সৈয়দপুরে ডাঙ্গীরপাড় গ্রামের কাঁচা রাস্তাটি চিকলী নদীতে বিলীন :দূর্ভোগে মানুষজন

মিজানুর রহমান মিলন সৈয়দপুর প্রতিনিধি:

নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের পূর্ব বেলপুকুর ডাঙ্গীরপাড় গ্রামের কাঁচা রাস্তাটির প্রায় ১০০ মিটার অংশ চিকলী নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এতে ওই গ্রামের মানুষজন প্রায় এক বছর ধরে কাঁচা রাস্তাটির ভাঙ্গা অংশে নির্মিত একটি সাঁকোর ওপর দিয়ে চলাচল করছেন। বর্তমানে ওই সাঁকোটিরও অবস্থা নড়বড়ে। 

ফলে গ্রামটিতে প্রবেশের একমাত্র কাঁচা রাস্তার ওপর বাঁশ ও কাঠের তৈরি নড়বড়ে সাঁকোর ওপর দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে চরম দূর্ভোগে পড়েছেন গ্রামবাসী। এছাড়াও নদীর ভাঙ্গনে ওই এলাকার পাঁচটি পরিবারের বেশকিছু বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের ওই গ্রামে শতাধিক পরিবারের বসবাস। 

গ্রামে রয়েছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মসজিদ। ওই গ্রামের পশ্চিম পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে চিকলী নদী। গত বছর ডাঙ্গীরপাড় গ্রামে প্রবেশের কাঁচা রাস্তাটির প্রায় ১০০ মিটার অংশ ভেঙ্গে চিকলী নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এতে করে ভাঙ্গা রাস্তা দিয়ে চলাচলে গ্রামের মানুষজন মারাত্মক দূর্ভোগে পড়েন। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট  ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে গ্রামের মানুষের চলাচলের জন্য নদীতে বিলীন হওয়া রাস্তায় একটি সাঁকো নির্মাণ করা হয়। 

কিন্তু বাঁশ ও কাঠের তৈরী ওই সাঁকোটি দিয়ে  গ্রামের মানুষ শুধুমাত্র পায়ে হেঁটে চলাচল করতে পারেন। রিকশা, রিকশাভ্যান ওই সাঁকোর ওপরে নেওয়াই যায়না। এতে করে বিগত এক বছর থেকে  ওই গ্রামের মানুষ জরুরী প্রয়োজনে রিকশা কিংবা রিকশাভ্যান নিয়ে অনেক পথ ঘুরে চলাচল করে আসছেন। 

এদিকে, গত প্রায় এক বছর আগে নির্মিত সাঁকোটির কাঠের পাটাতন নষ্টসহ বাঁশের খুঁটির গোঁড়াগুলো পচে যাওয়ায় অবস্থা একেবারেই খারাপ। তাঁরপরও গ্রামের মানুষজন চিকলী নদীর পাড়ের নড়বড়ে সাঁকোটি দিয়ে  অনেকটা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন।

সম্প্রতি সরেজমিনে কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের পূর্ব বেলপুকুর ডাঙ্গীরপাড় গ্রামে নিয়ে দেখা যায়, সাঁকোটির বেহাল অবস্থা। এক প্রান্তের কাঠের পাটাতন পচে নষ্ট হয়ে গেছে। তারপরও গ্রামের মানুষ অনেকটাই নিরুপায় হয়ে ভাঙ্গা পাটাতন ও নড়বড়ে সাঁকোটির ওপর দিয়ে চলাচল করছেন। এ সময় সেখানে কথা হয় গ্রামের বাসিন্দা মো. আফজাল হোসেনের সাথে। 

তিনি বলেন, সাঁকোটি নষ্ট হয়ে পড়ায় পাঁয়ে হেঁটে চলাচল করাও কষ্টকর হয়ে পড়েছে। দিনের বেলা কোন রকম চলাচল করা সম্ভব হলেও রাতের বেলা সাঁকোটির ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে পারি না। গ্রামের সববয়সী মানুষজন সাঁকোটি নিয়ে  বেকায়দায় রয়েছে। অপরদিকে, চিকলী নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গণে গ্রামের খছর আলী, আবু বক্কর সিদ্দিক, এমদাদুল হক, রেজাউল হক ও মো. রাকিবুল হকের অন্ততঃ ১৫/১৬ টি টিন ও ঘড়ের ঘর, বেশ কিছু গাছপালা চিকলী নদীতে  বিলীন হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। 

গ্রামের অসহায় প্রতিবন্ধী খচ্ছর আলীর স্ত্রী মহছেনা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, নদীত হামার ভিটেমাটি ও দুইটা বসতঘর চলি গেইছে। এখন মুই প্রতিবন্ধী মানুষটাক নিয়া কোনঠে য্যায়া মাথা গোঁজার ঠাঁই পাইম। এদিকে, গত কয়েকদিন টানা  ভারী বর্ষণে কর্মহীন অসহায় মানুষের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে পাওয়া ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করতে গত বুধবার সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাসিম আহমেদ ডাঙ্গীরপাড় গ্রামে যান। 

এ সময় তিনি চিকলী নদীর ভাঙ্গনে বিলীন হওয়া ডাঙ্গীরপাড় গ্রামের ভাঙ্গা রাস্তায় বাঁশের ও কাঠের নড়বড়ে সাঁকোটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। পরে তিনি গ্রামের মানুষের চলাচলে দূর্ভোগ লাঘবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা বলে দ্রুততম সময়ে রাস্তাটি মেরামতের আশ্বাস প্রদান করেন। 

এ নিয়ে সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কৃষ্ণ কমল সরকারের সঙ্গে তাঁর ০১৭১২-৮৪১৫৭১ নম্বর মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর মন্তব্য জানা  সম্ভব হয়নি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ