ডিমলায় ফুঁসে উঠেছে তিস্তা-বিপদসীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হচ্ছে পানি

জাহাঙ্গীর রেজা, স্টাফ রিপোর্টারঃ 
উজানের পাহাড় ও সমতলে একটানা বৃষ্টি ও গজলডোবা হতে প্রচুর পানি ছেড়ে দেয়ার কারণে ভয়ংকর রূপে ফুঁসে উঠেছে তিস্তা নদী। শুক্রবার (১০-জুলাই) দুপুর ১২ টা হতে হু-হু করে নেমে আসতে শুরু করে উজানের ঢল। 

এতে দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজের নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে নিমিষের মধ্যে বেলা ৩টায় বিপদসীমা (৫২.৬০) অতিক্রম করে নদীর পানি ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে ঢলের পানি দ্রুতগতিতে অব্যাহত ভাবে বেড়েই চলেছে।  

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নীলফামারীর ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, পরিস্থিতি সামাল দিতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে।  এদিকে ওপারে দোহনী হতে বাংলাদেশের জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ভারত কর্তৃপক্ষ তিস্তা নদীতে লাল সংকেত জারী করেছে। 

উত্তরাঞ্চলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, উজানে ভয়াবহতার কারনে ভারত লালসংকেট জারী করায় বাংলাদেশ অংশের তিস্তা ব্যারাজের উজানের ২০ কিলোমিটার ও ভাটির অংশের ৪৫ কিলোমিটার মোট ৬৫ কিলোমিটার তিস্তা এলাকায় তিস্তায় লাল সংকেট দেয়া হয়েছে। 

তিস্তা ব্যারাজের কর্মকর্তারা নজরদারীতে মাঠে রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।  এদিকে উজানের ঢলে তিস্তায় চতুর্থ দফায় ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কায় তিস্তা অববাহিকার বিশেষ করে চরবেষ্টিত গ্রামের মানুষজনকে নিরাপদে সরে যেতে বলা হয়েছে। 

তিস্তাপাড়ের বসবাসকৃত পরিবারগুলো দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার আলোকে তারাও প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র সঙ্গে নিয়ে উঁচু স্থানে সরে যেতে শুরু করেছে বলে জানালেন নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ৬ ইউনিয়ন, পূবছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশাচাঁপানী ও ঝুনাগাছচাঁপানীর ইউপি চেয়ারম্যান গন। 

তারাও জানায় তিস্তায় ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে যাচ্ছে। সেইসাথে লোকজনকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।  ডিমলার কিছামত ছাতনাই, ঝাড়শিঙ্গেশ্বর , চরখড়িবাড়ি,পূর্ব খড়িবাড়ি, পশ্চিমখড়িবাড়ি, তিস্তাবাজার, তেলিরবাজার, বাইশপুকুর, ছাতুনামা, ভেন্ডাবাড়ি এলাকার পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় সেখানকার মানুষজন গরু ছাগল নিয়ে নিরাপড়ে সরে এসেছে।  

টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ময়নুল হক জানান, পরিস্থিতি ভাল না। উজানের ঢল প্রচন্ড ভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এবার ভয়ংকর বন্যা হতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে। তাই চর এলাকার ১৪টি পরিবারের বসতভিটায় থাকা ঘর-বাড়ী নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছি। 

আরো যে সব পরিবার পানি বন্ধি অবস্থায় আছে তাঁদেরকেও নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার কাজ অব্যহত আছে।    খগাখড়িবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম জানান দুপুরের পর হতে প্রচন্ডভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে মানুষজনকে সরিয়ে নিতে কষ্ট পেতে হচ্ছে। 

ডিমলা উপজেলায় তিস্তা এলাকায় সরকারীভাবে ৬টি নৌকা সহ অসংখ্য নৌকা বন্যা কবলিত মানুষজনকে সরিয়ে নিতে সহায়তা করছে।  নীলফামারীর ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যাপূর্বাভাস ও সর্তকী কেন্দ্র সুত্র মতে এর আগে চলতি বছরের বর্ষা মৌসুমে তিস্তা নদীর পানি সর্ব প্রথম গত ২০ জুন বিপদসীমার উপরে উঠে। 

যা পরেরদিন ২১ জুন সকালে নেমে যায়। এর ৬ দিনের মাথায় ২৬ জুন তিস্তা নদীর পানি দ্বিতীয় দফায় পুনরায় বিপদসীমা অতিক্রম করে ২০ সেন্টিমিটার উপরে উঠে ২৮ জুন সকালে নেমে যায়। এরপর তৃতীয় দফায় ৪ জুলাই সকালে তিস্তার পানি ২২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও সন্ধ্যায় তা নেমে গিয়েছিল।  

এবার ১০ জুলাই শুক্রবার দুপুর ১২ টা থেকে উজানের পানি বেড়ে গেলে ডালিয়া পয়েনেট বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপরে চলে আসে। তিনঘন্টা পর উজানের ঢল আরও ১০ সেন্টিমিটার বেড়ে যায়। এতে বিপসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহ হলেও প্রচন্ডভাবে উজানের ঢল ধেয়ে আসায় হু-হু করে পানি বেড়েই চলেছে।  

ডিমলা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জয়শ্রী রানী রায় জানান, আমরা সর্বাতক সর্তক রয়েছি। জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে তিস্তা অববাহিকার চর ও চর এলাকার গ্রামের পরিবারগুলোকে নিরাপতে সরিয়ে আনা হচ্ছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ