তিস্তা নদী হামার সব ধুইয়া নিয়া গেল

হাসানুজ্জামান হাসান, লালমনিরহাটঃ  
আইতোত (রাতে) খেয়া ঘুমাইছি সকালোত উঠি দেখি সবকিছু নদীত ধুইয়া নিয়া (ভেসে) গেল। এলা হামার কষ্ট করি দিন যায়ছে। কেই কিছু দিবার আইল না। সগায় (সবাই) হামাগুলাক দেখির আইসে। 

কথা গুলো বলছিলেন লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার চর সিন্দুর্না গ্রামের সায়েদ আলী।  তিস্তার ভাঙনে গৃহহারা চর সিন্দুর্না গ্রামের সায়েদ আলীসহ তিস্তা পাড়ের পাঁচ শতাধিক পরিবার। গত তিন দিনে তিস্তা প্রবল স্রোতে ভেসে গেছে ঘরবাড়িসহ আবাদি জমির ফসল। পরিবার গুলো ঘর বাড়ি হারিয়ে বাঁধের রাস্তায় আশ্রায় নিয়েছে। 

পানিবন্দি পরিবার গুলো চরম দুভোর্গে পড়েছে। এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে চরম খাদ্য সংকট ও বিশুদ্ধ পানির অভাব।  তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি একদিন পরেই তিস্তার পানি কমতে শরু করেছে। 

পানিবন্দি পরিবার গুলো ঘরে ফিরতে শুরু করছেন। জেলার ৫টি উপজেলায় তীব্র ভাঙনে ঘরবাড়িসহ ফসলি খেত ইতিমধ্যেই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে প্রায় পাঁচশতাধিক পরিবার খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন।  

মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) সকাল ৯ থেকে লালমনিরহাটের দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি কমতে শুরু করে বিপদসীমার ২০সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার।যাহা স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার।  

গত দুই দিন ধরে লালমনিরহাটে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে  জেলার ৫ উপজেলায় তিস্তাও ধরলার তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছিল।  গৃহহারা জহিদুল ইসলাম বলেন, কোন দিন ভাবিনাই হামার এদিক তিস্তার পানি আসি সব ভাসি নিয়া যাইবে। 

ঘরে থাকা চাউল, ধান, বাদাম হাঁস মুরগী নদীতে ভাসি গেইছে।  লালমনিরহাটে হাতীবান্ধা উপজেলার সিংঙ্গীমার ইউনিয়নের তিস্তানদীর চর ধুবনীর এক বাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে প্রায় ৫ হাজার পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। পাটিকাপাড়া ও সিন্দুর্না ইউনিয়নের প্রায় তিন শতাধিক পারিবারে ঘরবাড়ি নদীর গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। 

এসব পরিবার স্থানীয় বাঁধে রাস্তায় অবস্থা নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।  ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বহী প্রকৌশল রবিউল ইসলাম জানিয়েছেন,সোমবার সন্ধ্যা থেকে তিস্তার পানি কমতে শুরু করে মঙ্গলবার সকালে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।  

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবু জাফর জানান, নতুন করে পানিবন্দি পরিবার গুলোর জন্য ১২০ মেট্রিকটন সহ মোট ২৪৪ মেট্রিক টন খাদ্যসামগ্রী ও নগদ ১৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জেলার ৫ উপজেলায় ত্রাণ বিরতণ অব্যাহত রয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ