেবার সর্দারের দায়িত্ব বন্টন নিয়ে যোগসাজশ,পুরাতন অভিজ্ঞ লেবারদের বাদ দিয়ে বহিরাগত নতুন লেবার নিয়ে রেলওয়ে ওয়াগন থেকে মালামাল খালাসসহ স্টেশন মাস্টারের নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে ওই সংবাদ সম্মেলন করা হয়। আজ শুক্রবার বেলা ১১টায় শহরের শেরে বাংলা সড়কের সৈয়দপুর প্লাজা মার্কেটের রেডচিলি নামক একটি হোটেলে ওই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

এতে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনের মাল গুদাম ও ইয়ার্ডে নতুন ও পুরাতন মিলে ৩৫/৪০ জন লেবার কর্মরত রয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তী ১০/১২ বছর স্টেশনের মাল গুদাম ও ইয়ার্ডে জনৈক ইয়াসিন আলী লেবার সর্দারের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর মৃত্যুর পর স্টেশনের মাল গুদাম ও ইয়ার্ডের লেবার সর্দার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ট্যান্ডেল (তদারক) ও মুন্সি মো. আনোয়ার হোসেন। 

গত ৭/৮ মাস আগে তিনিও মারা যান। এরপর থেকে মৌখিকভাবে লেবার সর্দারের দায়িত্ব পালন করে আসছেন ট্যান্ডেল মো. কাইয়ুম। এ অবস্থায় তিনি গত ২৯ সেপ্টেম্বর সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার বরাবরে লেবার সর্দার হিসেবে তাঁকে স্থায়ীভাবে দায়িত্ব দেয়ার জন্য আবেদন করেন। তাঁর ওই আবেদনপত্রে স্থানীয় সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমান আদেল এবং সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আখতার হোসেন বাদল সুপারিশ করেন। 

ট্যান্ডেল মো. কাইয়ুমের সর্দার হিসেবে দায়িত্বের জন্য করা আবেদনটি গ্রহনও করেন স্টেশন মাস্টার মো. শওকত আলী। কিন্তু তিনি ট্যান্ডেল মো.কাইয়ুমের আবেদনপত্রটি রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তার কাছে না পাঠিয়ে ওই আবেদনপত্র তার দপ্তরেই ফাইলবন্দি করে ফেলে রেখেছেন। 

স্টেশন মাস্টার শওকত আলী পূর্বের লেবার সর্দার মৃত. আনোয়ার হোসেনের পুত্র মো. আফতাব হোসেন ও মো. মোস্তাকের সঙ্গে যোগসাজশ করে মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে লেবার সর্দার ও ট্যান্ডেল হিসেবে তাদেরকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য তাঁদেরই করা আবেদনপত্রটি পাকশী বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা বরাবরে পাঠান বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়। 

অভিযোগে আরও বলা হয়, সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন ইয়ার্ডে প্রায় প্রতিদিনই রেলওয়ের ওয়াগনে পাথরসহ বিভিন্ন মালামাল আসছে। আর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার শওকত আলী ওইসব মালামালের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রকাশ্য যোগসাজশ করে পুরোনো এবং অভিজ্ঞ লেবারদের না নিয়ে বহিরাগত লেবারদের দিয়ে ওয়াগন থেকে পাথর খালাস করাচ্ছেন। 

এতে তিনি মালামাল খালাসের জন্য আমদানিকারকদের কাছ থেকে বেশি পরিমানে অর্থ আদায় করলেও লেবারদের স্বল্প পরিমাণে মজুরী পরিশোধ করা হচ্ছে। আর এভাবে তিনি প্রতিদিন মোটা অংকের অর্থ পকেটস্থ করছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়। তাঁর এমন কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করলে ট্যান্ডেল মো. কাইয়ুমসহ অন্যরা পুরাতন লেবারদের নামে মামলা দিয়ে জেলহাজতে পাঠানোসহ নানা রকম হুমকি দিয়ে আসছেন স্টেশন মাস্টার শওকত আলী। 

এদিকে, স্টেশনের মালগুদাম ও ইয়ার্ডের লেবারদের বাদ দিয়ে বাইরের লেবারদের নিয়ে রেলওয়ে স্টেশনের ইয়ার্ডের ওয়াগন থেকে মালামাল খালাস করার কারণে পুরাতন লেবাররা বিপাকে পড়েছেন। তারা বর্তমানে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের কারণে কাজের অভাবে পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়। 

সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন মালগুদাম ও ইয়ার্ডের লেবার মো. শাহিদ, মো.কছির উদ্দিন, মো. মুরাদ, তৌহিদ লাড্ডান, মো. আজিজুল ইসলাম, আব্দুল মান্নান ও মো. বাবলু প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন। এ নিয়ে কথা হলে সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. শওকত আলী বলেন,ট্যান্ডেল মো.কাইয়ুম সর্দারের দায়িত্বের জন্যআবেদনপ্রাপ্তির কথা স্বীকার করে বলেন পরবর্তিতে তিনি আমার সাথে কোন রকম যোগাযোগ করেনি। 

আফতাব ও মোস্তাকের করা আবেদন পাকশী বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হলেও মো. কাইয়ুমের করা আবেদন কেন পাঠানো হয়নি এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। তবে বাইরের লেবারদের নিয়ে ওয়াগণের মালামাল খালাস প্রসঙ্গে বলেন,পুরাতন লেবাররা ওয়াগন প্রতি পাথর খালাস করতে ৭ হাজার টাকা দাবি করেন। 

তারপরও আমি তাদের বলেছি উভয়ে মিলেমিশে কাজ করো। পণ্য খালাসে স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ