পঞ্চগড়ে বাঘ আতঙ্কে কয়েক গ্রামের মানুষ

মোঃ কামরুল ইসলাম কামু পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ 
পঞ্চগড়ের সীমান্তে বাঘ আতঙ্কে র্নিঘুম কয়েক গ্রামের মানুষ। বাঘের অবস্থান নির্ণয় করতে বন বিভাগ মাঠে। বাঘ আছে এটা নিশ্চিত তবে সন্ধান পাওয়া যায়নি শনিবার দুপুর পর্যন্ত। এদিকে বাঘ খুঁজতে পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়নের মুহুরীজোত ও সাহেবীজোত এলাকার চা বাগান ও জঙ্গল কাটতে শুরু করেছেন স্থানীয়রা। দুই বাচ্চাকে নিয়ে একটি চিতাবাঘটি এই এলাকায় আছে, এমন ধারণা থেকেই ওই চা বাগান ও জঙ্গল কাটা শুরু করা হয়েছে।

এদিকে শুক্রবার (২১ আগস্ট) বন বিভাগের কর্মকর্তা, উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তারা আলোচনার মাধ্যমে চা বাগান ও জঙ্গল কাটার নির্দেশ দেয়। সাতমেরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান  জানান, বন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আরিফ হোসেন, তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহাগ চন্দ্র সাহা, সদর ও তেঁতুলিয়া থানার ওসি আবু আককাছ আহমেদ ও মো. জহুরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই চা বাগান ও জঙ্গল কাটার নির্দেশ দিয়েছেন।

 চা বাগান ও জঙ্গলটি খুবই ঘন হওয়ায় কাটতে সময় লাগছে। কবে নাগাদ কাটা শেষ হবে এটা বলা কঠিন। এ কাজে ১৯ জন শ্রমিক সেখানে কাজ করছে।তিনি আরও জানান, তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার ও তার সমন্ধি (স্ত্রীর বড় ভাই) রমজান আলীর সঙ্গে ওই চা বাগান নিয়ে ৭-৮ বছর ধরে আদালতে মামলা চলমান আছে। এ কারণে চা বাগান থেকে পাতা উত্তোলন না করা ও পরিচর্যার অভাবে বাগানটি জঙ্গলে পরিণত হয়েছে।

সাতমেরা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো. মিন্টু কামাল বলেন, “বাঘের আতঙ্কে আমার এলাকার লোকজন রাতজেগে পাহারা দিয়ে আসছেন। বাঘ ধরতে অভিযানের অংশ হিসেবে এই চা বাগান ও জঙ্গল কাটা শুরু হয়েছে। দুই পক্ষের সম্মতিক্রমে প্রশাসনের নির্দেশে বাগান  কাটা হচ্ছে।”

এ বিষয়ে বন বিভাগের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা জোহরা মিলা   বলেন ‘এক সময় সারা দেশই চিতাবাঘের (খবড়ঢ়ধৎফ) অবাধ বিচরণক্ষেত্র ছিল। ১৯৭০ এর দশকেও  চট্টগ্রাম, সিলেট, মৌলভীবাজারের পাহাড়ি বনাঞ্চল ছিল চিতাবাঘের স্বর্গরাজ্য। এমনকি ১৯৫০ সালেও ঢাকার মিরপুর ও উত্তরা অঞ্চল এবং মধুপুর বনাঞ্চলে চিতাবাঘের উপস্থিতি ছিল বলে জানা যায়। 

কিন্তু আবাসস্থল ধ্বংস, শিকারের অভাব আর চোরাশিকারের ফলে এই বন্যপ্রাণীটি আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) চিতাবাঘকে সারা পৃথিবীতে নূন্যতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে। দেশের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ এর তফসিল-১ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। তাই এটি শিকার, হত্যা বা এর কোনো ক্ষতি করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”

পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া চিতা বাঘের উপস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, পঞ্চগড় সীমান্ত সংলগ্ন ভারতের শিলিগুড়ি, বিহাননগর, জলপাইগুড়ির বনাঞ্চলে এখনও চিতাবাঘ টিকে আছে। এই বাঘই কোনো কারণে বাংলাদেশে ঢুকে পড়তে পারে। জোহরা মিলা আরো বলেন ‘   ‘বাঘটিকে জীবিত ধরতে চেষ্টা করছে বন বিভাগ।

এর আগে দিনাজপুর সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুর রহমান বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের বলেন, “এখানে বাঘ একটি গরুকে হত্যা করেছে।স্থানিয় বন কর্মকর্তাকে বাঘ ধরার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

এছাড়া ঢাকা থেকে চার সদস্যের একটি অভিজ্ঞ টিম পাঠানো হয়েছে। তবে বাঘগুলোর  অবস্থান এখনও জানা সম্ভব হয়নি। তবে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি ‘তিনি আরো বলেন ‘বাঘগুলোর অবস্থান নিশ্চিত হয়ে বাঘগুলোকে জীবিত অবস্থায় ধরতে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ