প্রকৃতির ভিন্ন রুপ পঞ্চগড়ে অতিবৃষ্টি আমন ধান সহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

কামরুল ইসলাম কামু পঞ্চগড়ঃ 

আশ্বিনে শ্রাবণের বৃষ্টি, বৃষ্টি পড়ছে তো পড়ছেই। মনখারাপ এলাকার মানুষের।গত কয়েকদিন টানা বৃষ্টি বিপর্যস্ত করে তোলে জনজীবন। শহরে জলবদ্ধতায় থমকে দাড়াঁয় মানুষের জীবন-জীবিকা। এমন প্রতিকূল আবহাওয়ায় হতবাক হয়ে পড়ে পঞ্চগড়ের মানুষ। পানিতে তলিয়ে যায় ধান শাক সবজি সহ জমির ফসল। 

গত মঙ্গলবার থেকে শনিবার পর্যন্ত বলতে গেলে লাগাতার বৃষ্টিপাত হয়। টানা বর্ষণে তেতুঁলিয়া আবহাওয়া অফিস সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে ২১৭ দশমিক ৭ মিলিমিটার বৃষ্টি। অচল হয়ে পড়ে ব্যবসা-বানিজ্য। দুঃশ্চিতায় মানুষ। অর্থনীতির চাকা বন্ধ হয়ে পড়ে। হায়-হতাশ করতে থাকে সবাই। সরকারের নানা দপ্তরের উন্নয়নমূলক কাজ যেমন; শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান রাস্তাঘাট ব্রীজ-কালর্ভাটের কাজ বন্ধ হয়ে পড়ে। ঠিকাদাররা কাজ শুরুর করতে গিয়ে বৃষ্টি কারনে ফিরে আসে।

চলতি মৌসুমে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা ছিলো প্রখর। প্রায় ৪ মাস ধরে বৃষ্টি কোনো না কোনো ভাবে লেগেই আছে’। তবে গত রোববারের পর তেমন বৃষ্টিপাত নেই’। ফলে ক্ষেতখামার থেকে পানি নেমে গেছে। নদীর পানিও কমে গেছে’। তবু মনে শান্তি নেই কৃষকের। কৃষি বিভাগ বলেছিলো ‘পানি কমে গেলে ধানের পাতা মোড়ানো পোকা থাকবে না’। 

সে আশায় বুক বেঁধে ছিলো কৃষক। তবে হঠাৎ করেই মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত সে আশাকে কেমন জানি ধোয়াঁশা করে দিলো’। মঙ্গলবার বোদা উপজেলার কাজলদিঘী কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়নের বোয়ালমারি বারুনী এলাকায় দেখা গেলো বৃষ্টির পানির তোড়ে আমন ধানের গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। নদীর সীমান ছেড়ে উচুঁ এলাকায় উঠে পড়ে। তার পশ্চিম পাশে বেগুন ক্ষেত একটুর জন্য রক্ষা পেয়েছে বেগুন চাষ করা কৃষকরে মনটা যেনো বিষন্ন। 

কি যেনো ভয় ‘ নীচের সেতসেতে পানির স্তর নিয়ে। খুব যত্নে করে ওই কৃষক বেগুনের গাছগুলি যত্ন করছিলেন’। তারপরেও আশা তার ‘ হয়তো আর বৃষ্টি হবেনা’। ওই ইউনিয়নের পানিডুবি বাগান বাড়ি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ‘ পানিতে তলিয়ে পড়েছিলো ধান ক্ষেত। বোদা বাজারের একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ি ও কৃষক আব্দুল মতিন বলেন ‘ ক্ষতির কি আর বাকি আছে’। যে বৃষ্টি হলো। তবে ধান কি হবে জানিনা’। ৫০ ও ৬০ বছরের অনেকে বলেন ‘ এমন বৃষ্টি তারা আগে দেখেননি।’

দেবীগঞ্জ উপজেলার পামুলী ইউনিয়নের লক্ষীরহাট গ্রামের বাসিন্দা খলিলুর রহমানজানান বুধবার পর্যন্ত তার জমিতে পানি ছিলো। পৌনে তিনবিঘা জমিতে আমন রোপা লাগিয়েছেন। তার বক্তব্য অর্ধেক জমির ধান পাওয়া যাবেনা’। খলিলুর আরো বলেন ‘ এখন পর্যন্ত কৃষি অফিসের কেউ আসেন নি তার কাছে’। পামুলী ইউনিয়নের ভূল্লিপাড়ার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন ‘পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের জন্য ঘর-বাড়ি সহ ধান ক্ষেতের রোপা পঁচে গেছে’।

 জেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে ‘সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে দেবীগঞ্জ উপজেলায়। টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ২০০০ হাজার হেক্টর জমির আমন রোপা পানিতে তলিয়ে যায়।বুধবার পানি নেমে যাওয়ায় বর্তমান ৫০০ হেক্টর জমিতে পানি আছে’ 

বলে জানান দেবীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. শামীম ইকবাল। তিনি জানান  গ্রীস্মকালিন ও আগাম জাতের সবজির বেশী ক্ষতি হয়েছে’। তাই নতুন করে আবার সবজি লাগাতে হবে’। তিনি জানালেন ৩৮ হেক্টর  শাকসবজির ক্ষতি সাধন হয়। সাথে বাদাম নষ্ট হয়েছে ২৬ হেক্টর জমি।সবজির মধ্যে রয়েছে চিচিঙ্গা, ফুলকপি মূলা,পটল। মোট শাকসবজি আবাদ হয়েছে ‘১২১৬ হেক্টর জমি। কৃষিবিদ শামীম ইকবাল জানান আমরা রির্পোট তৈরি করছি’।

এ ব্যাপারে জেলা কৃষি অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ পরিচালক মো. আব্দুল মতিন বলেন‘ উচু জমি ফসল নষ্ট হয়নি। নীচু এলাকার আমন রোপা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে’। পাচঁ উপজেলাতেই নিরুপণের কাজ চলছে’ তবে বেশি ক্ষতি হয়ে দেবীগঞ্জে। অশাকরি এক সপ্তাহের মধ্যে সব রিপোর্ট পেলে মোট ক্ষয়ক্ষতির হিসাব পাওয়া যাবে’। 

তিনি বলেন ‘ প্রাকৃতিক দূর্যোগ হলে সরকার প্রনোদণা দিয়ে থাকেন এবং এটা চলমান প্রক্রিয়া’। পানি জমে বা জলব্ধতার কারন সম্পর্কে তিনি জানান ‘ গ্রামীণ ব্রীজ-কালভার্ট গুলি ছোটো হওয়ায় পানি দ্রুত সরতে পারে না’। তাই এমনটা হয়েছে’।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ