পঞ্চগড়ে চা চাষীদের সুদিন বেড়েছে কাঁচা চা পাতার দাম

মোঃ কামরুল ইসলাম কামু পঞ্চগড়ঃ 
অনেক চড়াই উৎড়াইয়ের পর   পঞ্চগড়ে ক্ষুদ্র চা চাষীদের সুদিন ফিরে এসেছে। মৌসূমের শুরুতে কাঁচা চা পাতার মূল্য নিয়ে হা-হুতাশ করেছিল তারা। কাঁচা চা পাতার মূল্য বৃদ্ধির দাবিতে সংবাদ সম্মেলনসহ আন্দোলনে নেমেছিল চা চাষীরা। 

চাষীদের আন্দোলনের কারণে কাঁচা চা পাতার মূল্য নির্ধারণ কমিটি জরুরী সভায় নতুন করে দামও নির্ধারণ করে দেয়। এর দুই মাসের মাথায় কারখানাগুলো নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে দ্বিগুন বা তারও বেশি দামে পাতা কেনা শুরু করে। 

চা চাষীরা বলছে, কারখানাগুলোর সিন্ডিকেট ভেঙ্গে যাওয়ায় তারা প্রতিযোগিতামূলকভাবে চা পাতা কেনায় দাম বেড়ে গেছে। এতে করে চা চাষীরা লাভবান হওয়ার পাশাপাশি আবারও নতুন করে চা চারা লাগানোর কাজও শুরু হয়েছে।চা বোর্ড ও চা চাষী সূত্রে জানা গেছে, চলতি চা পাতা সংগ্রহ মৌসূমের শুরুতে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি জেলা কাঁচা চা পাতার মূল্য নির্ধারণ কমিটির সভায় প্রতি কেজি কাঁচা চা পাতার মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১৪ টাকা। 

শুরুতে কারখানাগুলো এই দামেই চা পাতা কিনলেও গত ২৫ জুন থেকে তারা ১২ টাকা দরে পাতা কেনা শুরু করে। শুধু ১২ টাকা কেজিতে নয়; কারখানায় আনা পাতার ৩০-৪০ শতাংশ পাতার ওজন বাদ দিয়ে তারা পাতা কিনতে থাকে। এতে করে প্রতি কেজি কাঁচা চা পাতার দাম পড়ে ৮ টাকা বা তারও কম। 

এ নিয়ে আন্দোলনে নামে ক্ষুদ্র চা চাষীরা। তারা কাঁচা চা পাতার দাম বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনে নামে। চা কারখানা মালিকরা সিন্ডিকেট করে কাঁচা চা পাতার দাম কমিয়ে দিয়েছে এমন অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ স্মল টি গার্ডেন ওনার্স এসোসিয়েশন। এরই প্রেক্ষিত গত ২৯ জুন জেলা কাঁচা চা পাতার মূল্য নির্ধারণ কমিটি জরুরী সভায় বসে। সভায় চলতি ২০২০-২১ নিলাম বর্ষের পাঁচটি নিলামের গড়মূল্য অনুযায়ী কমিটি প্রতিকেজি কাঁচা চা পাতার মূল্য নির্ধারণ করে ১৩ টাকা পঞ্চাশ পয়সা। 

কিছুদিন এই দামেই কারখানাগুলো পাতা কিনলেও গত মাসের শেষের দিক থেকে কারখানাগুলো কাঁচা চা পাতার দাম বাড়াতে থাকে। চলতি মাসের শুরু থেকে কারখানাগুলো প্রতিকেজি কাঁচা চা পাতা ৩০-৩১ টাকা দরে কিনছে। 

একটি সূত্র জানায়, পঞ্চগড় জেলার বিপরীতে ভারতের জলাপাইগুড়ি-শিলিগুড়ির চেয়ে পঞ্চগড়ের কাঁচা চা পাতার দাম সব সময় কম থাকে। তবে করোনা ভাইরাসের কারণে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে টানা লকডাউনের কারণে চা কারখানাগুলো বন্ধ ছিল দীর্ঘদিন। এতে করে বাগানের চা গাছের পাতা তুলতে না পারায় গাছ অনেক বড় হয়ে গেছে। 

লকডাউন শিথিল হওয়ার পর চা বাগানের মালিকরা গাছের অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলছে। এ কারণে গাছে পাতা কম হওয়ায় সেখানে কাঁচা চা পাতার দাম অনেক বেড়ে গেছে। বর্তমানে সেখানে প্রতিকেজি কাঁচা চা পাতা বিক্রয় হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকা দরে। 

পঞ্চগড় সদর উপজেলার সদর ইউনিয়নের গোফাপাড়া গ্রামের চা চাষী মজিবর রহমান জানান, তিনি চার বিঘা জমিতে চা চাষ করেছেন। চলতি মৌসূমে তিন বার পাতা তুলে তিনি ১২ টাকা দরে কারখানায় পাতা দিয়েছেন। সর্বশেষ গত কয়েকদিন আগে কারখানায় পাতা দিয়েছেন প্রতিকেজি ৩১ টাকা দরে। 
তিনি আরও বলেন, চা কারখানাগুলো যতি এভাবে চা পাতা কিনে তাহলে চা চাষীরা অধিক লাভবান হবে এবং আরও নতুন নতুন জমিতে চা চাষ করবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি চা কারখানার ম্যানেজার জানান, গাছে পাতার পরিমান কমে আসায় পাতার পরিমান কিছুটা কমে গেছে। নিলাম বাজারে কিছুটা দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কারখানাগুলোও বেধে দেয়া দামের চেয়ে বেশি দামে পাতা কিনছে। আমি প্রতিকেজি ২০ টাকা দরে পাতা কিনলে অন্য কারখানা কিনছে ২১ টাকায়। এভাবেই পাতার দাম বাড়ছে। বাধ্য হয়ে আমরাও বেশি দামে পাতা কিনছি। কারখানা তো বন্ধ রাখা যাবে না। 

তিনি বলেন, আগামি সপ্তাহে নিলামের তারিখ রয়েছে। গত নিলামের দর বা তার চেয়ে কিছুটা বেশি দাম পাওয়া গেলে সর্বোচ্চ ২৫ টাকা দরে আমরা পাতা কিনলে আমাদের লোকসান হবে না। এর চেয়ে বেশি দামে পাতা কিনলে আমাদের লোকসান গুনতে হবে। বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক অফিসের উর্দ্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও এক্সটেনশন অব স্মল হোল্ডিং ট্রি কাল্টিভেশন ইন নর্দান বাংলাদেশ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক কৃষিবিদ ড. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন জানান, চা রফতানি বৃদ্ধির কারণে নিলাম বাজারে চায়ের দাম বেড়ে গেছে। 

এ কারণে চা কারখানা মালিকরা প্রতিযোগিতামূলকভাবে কাঁচা চা পাতা কেনার কারণে পাতার দাম বেড়ে গেছে। এতে করে চা চাষীরা তাদের চা পাতার মূল্য পেয়ে লাভবান হচ্ছে। নিলাম বাজারে চায়ের দাম স্থিতিশীল অথবা আরও বেড়ে গেলে কারখানা মালিকরা এই দামেই পাতা কিনবে। এতে চা চাষীরা লাভবান হওয়ায় নতুন করে চা আবাদ শুরু হয়েছে। 

আমাদের কাছ থেকেও অনেকে চারা কিনছে। নাম না প্রকাশের শর্তে চা কারখানার মালিক জানান ‘ অনেক কারখানার মালিক কাচাঁ চা পাতার দাম আক্রোশমুলক বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে আমরা লোকসান গুনছি’। চা উৎপাদনে প্রতি কেজি চা উৎপাদন ব্যয় দাঁড়ায় ১৮০ টাকা। তবে নিলামে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা’। কারখানা ও শ্রমিকদের কথা চিন্তা করে কারখানা চালু রাখতে বেশি দামে পাতা কিনতে হচ্ছে’। 

কাঁচা  চা পাতা ২১ টাকা কেজি দরে কিনলে কৃষকও বাঁচবে মালিকও বাঁচবে’। তিনি অভিযোগ ২/১ জন কারখানা মালিক চোরাই পথে উ’ৎপাদিত চা পাতা বিক্রি করায় হঠাৎ কাচাঁ চা পাতার দাম বাড়তি’।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ